প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / কনে ঘরে একা থাকলে বর ও সাক্ষী ঘরের বাহির থেকে ইজাব কবুল করলে কি বিবাহ হবে?

কনে ঘরে একা থাকলে বর ও সাক্ষী ঘরের বাহির থেকে ইজাব কবুল করলে কি বিবাহ হবে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,

আমার প্রথম প্রশ্ন হল, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া  এক ছেলে দুজন সাক্ষীর সামনে একজন প্রাপ্তবয়স্কা বালিকা মেয়েকে প্রস্তাব  করছে বিবাহের জন্য, ছেলে বলেছে, আমি অমুকের ছেলে অমুক এত টাকার  মোহরানা  ধার্য করে তোমাকে বিবাহ করলাম  তুমি রাজি কিনা? মেয়ে বলছে: ‘জি’।

প্রস্তাবের সময় মেয়ে ছিল একটি ঘরের মধ্যে একাকী, আর ছেলে এবং দুইজন সাক্ষী ছিল ঘরের বাহিরে জঙ্গলের মধ্যে, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল একটি বেলকনি এবং ওয়াল, কেউ কাউকে দেখতে পায়নি। কিন্তু কথা স্পষ্টই শুনতে পাচ্ছিল।

এখানে দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য

১ এত্তেহাদ মজলিস পাওয়া যায়নি কারণ উভয়ে ভিন্ন জায়গায় ছিল।

২, এখানে মেয়েকে প্রস্তাব করা হয়েছে আর মেয়ে তার উত্তরে জী বলেছে, মেয়ের কাছে কোন সাক্ষী ছিল না, ছিল ছেলের কাছে। সাক্ষীগণ  মেয়েকে দেখতে পাইনি, এবং সাক্ষীগণ ছেলের পক্ষের, এক্ষেত্রে বিবাহ সহি হবে কিনা?

দ্বিতীয়ত উক্ত  ঘটনার পরে মেয়ের অভিভাবক মেয়েকে  ছেলের কাছে দিতে সম্মতি হয়নি। আর মেয়েও ভুল বুঝতে পেরে যেতে রাজি হয়নি।

মেয়ের বয়স তখন অল্প ছিল, পরবর্তীতে ছেলে অন্যত্র  বিবাহ করেছে অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে। ছেলে মেয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এখন মেয়ের অভিভাবক মেয়েকে অন্যত্র বিবাহ দিতে চায়। তাই এখন জানার বিষয় হল, আগের বিবাহ হয়েছে কিনা? যদি হয়ে থাকে তাহলে কী করনীয়?

@ ছেলের পক্ষ থেকে তালাক নেওয়া সম্ভব না।

@তাদের কোন কাবিন হয়নি যে কাবিনের  নীতিমালা অনুযায়ী মেয়ের পক্ষ থেকে তালাক দিবে।

যদি বিবাহ হয় আর ছেলে যদি তালাক দিতে রাজি না হয়, তাহলে অভিভাবকের মাধ্যমে বিবাহ ভাঙ্গা যাবে কিনা? বিস্তারিত জানার জন্য আবেদন রইল।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে উক্ত বিয়েটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। তাই উক্ত মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে হলে স্বামী থেকে লিখিত বা মৌখিক তালাক নিতে হবে। এছাড়া কোন গত্যান্তর নেই।

তবে যদি স্বামী কোনভাবেই তালাক দিতে রাজি না হয়, অপরদিকে মেয়েকে উক্ত  ছেলের কাছে পাঠানাও সম্ভব না হয়, তাহলে মালেকী মাযহাব অনুপাতে ‘জামাআতে মুসলিমীন’ তথা শরয়ী পঞ্চায়েত এর মাশওয়ারার সিদ্ধান্তক্রমে বিয়েটি ফসখ করার সুযোগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

জামাআতে মুসলিমীন বলতে উদ্দেশ্য হলো: ন্যায়পরায়ন,মুত্তাকী,উক্ত মাসআলা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল আলেম, যাদের সংখ্যা কমপক্ষে তিনজন হওয়া আবশ্যক,তাদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তারপর উক্ত পঞ্চায়েতের প্রতিটি সদস্য সর্বসম্মতভাবে বিয়েটি ফসখের সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

তারপর উক্ত মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া যাবে। বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন: আলহিলাতুন নাযিজাহ লিলহালীলাতিল আযিজাহ’।

رجل قال لقوم “اشهدوا قد تزوجت هذه المرأة التى فى هذا البيت” فقالت المرأة “قبلت” فسمع الشهود مقالتهما ولم يروا شخصها فإن كانت فى البيت وحدها جاز النكاح وإن كانت معها فى البيت امرأة أخرى لا يجوز (الفتاوى التاتارخانية-4/39، رقم-5461)

رَجُلٌ قَالَ لِقَوْمٍ: اشْهَدُوا أَنِّي تَزَوَّجْتُ هَذِهِ الْمَرْأَةَ الَّتِي فِي هَذَا الْبَيْتِ فَقَالَتْ الْمَرْأَةُ: قَبِلْتُ فَسَمِعَ الشُّهُودُ مَقَالَتَهَا وَلَمْ يَرَوْا شَخْصَهَا فَإِنْ كَانَتْ فِي الْبَيْتِ وَحْدَهَا جَازَ النِّكَاحُ، وَإِنْ كَانَتْ فِي الْبَيْتِ مَعَهَا أُخْرَى لَا يَجُوزُ. (الفتاوى الهندية-1/268، المحيط البرهانى-3/29)

قال الله تعالى: وإن خفتم شقاق بينهما فابعثوا حكما من اهله وحكما من اهلها ان يريدا اصلاحا يوفق الله بينهما (سورة النساء-35)

السنة إذا وقع بين الزوجين اختلافا أن يجتمع أهلهما ليصلحوا بينهما فإن لم يصطلحا جاز الطلاق والخلع (رد المحتار،  زكريا-5/87، كرتاشى-3/441، مجمع الأنهر-2/102، تاتارخانية-5/5، رقم-8072)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected] 

0Shares

আরও জানুন

বিয়ের আগে ‘ব্রেক আপ বা তালাক’ বললে কি বিয়ের পর তালাক হয়?

প্রশ্ন   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাতার প্রবাসী একটি মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন হারাম রিলেশন ছিল এখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *