প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম
খুব জরুরী একটি ফতোয়া চাই।
প্রশ্ন: বিয়ের ৫৩ দিন পর সন্তান জন্ম দেই। যার কারণে স্বামী তালাক দিছে। এখন মেয়ে স্বীকার করতেছে যে, তার গর্ভে যে সন্তান এসেছিল তার পিতা অমুক অর্থাৎ ( শফিক) । সে আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেছিল। আমি ভয়ে কাউকে বলিনি।
কিন্তু অমুক অর্থাৎ শফিক অস্বীকার করতেছে। আমি তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করিনি। অর্থাৎ মেয়ের পেট থেকে যে বাচ্চা হয়েছে সেটা আমার নই।
আমার জানার বিষয় হলো, সামাজিক ভাবে আমাদের করনীয় কি?
বি: দ্র: মেয়ের পক্ষে কোন সাক্ষীও নাই এবং বাচ্চাও মারা গেছে।
দয়া করে বিষয়টি শরয়ী সামাধান দিবেন।
অনুরোধ ক্রমে
সমাজের পক্ষে
জসিম উদ্দিন
টেকনাফ কক্সবাজার।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যেহেতু উক্ত ধর্ষণ বা যিনা ব্যভিচারের কোন সাক্ষী নেই। তাই এ বিষয় নিয়ে সমাজের মানুষের কোন শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। মেয়েটির উচিত খাস দিলে তওবা করা।
সমাজের মানুষের উচিত উক্ত মেয়েটাকে কোন যোগ্য পাত্রের কাছে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। সেই সাথে উক্ত গোনাহ বিষয়ে চর্চা করা বন্ধ করে দেয়া।
কারণ, কোন ব্যক্তি গোনাহ করার পর যদি খাস দিলে তওবা করে, তাহলে পিছনের সব গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। উপরোক্ত গোনাহের কারণে তাকে লজ্জা দেয়া জায়েজ নেই। হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন হুশিয়ারী এসেছে।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ عَيَّرَ أَخَاهُ بِذَنْبٍ لَمْ يَمُتْ حَتَّى يَعْمَلَهُ
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইকে কোন গুনাহর জন্য লজ্জা দিলে (যে গোনাহ থেকে উক্ত ব্যক্তি তওবা করে নিয়েছে, তাহলে) সে উক্ত গুনাহে না জড়িয়ে পড়া পর্যন্ত মারা যাবে না। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫০৫]
إسناده ضعيف جدا (ميزان الاعتدال للذهبى-2/667، الفوائد المجموعة لشوكانى-229)
اسناده ضعيف (ألآداب الشرعية لابن مفلح-1/340، النصيحة والتعبير لابن رجب-2/413، كشف المناهج والتناقيح لصدر الدين المناوى-4/251، بلوغ المرام لابن حجر العسقلانى-446)
তাছাড়া কোন ব্যক্তি গোনাহ করে খাস দিলে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তার গোনাহকে নেকীতে পাল্টে দেন। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا [٢٥:٦٨]
يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا [٢٥:٦٩]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]
এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।
কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরক্বান-৬৮-৭০]
সুতরাং তওবা করলে যেহেতু আল্লাহ তাআলা গোনাহকে সওয়াবের দ্বারা পাল্টেই দিবেন, তাই এমন ব্যক্তিকে খারাপ বলা ও তাচ্ছিল্য করা কোনভাবেই জায়েজ নেই।
তাই আপনাদের উচিত উক্ত মেয়েকে তওবা করতে বলে। তওবার সুযোগ দেয়া এবং ভালো পাত্রের কাছে বিয়ের ব্যবস্থা করা। সেইসাথে উক্ত গোনাহের আলোচনা কাউকে না জানানো।
ولا بد أيضا أن لا يكذبه الآخر حتى لو أقر بالزنا فكذبته، أو هى فكذبها فلا حد عليهما عند الإمام، كذا فى النهر الفائق (الفتاوى الهندية-2/143)
وكذبته فى الزنا أصلا، وقالت: لا أعرفه فلا حد عليه فى قول أبى حنيفة، وفى جامع الجوامع: وكذا لو سكتت (الفتاوى التاتارخانية-5/106)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– [email protected]