প্রশ্ন
শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব প্রথমে সালাম নিবেন । তাবলীগ জামাতে প্রচলিত কিছু কথার দলীল জানালে খুব উপকার হবে যদিও তা কোনো বুজুর্গের উক্তিও হয়।
১।যে এলাকা দিয়ে পায়ে হেঁটে দ্বীনের জামাত যায় সে এলাকা থেকে আল্লাহ পাক আযাব গযব তুলে নেন ।
২।ইলমের একটি অধ্যায় শিখা চাই তার উপর আমল করা হোক বা না হোক হাজার বছর ইবাদত থেকেও উত্তম ।
৩।যে ব্যক্তি যিকির করতে করতে নিজ জিহবা তরতাজা রাখবে সে হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে ।
৪।যে ব্যক্তি নামাযের জন্য রওনা হল সে যেন হজের এহরাম বেধে কাবার দিকে রওনা হল ।
৫।মুমিন যতবারিই মসজিদে যায় ততবারেই আল্লাহ পাক তার জন্য মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন ।
৬।যে যত বেশি মসজিদে যায় তাকে তোমরা ঈমানদার বলে সাক্ষী দাও ।
জবাব:
بسم الله الرحمن الرحيم
১ নং এর জবাব
সম্ভবত এ বক্তব্যটি আরবীতে প্রচলিত এ বক্তব্য থেকে নেয়া হয়েছে। যথা-
إنالعالموالمتعلمإذامراعلىقريةفإناللهتعالىيرفعالعذابعنمقبرةتلكالقريةأربعينيوما
যখন কোন আলেম বা তালেবে ইলম কোন জনপদ অতিক্রম করে, তখন আল্লাহ তাআলা (তাদের বরকতে) চল্লিশ দিনের জন্য সে জনপদের কবরের আজাব বন্ধ করে দেন।
হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এবং আল্লামা কাউকজী রহঃ বলেন لاأصلله তথা এর কোন ভিত্তি নেই।
আল আসরারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওজুয়াহ, হাদীস নং-৮০
আল লু’লুউল মারসূস, হাদীস নং ৯৩
কাশফুল খাফা, হাদীস নং-৬৭২
আল মাসনূ ফি মারিফাতি হাদীসিল মাওজু, হাদীস নং-৫৭
২ নং এর উত্তর
মূলত এ সম্পর্কীয় হাদীসটি হল-
عنأبيذرقالقالليرسولاللهصلىاللهعليهوسلم ( ياأباذرلأنتغدوفتعلمآيةمنكتاباللهخيرلكمنأنتصليمائةركعة . ولأنتغدوفتعلمبابامنالعلمعملبهأولميعملخيرمنأنتصليألفركعة )
হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, হে আবূ যর! তুমি যদি সকাল বেলা গিয়ে কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা কর তাহলে তা তোমার জন্য একশত রাকাআত নফল পড়া থেকেও উত্তম। আর যদি সকাল বেলা গিয়ে ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা কর, চাই তার উপর আমল করা হোক বা হোক, তাহলে তা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নফল নামায থেকেও উত্তম। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৯৩৭৩}
সুতরাং বুঝা গেল যে, এক হাজার বছর ইবাদতের সওয়াব নয়, বরং এক হাজার রাকাত নফল নামাযের কথা হাদীসে এসেছে।
৩ নং এর উত্তর
জিকিরকারী ব্যক্তি জান্নাতে উচু মাকাম পাবে মর্মে অনেক হাদীস বর্ণিত। কিন্তু জিকির করে জিহবা তরোতাজা রাখলে হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে মর্মে অনেক খুঁজেও নিজের অজ্ঞতার কারণে কোন হাদীস পাইনি।
৪ নং এর উত্তর
عنأبىأمامةأنرسولالله -صلىاللهعليهوسلم- قال«منخرجمنبيتهمتطهراإلىصلاةمكتوبةفأجرهكأجرالحاجالمحرم
হযরত উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে এহরাম বেঁধে হজ্জে গমণকারী ব্যক্তির ন্যয় সওয়াব লাভ করে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৫৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৭৩৪, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৩২৬২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৮৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৩০৪}
৫ নং এর উত্তর
عنأبيهريرة : عنالنبيصلىاللهعليهوسلمقال ( منغداإلىالمسجدوراحأعداللهلهنزلةمنالجنةكلماغداأوراح )
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা্ ঃইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মসজিদে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যতবার সে মসজিদে যায় ততবারই আল্লাহ তাআলা তার জন্য মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৩১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৫৬, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৪৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২০৩৭}
৬ নং এর উত্তর
عنأبيسعيدقال : قالرسولاللهصلىاللهعليهوسلمإذارأيتمالرجليعتادالمسجدفاشهدوالهبالإيمانقالاللهتعالى { إنمايعمرمساجداللهمنآمنباللهواليومالآخر }
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমরা কাউকে অধিক পরিমাণে মসজিদে আসতে অভ্যস্ত দেখ তাহলে তার ঈমানদার হওয়ার সাক্ষ্যি দাও। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “মসজিদসমূহকে ঐ সমস্ত লোকেরাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ তাআলা ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩০৯৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১২২৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭২১, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং- ১৫০২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৬৫১, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৯২৩}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।