প্রশ্ন
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আবদুর রহমান ফেনী থেকে
প্রশ্ন = যাকাতের টাকা কোন রাজনৈতিক সংগঠনকে দিলে, সেই সংগঠন তাদের কর্মিদেরকে যাকাতের টাকা দান করে এবং সেই টাকাগুলা সংগঠনের নামে চালিয়ে দে তাহলে কতটুকু শরিয়তসম্মত হবে?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। প্রতিটি ইবাদত পালন ও আদায়ের নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। সেই নির্দিষ্ট বিধানমতে তা আদায় না করলে ইবাদতটি আদায় হয় না।
যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায।এটা ফরজ ইবাদত। তা আদায়ের নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতি রয়েছে। ইচ্ছেমত যে কোন সময় নামায আদায় করলেই ফরজ নামায আদায় হবে না।
তেমনি যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। এটা আদায়ের এবং প্রদানের নির্ধারিত পদ্ধতি রয়েছে। ইচ্ছেমত তা আাদায় ও প্রদান করলে যাকাতের ফরজ ইবাদত আদায় হবে না ।
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, ফী সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}
মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-
১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।
২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।
৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।
এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫}
৫- দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।
৬- ঋণগ্রস্তের জন্য।
৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-
জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।
উপরোক্ত বিবরণ দ্বারা একথা পরিস্কার যে, বর্তমান বাংলাদেশে কেবলমাত্র গরীব ও মিসকিনকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দিলেই কেবল যাকাত আদায় হবে।
সুতরাং কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যদি এমন হয় যে, তারা যাকাতের টাকা সংগ্রহ করে, তা সঠিক ও যথার্থভাবে গরীব ও মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেন। সেই সাথে যাকাতের টাকা অন্য কোন কাজে যেমন, গাড়ী ভাড়া, বেতন ভাতা, বাসা ভাড়া ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে না। বরং পুরোটাই গরীব ও মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেয়, তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে যাকাত প্রদান করা যাবে। যেন তারা সঠিক খাতে তা বন্টন করতে পারে।
কিন্তু যদি তারা যাকাত সংক্রান্ত সঠিক ইলম না রাখে, বরং যাকাতের টাকা যথেচ্ছা খরচ করে। যেমন রাস্তার খরচ, বাসা ভাড়া, বেতন ভাতা, কিংবা দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায়, তাহলে এমন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে যাকাত প্রদান করলে যে পরিমাণ যাকাতের টাকা গরীব মিসকিনকে সরাসরি প্রদান করা ছাড়া অন্য কাজে ব্যয় করবে, সেই পরিমাণ টাকার যাকাত আদায় হবে না।
সুতরাং যে সংগঠনের লোকেরা যাকাতের টাকা তাদের কর্মীদের মাঝে এবং সংগঠনের নামে যাকাতের টাকা ব্যয় করে থাকে, এমন সংগঠনকে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
নিকটস্ত গরীব আত্মীয়, কিংবা যেসব কওমী মাদরাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং আছে, তথা গরীব, এতিম, মিসকিন ছাত্ররা পড়াশোনা করে থাকে, এসব প্রতিষ্ঠানে উক্ত গরীব ছাত্রদের ভরণপোষণে যাকাত প্রদান করাই অধিক নিরাপদ।
ফরজ ইবাদত নিয়ে হেলাফেলা করা কিছুতেই উচিত হবে না। তাই জেনেশুনে যাকাত প্রদান করতে হবে।
ويشترط أن يكون الصرف تمليكا الخ (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-3/291، كرتاشى-2/344)
الزكاة فيها يجب تمليك المال، لأن الإيتاء فى قوله تعالى طوآتو الزكاة (سورة البقرة: 43) يقتضى التمليك ولا تتأدى بالإباحة (تبيين الحقائق، زكريا-2/18)
ولا تجوز الزكاة إلا إذا قبضه الفقير….. لأن التمليك لا يتم بدون القبض (الفتاوى الولوالجية، كتاب الزكاة، دار الكتب العلمية بيروت-1/179)
اذا دفع الزكاة إلى الفقير لا يتم الدفع مالم يقبضها، أو يقبضها للفقير من له ولاية عليه نحو الأب والوصى يقبضان للصبى والمجنون……. ولو قبض الصغير وهو مراهق جاز وكذا لو كان يعقل القبض بأن كان لا يرمى ولا يخدع عنه (الفتاوى الهندية-1/190، جديد-1/252)
فان لم يكن عاقلا فقبض عنه أبوه أو وصيه أو من يعوله قريبا أو أجنبيا أو ملتقطه صح (رد المحتار، زكريا-1/171، كرتاشى-2/257، تاتارخانية-3/212، رقم-4153، قديم-2/274)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com