প্রশ্ন
এক বক্তা তার বক্তৃতায় বলছে যে, “আজান হচ্ছে, খাদ্য রেডি হচ্ছে, খান। আজান চলছে, আজান হয়ে গেছে, খাদ্য সামনে আছে, খান। তৃপ্তিসহকারে খান। কোন সমস্যা নেই”।
এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
উক্ত বক্তাকে মুসলমানদের ফরজ ইবাদত নষ্ট করার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রকাশ্য শাস্তি দেয়া উচিত। উক্ত বক্তা আলেম নয়। আলেম নামের চূড়ান্ত মূর্খ।
আমাদের দেশে আজান দেয়ার মানে হলো, ফজরের সময় হয়ে গেছে। সুবহে সাদিক শুরু হয়ে গেছে। এর মানে সাহরীর সময় শেষ। সুতরাং এ সময় খানা খেলে উক্ত ব্যক্তির রোযা অবশ্যই ভেঙ্গে যাবে। রোযা হবে না।
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ [٢:١٨٧]
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। [সূরা বাকারা-১৮৭]
উক্ত কথিত বক্তার এ ভ্রান্ত ফাতওয়া দেয়ার কারণ হলো একটি হাদীসের মর্মার্থ বুঝতে না পারা। সেটি হলো, সুনানে আবূ দাউদের এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمُ النِّدَاءَ وَالْإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ، فَلَا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ আহবান শুনতে পায় এমতাবস্থায় যে, তার হাতে খাবারের পাত্র। তাহলে সে যেন তা রেখে না দেয়, যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূর্ণ হয়। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৩৫০]
এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
মূলত এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: তাহাজ্জুদের আজান। তথা নববী যুগে দু’টি আজান দেয়া হতো। একটি হলো তাহাজ্জুদের আজান। আরেকটি হলো, ফজরের আজান।
তাহাজ্জুদের আজান দিতেন হযরত বেলাল রাঃ। আর ফজরের আজান দিতেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাঃ।
তাহাজ্জুদের আজানের সময় যেহেতু ফজরের সময় এখনো হয় না। সুবহে সাদিক উদিত হয় না। তাই সে সময় সাহরী খেতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখনি আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রাঃ আজান দেন, সুবহে সাদিক হয়ে যায়। এর মানে ফজরের সময় হয়ে যায়। তখন পানাহার করা নিষিদ্ধ।
দেখুন বুখারীর হাদীসে আসছে:
عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় বেলাল রাত থাকতেই আজান দেয়। তাই তোমরা পানাহার করতে থাকো যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম আজান দেয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬২৩]
সুতরাং আবূ দাউদের হাদীস দিয়ে ফজরের আজান হয়ে গেলেও খানা খাওয়া যাবে মর্মে ফাতওয়া দেয়া মূর্খতার সাথে সাথে উম্মতের রোযা বিনষ্টের কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে।
তাছাড়া হযরত আবূ হাতেম রাজী রহঃ আবূ দাউদের উক্ত হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:
ليس بصحيح তথা বর্ণনাটি সহীহ নয়। [ইলালু ইবনে আবী হাতেম-৩৪০]
যে সব লোকগুলো সর্বদাই জঈফ হাদীসকে জাল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করে ‘জাল জঈফ’ বলে মন্তব্য করেন। তাদের মুখে আবূ হাতেম রাজীর সহীহ নয় মন্তব্য করা হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করাটা দ্বিচারীতা বলেই প্রতীয়মান হয়।
সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত কথিত বক্তার বক্তব্য সম্পূর্ণই অজ্ঞতাপ্রসূত। সুবহে সাদিকের সময় দেয়া আজানের সময় খানা খেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এতে কোন সন্দেহের অবকাশই নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com