প্রচ্ছদ / নামায/সালাত/ইমামত / নামাযে জেহরী তথা জোরে ও সিররী তথা আস্তে কিরাতের সীমা কতটুকু?

নামাযে জেহরী তথা জোরে ও সিররী তথা আস্তে কিরাতের সীমা কতটুকু?

প্রশ্ন

প্রশ্নকারীর নাম: الامین নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক৷

ঠিকানা: চন্নাপাড়া

জেলা/শহর: গাজীপুর

দেশ: বাংলাদেশ

প্রশ্নের বিষয়: নামাজ

বিস্তারিত:
—————-
আমাদের মাদ্রাসার একজন  মুফতি সাহেব বলেছেন ادنی جھر হলো ان یسمع نفسہ এবং ادنی مخافتہ হলো تصحیح الحروف এটার উপর নাকি ফতুয়া৷

এখন মুহতারাম মুফতি সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো ادنی جھر এবং ادنی مخافتہ পরিমাণ এর ক্ষেত্রে আসলেই কি এটার উপরেই ফতুয়া নাকি অন্যটার উপর?
যদি এটার উপরেই ফতুয়া হয়ে থাকে তাহলে অনেক সময় দেখা যায় অনেক ইমাম সাহেব سری نماز গুলোতে এমন ভাবে ক্বিরাত পরেন যে,নিজের কানে নিজে শুনতে পায় তখন তো এটা جھر হয়ে গেল৷ তাহলে এক্ষেত্রে তার নামাজের হুকুম কি হবে?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আস্তে কিরাত ও জোরে কিরাতের সীমা বিষয়ে মতভেদ আছে।

হযরত ইমাম আবূ যাফর হিন্দুয়ানী রহঃ এর মতে আস্তে কিরাতের সীমা হলো, নিজে শ্রবণ করা, এবং জোরে কিরাতের সীমা হলো, নিকটস্ত অন্য মানুষ শুনতে পায়, এমন জোরে তিলাওয়াত করা।

ইমাম আবুল হাসান কারখী রহঃ এর মতে জোরে কিরাতের সর্বনিম্ন সীমা হলো, নিজ কানে শুনতে পাওয়া, অন্য কেউ শুনতে না পাওয়া, আর আস্তে কিরাতের সর্বনিম্ন সীমা হলো,শব্দ সহীহভাবে উচ্চারিত হয়ে যাওয়া, নিজ কানে শুনতে না পাওয়া।

ثم المخافتة أن يسمع نفسه والجهر أن يسمع غيره، وهذا عند الفقيه أبى جعفر الهندوانى، لأن مجرد حركة اللسان لا يسمى قراءة بدون الصوت، وقال الكرخى: أدنى الجهر ان يسمع نفسه، وأدنى المخافتة تصحيح الحروف، لأن القراءة فعل اللسان دون الصماخ الخ (الهداية-1/117)

 

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ ইমাম ফক্বীহ আবূ যাফর হিন্দুয়ানী রহঃ এর কওলকে মুফতাবিহী বলে সাব্যস্ত করেছেন।

وذكر أن كلا من قولى الهندوانى و الكرخى مصححان، وإن ما قاله الهندوانى أصح وأرجح لاعتماد أكثر علمائنا عليه الخ (رد المحتار، زكريا-2/253، كرتاشى-1/534)

 

তবে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ হযরত ইমাম আবুল হাসান কারখী রহঃ এর কওলকে বেশি সহীহ এবং মুফতাবিহী বলে সাব্যস্ত করেছেন।

قالوا وقول الكرخى: أقيس وأصح الخ (بناية شرح هداية، كتاب الصلاة، فصل فى القراءة، اشرفية-2/301، 1/698)

 

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি বুঝে এসে গেছে যে, উক্ত মাসআলায় কোন একটি মতকে সুনির্দিষ্টভাবে মুফতাবিহী কওল বলে, অন্যটিকে একদম বাতিল বলার সুযোগ নেই।

তাই কেউ যদি আস্তে কিরাত সম্পন্ন নামাযে শব্দ সহীহ করে পড়ে, তাহলে তার কিরাত শুদ্ধ বলে যেমন সাব্যস্ত হবে। তেমনি জোরে কিরাতে নিজ কানে শুনলেই জোরে কিরাত হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। সেই সাথে আস্তে কিরাতের সময় নিজ কানে শ্রবণ করা পরিমাণ জোরে পড়লেও তার উপর সাহু সেজদা আবশ্যক হবে না।

তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম যেহেতু ইমাম হিন্দুয়ানী রহঃ এর কওলের উপর ফাতওয়া প্রদান করেছেন। তাই এটিকে গ্রহণ করাই অধিক যুক্তিসঙ্গত।

তাই আস্তে কিরাত নিজ কানে শ্রবণ এবং জোরে কিরাতের সীমা অন্য শ্রবণ করাটাই অধিক প্রাধান্য তথা মুফতাবিহী কওল। সুতরাং বুঝা গেল যে, আপনার মাদরাসার মুফতী সাহেবের বক্তব্যটি সঠিক নয়।

তাই আস্তে কিরাত সম্পন্ন নামাযে নিজ কানে শুনতে পাওয়া পরিমাণ জোরে পড়লে তা জোরে কিরাত বলে সাব্যস্ত হবে না।

وأخرج ابن أبى شيبة عن عبيدة وعن ليث عن ابن سابط قالا: أدنى ما يقرأ القرآن أن تسمع أذنيك (المصنف لاب ابى شيبة-3/247، رقم-3658)

وأدنى المخافتة إستماع نفسه ومن يقربه (رد المحتار، زكريا-2/252، كرتاشى-1/535)

إعلم أنهم اختلفوا فى حد وجود القراءة على ثلاثة أقوال، فشرط الهندوانى والفضلى لوجودها خروج صوت يصل إلى إذنه…. ولم يشترط الكرخى وأبو بكر البلخى السماع واكتفيا بتصحيح الحروف، واختار شيخ الإسلام وقاضى خن وصاحب المحيط والحلوانى قول الهندوانى كذا فى معراج الدراسة (رد المحتار،  زكريا-2/252، كرتاشى1/535، مجمع الأنهر، بيروت-1/157)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *