প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
গত কয়েকদিন হল আমি ইউরোপের একটি দেশে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছি। মুলত কাজ করার জন্য আসা। পাশাপাশি পড়াশোনা চালাতে হবে। না হলে ১বছর পর অবৈধ হয়ে দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি হালাল উপায়ে উপার্জন করা ৯৯% অসম্ভব। আর বাকি ১% হালাল কাজ পাওয়া অনেক কঠিন। হারাম উপার্জন হলঃ কোন রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, কনফেশোনারি বা প্রসাধনী যাই বলেন, সব খানে মদ বিক্রি করতে হবে।
রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্যখানে কাজ পাওয়া কঠিন। রেস্টুরেন্ট এ কাজ পাওয়া সহজ ও ইনকাম বেশী।
সমস্যা হল এখানে মদ বিক্রি থেকে শুরু করে পরিবেশন করে সামনে দিতে হবে। আর রেস্টুরেন্টে রান্না (সেফ হলে) করলে শুকরের গোসত রান্না করতে হতে পারে। তাছাড়া মদ বিক্রির টাকা দিয়েই তো আমাকে (সেফ কে) বেতন দিবে।
আর একটা কাজ আছে সেটা হল খাবার ডেলিভারি করা। ডেলিভারি মালের মধ্যে মদ বা শুকরের গোসত থাকা অস্বাভাবিক নয়। এমতাবস্থায় আমার কী করণীয় আছে?
অনেক কষ্ট করে, যুদ্ধ করে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ধার করে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসেছি। এমতাবস্থায় বাড়ি ফিরাও অসম্ভব, ঋণী অবস্থায় মৃত্যু / আত্মহত্যাও অসম্ভব। আল্লহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করছি কিন্তু কোন সান্তনা পাচ্ছি না। দেশে থাকতে এতকিছু জানিনা। আর যা জেনেছি মনে হয়েছে একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। কিন্তু আসার পর দেখেশুনে চলেফিরে কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। এখন আমি কী করতে পারি? দয়া করে পরামর্শ দিবেন আশা করি।
বিঃদঃ- বেশী বড় করার জন্য ক্ষমা চাইছি। দয়াকরে ক্ষমা করে দিয়েন।
ধন্যবাদ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মদ পরিবেশন এবং শুকরের গোস্ত পরিবেশন বা সাপ্লাইয়ের কাজ মৌলিকভাবে নাজায়েজ ও হারাম। তাই আপনাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, যেন হালাল কোন ইনকামের ব্যবস্থা হয়।
যদি অপরাগ অবস্থায় আপাতত উক্ত কাজের বিনিময় কারাহাতের সাথে বৈধ হবে। তাই নিরূপায় হিসেবে আপাতত উক্ত কাজ সমূহের বিনিময় গ্রহণ করতে পারেন।
তবে হালাল ইনকামের সুযোগ হলে এ কাজ বর্জন করা আবশ্যক। আর সর্বদা এর জন্য তওবা ইস্তিগফার এবং হালাল জব তালাশ করতে থাকবেন।
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [سورة المائدة-2)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْخَمْرِ عَشَرَةً عَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَشَارِبَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَآكِلَ ثَمَنِهَا وَالْمُشْتَرِيَ لَهَا وَالْمُشْتَرَاةَ لَهُ (سنن الترمذى، رقم-1295)
ولا يجوز بيعها لحديث مسلم الذى حرم شربها حرم بيعها (رد المحتار، زكريا-10/29، كرتاشى-6/449)
ولا يجوز الاستئجار على حمل الخمر لمن يشربها ولا على حمل الخنزير (الموسوعة الفقهية الكويتية-1/290)
اذا استأجر ذمى مسلما ليحمل له خمرا ولم يقل ليشرف، أو قال ليشرب، جازت الإجارة فى قول أبى حنيفة (الفتاوى الهندية-4/449، الفتاوى التاتارخانية-15/130، رقم-22428)
وجاز حمل خمر ذمى بنفسه بأجر (رد المحتار، زكريا-9/562)
اذا استأجر رجلا ليحمل له خمرا فله الأجر فى قول أبى حنيفة (الفتاوى الهندية-4/449)
آجر المسلم نفسه من مجوسى ليوقد النار لا بأس به، ولو آجر نفسه لحمل الخمر، قال الإمام: لا يكره وعلى قولهما يكره، لأن التصرف فى الخمر حرام، وكذا كل موضع تعلقت المعصية بفعل فاعل مختار (بزازية على هامش الهندية-5/125)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com