প্রচ্ছদ / ঈমান ও আমল / সকল নবীগণ কি মুসলিম ছিলেন? কুরআন কি আগের আসমানী গ্রন্থ রহিত করেনি?

সকল নবীগণ কি মুসলিম ছিলেন? কুরআন কি আগের আসমানী গ্রন্থ রহিত করেনি?

প্রশ্ন

From: মোঃ আবদুল্লাহ খান
বিষয়ঃ সকল নবীরা কি মুসলিম ছিলেন ?

প্রশ্নঃ
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি,আমার স্যার কে একজন বলে যে ১। সকল নবীরা নাকি মুসলিম ছিলেন না? যেহেতু ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম জাতির পিতা।

২। কুরআন নাজিল হওয়ার পর আগের সব আসমানি কিতাব এর আমল রহিত হয়ে গেছে এটা তিনি মানতে নারাজ।
উপরোক্ত প্রশ্ন দুটির উত্তর কুরআন ও হাদিসের আলোকে দিলে খুব উপকৃত হতাম।
আব্দুল্লাহ খান
শিবপুর,নরসিংদি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মুসলিম মানে হলো আত্মসমর্পণকারী। আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণকারীকেই মুসলিম বলা হয়। বাবা আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে আমাদের নবী পর্যন্ত সকল নবীগণই আল্লাহর বিধান ও নির্দেশের সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেছেন। সেই হিসেবে সকলেই ছিলেন মুসলিম।

তবে আলাদা জাতিগতভাবে মুসলিম নামকরণ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে হয়েছে এটাও ঠিক। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আগের নবীগণ মুসলিম ছিলেন না।

যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাত বলা হয় কুরবানীকে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩১২৭]। এর মানে এই নয় যে, আগের নবীগণ কুরবানী করেননি। বরং বাবা আদাম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে প্রতিটি নবীগণের যুগেই কুরবানী প্রচলিত ছিল। [সূরা হজ্জ-৩৪]

বাংলাভাষার দেশেতো আমরা আগে থেকে ছিলাম। কিন্তু ৭১ এ স্বাধীনতার মাধ্যমে আমাদের নাম বাংলাদেশী নামকরণ হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, আমরা আগে বাংলাদেশী ছিলাম না।

তেমনি মুসলিম ছিল আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে আমাদের নবী পর্যন্ত সকলেই। কিন্তু আলাদা নামকরণ করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনেক আগের নবী নূহ আলাইহিস সালাম বলেন:

فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ [١٠:٧٢]

তারপরও যদি বিমুখতা অবলম্বন কর, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন রকম বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় হল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত থাকি। [সূরা ইউনুস-৭২]

যদি আগের নবীগণ মুসলিম নাই হতেন, তাহলে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্মের এতো আগের নবী নূহ আলাইহিস সালাম কিভাবে নিজেকে মুসলিম দাবী করছেন? এর মানে বুঝা গেল, সমস্ত নবীগণই মুসলিম ছিলেন।

কুরআন নাজিলের মাধ্যমে আগের সমস্ত আসমানী কিতাবের বিধানাবলী রহিত হয়ে গেছে। আগেকার আসমানী গ্রন্থের ঐ সকল বিধানই কেবল গ্রহণযোগ্য হবে, যা কুরআনে কারীম সাপোর্ট করেছে। বা সমালোচনা ছাড়া বর্ণনা করেছে। এছাড়া সকল বিধানই রহিত। এটা মুসলিম উম্মাহের সর্বসম্মত একটি আকীদা। এটা অস্বিকার করলে ঈমান থাকবে না। ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে যাবে।

وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

এবং (হে রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমি তোমার প্রতিও সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, তার পূর্বের কিতাবসমূহের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে। সুতরাং তাদের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন। আর তোমার নিকট যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক (উম্মত)-এর জন্য আমি এক (পৃথক) শরীয়ত ও পথ নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ চাইলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু (পৃথক শরীয়ত এজন্য দিয়েছেন) যাতে তিনি তোমাদেরকে যা-কিছু দিয়েছেন, তা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। তোমাদের সকলকে আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে। অতঃপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন। [সূরা মায়েদা-৪৮]

এ আয়াতের পরিস্কারভাবেই আগের নবীদের উপর নাজিলকৃত কিতাবের বিধানাবলীর মাঝে কিছু বিষয় যা  কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে, কেবল তারই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে একথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সব নবীর শরীয়ত এক নয়। প্রত্যেক নবীর উপর নাজিলকৃত শরীয়তই পালন করতে হবে। আগের নবীর শরীয়ত নয়।

কুরআন রেখে আগের উম্মতের খেয়াল খুশির অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

যা পরিস্কার প্রমাণ করে যে, কুরআন আগের আসমানী গ্রন্থাবলীকে রহিত করে দিয়েছে। কেবল কুরআন সমর্থিত আগের আসমানী গ্রন্থের বিধানই মানা যাবে। স্বতন্ত্রভাবে আগের আসমানী কিতাব মানা যাবে না। কারণ, তার বিধানাবলী রহিত হয়ে গেছে।

আর এমনটি করা হয়েছে বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য।

وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَالَ: «أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِي

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহূদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভালো মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইয়াহুদী ও নাসারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি (তোমাদের দীনের ব্যাপারে) এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৭৩৬, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৭৭]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দু পরিচয় দিয়ে ইসকনের মিছিলে শরীক হওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মিছিলে যেসব মুসলমান শরীক হয়, নিজেদের হিন্দু পরিচয় দেয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *