প্রশ্ন
প্রশ্নকারীর নাম: খাইরুল ইসলাম
ঠিকানা: সৌদি আরব
জেলা/শহর: কুমিল্লা
দেশ: বাংলাদেশ
প্রশ্নের বিষয়: বকশিস
বিস্তারিত:
—————-
আরবের একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। বিনিময়ে যা পারিশ্রমিক আসে তার তিন ভাগের এক ভাগ আমরা পাই। যার কারনে পারিশ্রমিকটি খুবই কম হয়ে যায়। পরিশ্রম এর তুলনায়। ঐখানে গাড়ি লোড করি। বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের পণ্যটি নিয়ে যায়। কুয়েত বাহারাইন জর্ডান ইত্যাদি। লোড শেষে,, গাড়িচালকের কাছ থেকে কিছু বকশিশ পাই। আমরা বলে চেয়ে নেই । মাঝে মধ্যে উনারা দেয়। বলতে হয় না। বকশিশ পাওয়ার আশায় আমরা এমন কিছু করি না যাতে করে কোম্পানির ক্ষতি হয়ে যায়। বা কোন গাড়ি চালককে বাধ্য করেও নেওয়া হয় না। সার্ভিসের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে। যিনি বকশিস দিচ্ছেন উনার গাড়িটি উৎসাহ নিয়ে দ্রুততার সাথে সম্পূর্ণ করতেছি। কিছু বকশিস পাওয়ার ফলে আমদের অন্তরে তার সার্ভিসের প্রতি।অধিক পরিমাণে ফুর্তি চলে আসে। ওই সময়টাতে আমার যতটুকু দায়িত্ব তা করেও। অন্যজনের দায়িত্বে থাকার কাজটি। আমাদের উপর নিয়ে নেই। যেন গাড়িটি দ্রুত তার সাথে সম্পন্ন হয়। আমরা হেন্ড জ্যাক দিয়ে। অটোমেটিক সিস্টেম থেকে।তার চিপসের কার্টুনটি দ্রুততার সাথে নামাই। তবে আমি তাকে যদি এই রকমের কোনরকম সাপোর্ট না করি। দেখা যায় যে এই প্রকার গাড়িটি আমাকে কোম্পানির সুপারভাইজার আর কখনোই দেবেন না। এই প্রকার গাড়িটি করতে পরিশ্রম কম হয়। এবং বাড়তি কিছু টিপস পাওয়া যায়। তার মানে এই নয় যে যিনি বকশিস দিচ্ছেন না তিনি তার প্রাপ্য সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার কাজেও কোন প্রকার গাফিলতি করি না। মানি এক কথায় বলতে গেলে। প্র্যাক্টিকালি সবাই। সার্ভিস পাচ্ছেন।তবে তার সার্ভিসে অতিরিক্ত কোন রকমের সাপোর্ট করা হয় না। অতিরিক্ত সাপোর্ট করার কারণে কি। উৎকোচ হয়ে যাবে? বা আমাদের জন্য কি হারাম হয়ে যাবে? যদি এটি হারাম হয়ে যায় আপনি আমাকে দিক নির্দেশনা দিন আমার জন্য কি করনীয়। আমারা ৩০ থেকে ৩৫ জন ওইখানে একসাথে কাজ করি। সুতরাং সহকর্মীদের ইচ্ছা অনুযায়ী ও আমাকে চলতে হয়। দয়া করে আপনার কাছ থেকে। কি করনীয় তার দিকনির্দেশনা চাচ্ছি।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
যেহেতু আপনার বেতনভুক্ত চাকুরীজীবি। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনকালে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত গ্রাহক থেকে কাজের বিনিময়ে চেয়ে নেয়া ঘুষের শামিল। সেই সাথে পরিস্থিতি এমন তৈরী করা যে, তারা হাদিয়া নামে টাকা দিতে বাধ্য হয়ে যায়, এটাও ঘুষের হুকুমে।
তাই এ পরিস্থিতি ও আচরণ বন্ধ করা আবশ্যক।
যদি চাওয়া ছাড়া, এমনিতে সার্ভিসে খুশি হয়ে কিছু হাদিয়া দেয়, তাহলেই সেটা গ্রহণ জায়েজ হবে।
চেয়ে নেয়া, কিংবা চাওয়ার পরিবেশ তৈরী করে নেয়া পুরোটাই ঘুষের হুকুমে হবার কারণে নাজায়েজ হবে।
আল্লাহর উপর ভরসা করুন। মানুষের কাছে চাওয়া বন্ধ করুন। শেষ রাতে আল্লাহর কাছে চাইতে শিখুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার রিজিকে বরকত দান করবেন।
عَنْ أَبِي حَرَّةَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ»
আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। [মুসনাদে আবূ ইয়ালা মুসিলী, হাদীস নং-১৫৭০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৮৬, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১১৫৪৫, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৪৯২, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-১৬৪৮৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-২৯৪৬]
والذى يعطيه بلا شرط فهو هدية (قواعد الفقه-307)
سعى له عند السلطان وأتم أمره لا بأس بقبول هديته بعد، وقبله بطلبه سحت (رد المحتار-6/423)
وشرعا ما يأخذه الآخذ ظلما يدفعه الدافع إليه من هذه الجهة (قواعد الفقه-307)
الْمَعْرُوف بِالْعرْفِ كالمشروط شرطا (قواعد الفقه، رقم-334)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com