প্রশ্ন
হযরত। আমি এক বক্তার বয়ানে শুনেছি। তিনি বলছেন যে, কিছু মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অথচ আমি আগে জানতাম যে, সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কিন্তু উক্ত বক্তা বলতেছেন যে, সবার আগে কিছু মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
জান্নাতে সবার আগে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবেন, এটি বিশুদ্ধ হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত।
হাদীসে আসছে যে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ مَنْ أَنْتَ فَأَقُولُ مُحَمَّدٌ . فَيَقُولُ بِكَ أُمِرْتُ لاَ أَفْتَحُ لأَحَدٍ قَبْلَكَ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করব, মুহাম্মাদ। খাজাঞ্চি বলবেন, “আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি নির্দেশিত হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৮২]
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْجَنَّةُ حُرِّمَتْ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ حَتَّى أَدْخُلَهَا، وَحُرِّمَتْ عَلَى الْأُمَمِ حَتَّى تَدْخُلَهَا أُمَّتِي
হযরত উমর বিন খাত্তাব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত জান্নাত সকল নবীদের জন্য হারাম। আামার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত আগের সকল নবীর উম্মতের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা হারাম। [আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৯৪২, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৬৭১২]
এর সনদ হাসান পর্যায়ের।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا فَخْرَ
আমিই কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবো। এতে আমার কোন অহংকার নেই। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৪৬৯, সুনানে দারামী, হাদীস নং-৫৩]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ تَأْتِي امْرَأَةٌ تُبَادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا: مَا لَكِ؟ وَمَا أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ قَعَدْتُ عَلَى أَيْتَامٍ لِي “
[حكم حسين سليم أسد] : إسناده جيد
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, আমিই প্রথম ব্যক্তি, যার জন্য জান্নাতের দুয়ার খোলা হবে। তবে একজন মহিলা আসবে, সে আমার সাথে প্রবেশে তাড়াহুড়া করবে। তখন আমি তাকে বলবো, কি হলো? কে তুমি? সে বলবে, আমি ঐ মহিলা, যে নিজ সন্তানের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে না করে ছিলাম। [মুসনাদে আবূ ইয়ালা মুসিলী, হাদীস নং-৬৬৫১, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৩৫১৯]
মুহাক্কিক হুসাইন সেলিম আসাদ বলেন, এর সনদটি জাইয়্যিদ। ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের রাবীদের উপর নির্ভর করাতে কোন সমস্যা নেই। [ফাতহুল বারী-১০/৫৩৬]
উক্ত হাদীসগুলোকে সামনে রেখে সমাধান হলো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিকবার জান্নাতে প্রবেশ করবেন। প্রথমবার তিনি একাই প্রবেশ করবেন। তার আগে অন্য কেউ প্রবেশ করবে না।
এরপর তিনি আবার বেরিয়ে আসবেন। তারপর আবার যখন প্রবেশ করতে চাইবেন, তখন কোন হাদীস মতে আল্লাহ ও বান্দার হক আদায়কারীগণ প্রথমে প্রবেশ করবে, কোন রিওয়ায়েত মতে হযরত বেলাল রাঃ সবার আগে আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আবার বিধবা মহিলাও প্রবেশ করবে মর্মে হাদীসে আসছে। প্রতিটি উম্মতের আমলের শ্রেষ্ঠত্ব অনুপাতে অন্যদের চেয়ে আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
এ ব্যাখ্যায় সকল হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধিত হয়ে যায়।
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لبلال: ” بم سبقتني فما دخلت الجنة إلا سمعت خشخشتك أمامي ” لأنها رؤية منام ولا يقدح فيه أن رؤيا الأنبياء حق إذ معناه أنها ليست من الشيطان وبلال مثل له ماشيا أمامه إشارة إلى أنه استوجب الدخول لسبقه للإسلام وتعذيبه في الله وأن ذلك صار أمرا محققا وقد أشار إلى ذلك السمهودي فقال في حديث بلال إنه يدخل الجنة قبل المصطفى وإنما رآه أمامه في منامه والمراد منه سريان الروح في حالة النوم في تلك الحالة تنبيها على فضيلة عمله وأما الجواب بأن دخوله كالحاجب به إظهارا لشرفه فلا يلائم السياق إذ لو كان كذلك لما قال له ” بم سبقتني ” وليت شعري ما يصنع من أجاب به بخبر أبي يعلى وغيره: ” أول من يفتح له باب الجنة أنا إلا أن امرأة تبادرني فأقول مالك أو من أنت؟ فتقول أنا امرأة قعدت على يتامى ” وخبر البيهقي ” أول من يقرع باب الجنة عبد أدى حق الله وحق مواليه ” وأقول هذه أجوبة كلها لا ظهور لها ولا حاجة إليها إذ ليس في هذا الخبر إلا أنه أول من يفتح له الباب وليس فيه أنه أول داخل بل يحتمل أنه يستفتح لهم ويقدم من شاء من أمته في الدخول كما هو المتعارف في الدنيا فإن أبيت إلا جوابا على فرض أنه أول داخل وهو ما ورد في أحاديث أخرى فدونك جوابا يثلج الفؤاد بعون الرؤوف الجواد وهو أنه قد ثبت في خبر مسدد أن دخول المصطفى يتعدد فالدخول الأول لا يتقدم ولا يشاركه فيه أحد ويتخلل بينه وبين ما بعده دخول غيره فقد روى الحافظ ابن منده بسنده عن أنس رفعه: ” أنا أول الناس تنشق الأرض عن جمجمتي يوم القيامة ولا فخر وأعطى لواء الحمد ولا فخر وأنا سيد الناس يوم القيامة ولا فخر وأنا أول من يدخل الجنة ولا فخر أجيء باب الجنة فآخذ بحلقتها فيقولون من؟ فأقول أنا محمد فيفتحون لي فأجد الجبار مستقبلي فأسجد له فيقول ارفع رأسك وقل يسمع لك واشفع تشفع فأرفع رأسي فأقول: أمتي أمتي فيقول اذهب إلى أمتك فمن وجدت في قلبه مقال حبة من شعير من الإيمان فأدخله الجنة فأقبل فمن وجدت في قلبه ذلك فأدخله الجنة فإذا الجبار مستقبلي فأسجد له ” الحديث وكرر فيه الدخول أربعا وفي البخاري نحوه وبه تندفع الاشكالات ويستغنى عن تلك التكلفات (فيض القدير-1\35)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com