প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / নাফরমান বান্দাকে স্মরণ করাতে আল্লাহ তাআলা তার অনুগ্রহের কথা বলতে থাকেন মর্মে হাদীসে কুদসীর অস্তিত্ব আছে কি?

নাফরমান বান্দাকে স্মরণ করাতে আল্লাহ তাআলা তার অনুগ্রহের কথা বলতে থাকেন মর্মে হাদীসে কুদসীর অস্তিত্ব আছে কি?

প্রশ্ন

আমাদের দেশের এক প্রসিদ্ধ বক্তা তিনি তার বয়ানে প্রায়ই একটি হাদীসে কুদসী বলে থাকেন। যার সারমর্ম হলো:

বান্দা যখন আল্লাহকে ভুলে যায়, তখন আল্লাহ তাআলা বান্দার নিকটে এসে বলতে থাকেন, কে তোকে রক্ত বানিয়েছে? রক্ত থেকে হাড্ডি বানিয়েছে? কে হাড্ডির মাঝে গোস্তের আবরণ চরাইলো? আল্লাহ নিজেই ইহসান প্রকাশ করে বলেন, আমি ছাড়া আর কে আছে এসব করার? তোমার দাঁত ছিল না, কাটবে। জিহবা ছিল কিন্তু কথা বলতে পারতে না। চোখ ছিল দেখতে পারতে না। হাত ছিল ধরতে পারতে না। পা ছিল কিন্তু হাটতে পারতে না।…. তোমার মায়ের সিনায় আমি দুইটা পাতলা রগকে জারী করছি। পিউর দুধ যার বিকল্প কিয়ামত পর্যন্ত আনতে পারবে না। শীতের ছোয়া লাগতে দেরী গরম করতে দেরী করি না। গরম আসতে দেরী আমি ঠান্ডা করতে দেরী করি না।……

এরকম লম্বা এক হাদীস তিনি হাদীসে কুদসী নামে বলেন। এ বিষয়ে সঠিকটা জানতে চাই।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মাওলানা সাহেব যেটিকে হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেন এমন কোন হাদীস হাদীসের কোন কিতাবের মাঝে বিদ্যমান নেই। তাই এটিকে হাদীসে কুদসী বলা আল্লাহ তাআলা এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর স্পষ্ট মিথ্যা অপবাদ দেয়া। যা খুবই মারাত্মক বিষয়। ইচ্ছেকৃত এমন মিথ্যারোপকারীর পরিণাম জাহান্নাম বলে হাদীসের মাঝে ইরশাদ হয়েছে।

উক্ত বর্ণনাটি হিলয়াতুল আউলিয়া নামক কিতাবে মুহাম্মদ বিন কা’ব কুরজী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি এটা তওরাতে পড়েছি অথবা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সহীফায় পেয়েছি বলে তিনি লম্বা এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যে লম্বা হাদীসটির আরবী পাঠ হলো:

حَدَّثَنَا أَبِي، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَلَّةَ الصَّفَّارُ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الصُّوفِيُّ، ثنا الْعَبَّاسُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الطَّامِدِيُّ، ثنا مَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ الرَّبَذِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِيِّ قَالَ: ” قَرَأْتُ فِي التَّوْرَاةِ أَوْ قَالَ فِي صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ الْخَلِيلِ فَوَجَدْتُ فِيهَا: يَقُولُ اللَّهُ: «يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَنْصَفْتَنِي خَلَقْتُكَ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا وَجَعَلْتُكَ بَشَرًا سَوِيًّا خَلَقْتُكَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ فَجَعَلْتُكَ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ، ثُمَّ خَلَقْتُ النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْتُ الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْتُ الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْتُ الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأَتُكَ خَلْقًا آخَرَ، يَا ابْنَ آدَمَ، هَلْ يَقْدِرُ عَلَى ذَلِكَ غَيْرِي ثُمَّ خَفَّفْتُ ثِقَلَكَ عَلَى أُمِّكَ حَتَّى لَا تَتَبَرَّمَ بِكَ وَلَا تَتَأَذَّى ثُمَّ، أَوْحَيْتُ إِلَى الْأَمْعَاءِ أَنِ اتَّسِعي وَإِلَى الْجَوَارِحِ أَنْ تَفَرَّقِي فَاتَّسَعَتِ الْأَمْعَاءُ مِنْ بَعْدِ ضِيقِهَا وَتَفَرَّقَتِ الْجَوَارِحُ مِنْ بَعْدِ تَشَبُّكِهَا، ثُمَّ أَوْحَيْتُ إِلَى الْمَلَكِ الْمُوَكَّلِ بِالْأَرْحَامِ أَنْ يُخْرِجَكَ مِنْ بَطْنِ أُمِّكَ فَاسْتَخْلَصَكَ عَلَى رِيشَةٍ مِنْ جَنَاحِهِ فَاطَّلَعْتُ عَلَيْكَ فَإِذَا أَنْتَ خَلْقٌ ضَعِيفٌ لَيْسَ لَكَ سِنٌّ يَقْطَعُ وَلَا ضِرْسٌ يَطْحَنُ فَاسْتَخْلَصْتُ لَكَ فِي صَدْرِ أُمِّكَ عِرْقًا يَدُرُّ لَبَنًا بَارِدًا فِي الصَّيْفِ حَارًّا فِي الشِّتَاءِ وَاسْتَخْلَصْتُهُ لَكَ مِنْ بَيْنِ جِلْدٍ وَلَحْمٍ وَدَمٍ وَعُرُوقٍ ثُمَّ قَذَفْتُ لَكَ فِي قَلْبِ وَالِدِكَ الرَّحْمَةَ وَفِي قَلْبِ أُمِّكَ التَّحَنُّنَ فَهُمَا يُكَدَّانِ عَلَيْكَ وَيَجْهَدَانِ يُرَبِّيَانِكَ وَيُغَذِّيَانِكَ وَلَا يَنَامَانِ حَتَّى يُنَوِّمَانِكَ، يَا ابْنَ آدَمَ أَنَا فَعَلْتُ ذَلِكَ بِكَ لَا لِشَيْءٍ اسْتَأْهَلْتَ بِهِ مِنِّي وَلَا لِحَاجَةٍ اسْتَعَنْتُ بِكَ عَلَى قَضَائِهَا، يَا ابْنَ آدَمَ فَلَمَّا قَطَعَ سِنُّكَ وَطَحَنَ ضِرْسُكَ أَطْعَمْتُكَ فَاكِهَةَ الصَّيْفِ فِي أَوَانِهَا وَفَاكِهَةَ الشِّتَاءِ فِي أَوَانِهَا فَلَمَّا أَنْ عَرَفْتَ أَنِّي رَبُّكَ  عَصَيْتَنِي فَادْعُنِي فَإِنِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ، وَاسْتَغْفِرْنِي فَإِنِّي غَفُورٌ رَحِيمٌ

 হিলয়াতুল আউলিয়ার ১০ নং খণ্ডের পৃষ্ঠা নং ৩৯৯। সনদের মাঝে কোন সাহাবীর নামও নেই। নেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে নিসবতও। নেই এটি আল্লাহর কথা হবার কোন প্রমাণ।

মুহাম্মদ বিন কুরজ রহঃ একজন তাবেয়ী। তাবেয়ী কি করে হাদীসে কুদসী বলতে পারেন? আর বর্ণনাকারী নিজেই বললেন যে, এটি তিনি তওরাতে বা সহীফায়ে ইবরাহীমে দেখেছেন। এমন একটা বক্তব্যকে হাদীস হিসেবে, আবার হাদীসে কুদসী হিসেবে পেশ করা চরম গর্হিত কাজ।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *