প্রশ্ন
From: oniccuk
মোবাইল/ইমেইলঃ oniccuk
বিষয়ঃ oniccuk
প্রশ্নঃ
আসসালামুয়ালাইকুম
হুজুর কিছু দিন আগে এক লা পথি ভাই এর পোস্ট পেলাম । তিনি সকল হানাফিদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে । উত্তরটা তারাতারি দেন তাকে তার বাজে চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিতে হবে ।
তার কথাগুলো হলো:
“হানাফি ভাইদের প্রতি আমার চ্যালেঞ্জঃ যদি আমার ৩ টি প্রশ্নের উত্তর আবু হানিফা রা থেকে ফয়সালা দিতে পারেন তাহলে আজই আপনার হাত ধরে হানাফি মাজহাব গ্রহণ করবো। ইনশাআল্লাহ ।
প্রশ্ন করার আগে আমি স্পষ্ট বলছি । আমি সাধারণ মানুষ কোরান পড়তে জানিনা ! আমি কোরানের ফয়সালা নিবো না এমন কি হানাফির ফয়সালা ছাড়া অন্য ইমামদের ফয়সালা গ্রহণ করা হবে না ।
কারন আমি ১০০% হানাফি হতে চাই । ১০০% আকিদা ঠিক করতে চাই আমাকে আবু হানিফার ফয়সালা দিতে হবে । কোরান এবং অন্য লোকদের ফয়সালা গ্রহণ করে হবে না।
প্রশ্ন গুলা হলঃ
১ নবিজি মাটির তৈরি নাকি নুরের তৈরি ? ইমাম আবু হানিফার ফয়সালা কি ?
২ আল্লাহ হাজির নাজির নাকি হাজির নাজির না । ইমাম হানিফার ফয়সালা কি?
৩ আল্লাহ কি আরশে নাকি সব জায়গায় বিরাজমান, এই বিষয় ইমাম আবু হানিফার ফয়সালা কি?
আমি (ঐ লোকটি ) আবারও বলছি আমি ইমাম আবু হানিফার ফয়সালা ছাড়া কারও ফয়সালা মানব না। কারণ আমি ১০০% হানফি হতে চাই তাই আমাকে শুধু তাঁরই ফয়সালা দিতে হবে ।
দ্বিতীয় বিষয় হল আমি কোন হানাফি দলে join করবো ?
কারন হানাফিদের মাঝে কয়েক ভাগ রয়েছে। যেমনঃ দেওবন্দি হানাফি, ফুরফুরা হানাফি, বেরলভি হানাফি, সরসিনা হানাফি।
এই দল গুলা সবাই নিজেকে ১০০% হানাফি বলে দাবিও করছে ।
দেওবন্দের কাছে গেলে তারা কোরান থেকে দলিল দেয় নবিজি মাটির তৈরি , ফুরফুরাদের কাছে গেলে তারা একই দলিল দিয়ে বলে নবিজি নাকি নুরের তৈরি। বেরলভির একি কথা বলে যে নবিজি নুরের তৈরি ,সরসিনা তারাও বলে নুরের তৈরি । আমি সাধারণ মানুষ আমি কোনটা বিশ্বাস করবো । কারন তারা সবাই হানাফি ,কোনটা সঠিক কারটি সঠিক ? আবু হানিফার ফয়সালা চাই? আমাকে তাঁর ফয়সালা ছাড়া অন্য কারও ফয়সালা দিলে হবে না কারন আমি ১০০% হানাফি হতে চাই ।
আছে কোন হানাফি ভাই আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে !
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কেউ যদি জানার জন্য প্রশ্ন করে, তাহলেই কেবল আমরা তার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে থাকি। উপরোক্ত দাবি ও প্রশ্ন যিনি করেছেন, তিনি জানার প্রশ্ন করেননি, বরং তার অজ্ঞতা ও বিদ্বেষ প্রকাশের জন্য এমন আজগুবি প্রশ্ন তিনি করেছেন।
যে লা মাযহাবী উক্ত প্রশ্নগুলো করেছেন, তিনি যেমন অজ্ঞ ও মূর্খ তেমনি চরম মুসলিম বিদ্বেষী বলেও প্রতীয়মান হয়।
অজ্ঞতার প্রমাণ
লোকটি হানাফী শাফেয়ী ইত্যাদি তথা মাযহাব মানার অর্থই জানে না।
হানাফী মাযহাব মানার অর্থ হলো, যদি কোন শরয়ী মাসআলা ইজতিহাদী হয়, সেই সকল মাসআলায় মুজতাহিদ ইমামের পথ নির্দেশনায় গায়রে মুজতাহিদ ব্যক্তিরা আল্লাহর শরীয়ত অনুসরণ করে।
এর নাম মাযহাবের অনুসরণ। যদি কেউ ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এবং তার নির্ধারণকৃত উসূল অনুপাতে তার ছাত্রদের ইস্তিম্বাতকৃত মাসায়েল অনুসরণ করে, তাহলে তাদের হানাফী বলা হয়। যদি ইমাম শাফেয়ী রহঃ এ এবং উসূলের মাধ্যমে ইস্তিম্বাতকৃত মাসায়েল মানা হয়, তাহলে তাকে শাফেয়ী বলা হয়।
এখানে খিয়াল করার বিষয় হলো, মাযহাব মানা বা হানাফী হওয়ার প্রসঙ্গ আসে যখন মাসআলাটি ইজতিহাদী হবে।
যদি মাসআলা ইজতিহাদী না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রেও মাযহাবের প্রসঙ্গ টানা বা হানাফী শাফেয়ী হবার কথা বলা মাযহাব সম্পর্কে জাহালাতের পরিচায়ক।
উক্ত লা মাযহাবী ভাইটা নূরের তৈরী, মাটির তৈরী, হাজির নাজির এবং আল্লাহর আরশে ইস্তিওয়া হওয়া সম্পর্কিত যে প্রশ্ন উত্থাপন করে হানাফী শাফেয়ী প্রসঙ্গ টেনেছেন এটা চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক।
কারণ, এ মাসআলাগুলো ইজতিহাদী মাসআলা নয়। এসব আক্বায়েদ সম্পর্কিত মাসায়েল। আর আক্বায়েদ সম্পর্কিত মাসায়েল ফিক্বহের অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং তা কালাম শাস্ত্রের বিষয়।
সুতরাং ইলমুল কালামের মাসায়েলকে সেই সাথে গায়রে ইজতিহাদী মাসায়েলকে মুজতাহিদ ইমাম থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাওয়াটাই চূড়ান্ত মূর্খতার আলামত।
যেহেতু এটা প্রশ্ন হবার যোগ্যতাই রাখে না, তাই প্রশ্নের উত্তর দেবার বিষয়ই আসে না।
এসব প্রশ্নগুলো নাস্তিকদের উদ্ভট প্রশ্নের মতো, আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টি করলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করলো? (নাউজুবিল্লাহ)
এ ধরণের জাহিলী প্রশ্ন যেহেতু প্রশ্ন হবার যোগ্যতা রাখে না, বরং প্রশ্নকারীর উক্ত বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রমাণ করে, তাই উচিত উক্ত ভাইয়ের আগে মাযহাব অনুসরণের অর্থ ভালো করে জানা। মাযহাব কাকে বলে, তা বুঝতে পারলে আশা করি তার বক্র হৃদয় ঠিক হয়ে যাবে। এমন বোকামীসূলভ প্রশ্ন আর করবে না।
এ বিষয়ে আমাদের সাইটে প্রকাশিত ‘তাক্বলীদের হাকীকতঃ একটি দালিলীক পর্যালোচনা’ চার পর্ব এবং সহজ ও সাবলীল ভাষায় মাযহাবের পরিচয়’ প্রবন্ধ দু’টি পড়তে পারেন। আশা করি অজ্ঞতা দূর হবে।
বিদ্বেষের প্রমাণ
আগের আলোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছে যে, প্রশ্নকারী মাযহাব সম্পর্কে অজ্ঞতায় নিমজ্জিত। তার দ্বিতীয় প্রশ্নে তার চরম মুসলিম বিদ্বেষের প্রমাণও নিহিত।
যদি আমরা তার ভাষায় বলি যে, আমি আহলে হাদীস হতে চাই। ১০০ পার্সেন্ট আহলে হাদীস। কিন্তু আমি কোন আহলে হাদীস দলে যোগ দিবো? কারণ, আহলে হাদীস আমাদের ছোট্ট বাংলাদেশেই কয়েক দলে বিভক্ত।
বাংলাদেশ আহলে হাদীস যুব সংঘের সাবেক সভাপতি মুযাফফর বিন মহসিনের বই “গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে আহলে হাদীস আন্দোলন”।
যা প্রকাশিত হয়েছে আছ ছিরাত প্রকাশনী থেকে।
সেই ছোট্ট পুস্তিকাটির পাতায় তিনি তাদের যে অসংখ্য দল আর বিভক্তির ফিরিস্তি দিয়েছেন তার একটি তালিকা-
১
জমিয়তে আহলে হাদীস আন্দোলন
২
আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ।
৩
আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলাম। [পৃষ্ঠা-৭] ৪
আহলে হাদীস যুব সংঘ। [পৃষ্ঠা-৬] ৫
জমিয়তে শুব্বানে আহলে হাদীস। [পৃষ্ঠা-৬] ৬
জামাআতে গুরাবায়ে আহলে হাদীস।[পৃষ্ঠা-২০] ৭
অলইন্ডিয়া আহলেহাদীস কনফারেন্স। [পৃষ্ঠা-২০] ৮
আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গলা ও আসাম। [পৃষ্ঠা-২০] ৯
নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদীস। [পৃষ্ঠা-২০]
এখন প্রশ্ন হল, আমি হান্ড্রেট পার্সেন্ট আহলে হাদীস হতে চাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন আহলে হাদীস হবো?
একটু দয়া করে জানাবেন, যেন আমি খাঁটি আহলে হাদীস হতে পারি।
এছাড়া আহলে হাদীস নামধারীদের মাঝে মাসায়েল নিয়ে বিস্তর মতভেদ। যেমন:
১–কিরাত পড়া প্রসঙ্গে
ক) আলবানীর মতে জোরে তথা জেহরী নামাযে কিরাত পড়া রহিত।{শায়েখ আলবানীর “নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পদনের পদ্ধতি-৮৩}
খ) আসাদুল্লাহ গালিব বলে ফরজ। {আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ-৮৮}
২–বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে
ক) বিসমিল্লাহ সূরা ফাতিহার অংশ হবার পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই। {আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৮৬}
খ) সূরা ফাতিহা কুরআনের অংশ। {অধ্যাপক হাফিজ আইনুল বারী রচিত “আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা”-১০৫}
৩–বিসমিল্লাহ জোরে পড়া
ক) গালিব সাহেবের মতে এর কোন ভিত্তি নেই। [আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৮৬}
খ) জোরে আস্তে উভয়ভাবে পড়া ছহীহ সনদে বর্ণিত। {আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত “ছালাত আদায় পদ্ধতি”-২৮}
৪–রুকু
ক) রুকু পেলে রাকাআত পাওয়া যায়। {আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত “ছালাত আদায় পদ্ধতি”-৩৩}
খ) রুকু পেলে উক্ত রাকাত পায়নি। { আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৯৬}
৫- রুকু থেকে হাত বাঁধা
শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন ও ইবনে বায বলেন, রুকুর পর উঠে হাত বাঁধা সুন্নাত (ফতুওয়া আরকানুল ইসলাম পৃ:২৭৩)
কিন্তু শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, বিদআত। -(আসলু সিফাতিস সালাহ খ:২ পৃ:৭০০)
এখন আমাকে বলবেন কি? আমি কোন সহীহ হাদীসের উপর আমল করবো? আমাকে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা থেকে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনটির উপর আমল করবো তা নির্দিষ্ট করে দেখাতে হবে। এছাড়া অন্য কারো কথা বা উক্তি দেখাতে পারবেন না।
আমি শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাই মানতে চাই। অন্য কারো কথা নয়।
কারণ, আমি একশত পার্সেন্ট আহলে হাদীস হতে চাই।
আছে কোন লা মাযহাবী আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে?
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]