প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আশা করি আল্লাহ আপনাদের ভালো রেখেছেন। হযরত একটি ইস্তিফতা জানতে চাচ্ছি। প্রশ্ন বড় হওয়ার জন্য প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
হযরত আমি একজন প্রবাসী। আমি যেখানে বসবাস করছি সেখানে একজন ব্যাক্তি দৈনিক ৮ ঘন্টা করে মাসে ছুটি বাদ দিয়ে ১৫১ ঘন্টা করে কাজ করে। তাদের দৃষ্টিতে একজন ব্যাক্তি দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করা এটা তার সুস্থতার জন্য মানানসই।
সরকার ১৩০৫ ইউরো বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঘন্টা প্রতি মূল্যের ভিত্তিতে কখনো বেতন কম বেশী হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঘন্টা প্রতি ১১ ইউরোর কাছাকাছি পড়ে। অনেকের ক্ষেত্র আরো বেশী পড়ে যোগ্যতার কারনে।
এখানকার জীবনযাপন সহজের লক্ষ্যে ১৫০০ ইউরোর কম যাদের বেতন সরকার তাদেরকে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত পূর্ণ করে দেয়ার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। তবে ১৫০০ ইউরো পুরোটা ব্যাক্তি যে কোম্পানিতে কাজ করে সে কোম্পানি দিবেনা বরং কোম্পানি ১৩০৫ ইউরো দিবে এবং বাকি টাকা সরকার নির্ধারিত একটি বিভাগ পূরন করে দিবে।
এটা অনেকটা সরকারের পক্ষ থেকে বোনাসের মতো। এই বোনাস পাওয়ার জন্য ব্যাক্তিকে নির্দিষ্ট বিভাগকে অবহিত করতে হবে যে, তিনি কতো ঘন্টা কাজ করলন এবং তাঁর বেতন কতো।
বেতনের উপর নির্ভর করে তার বোনাসের পরিমান। যদি ১৩০৫ ইউরোর কম বেতন পায় তাহলে বোনাস বেশী পাবে আর যদি ১৩০৫ ইউরো বেতন হয় তবে বোনাস কিছুটা কম হবে। সর্বোপরি ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত পূরন করে দিবে।
প্রত্যেক কোম্পানি তার সহযোগীদের বেতন এবং ঘন্টা সরকারকে অবহিত করে এবং টেক্স পরিশোধ করে। অনেকক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো টেক্স কম দেয়ার উদ্দেশ্যে এমন করে যে, একজন ব্যাক্তির বেতন নির্ধারণ করা হলো যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৮০০ ইউরো। কিন্তু সরকারকে অবহিত করেছে ১৩০৫ ইউরো।
তো হযরতের কাছে উপরোক্ত বিষয়ে দুটি বিষয় জানতে চাচ্ছি।
(১)
যে ব্যাক্তির বেতন ১৮০০ ইউরো সে ব্যাক্তি সরকারের খাতায় ১৩০৫ ইউরো কোম্পানির ঘোষনার কারণে। এই ব্যাক্তির জন্য বোনাস যে বিভাগ দিয়ে থাকে তাদেরকে ১৩০৫ ইউরো বেতনের কথা বলে অতিরিক্ত বোনাস নেয়া জায়েয হবে?
(২)
কোম্পানি যদি ব্যাক্তিকে এভাবে বলে যে, আপনার বেতন ১৩০৫ ইউরো বাকি ১৮০০ ইউরো পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে বোনাস। তো এক্ষেত্রে ঐ ব্যাক্তি সরকারের নির্ধারিত বোনাস বিভাগ থেকে ১৩০৫ ইউরো বেতনের কথা বলে সরকারের অতিরিক্ত বোনাস নেয়া জায়েয হবে?
মেহেরবানি করে সমাধান দিলে অনেক উপকার হবে। রাব্বে কারীম আপনাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ভরপুর কামিয়াবি দান করুন। আমীন।
জাযাকুমুল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথম সূরতে সরকারী খাত থেকে বোনাস গ্রহণ বৈধ নয়। কারণ, এটি সরাসরি মিথ্যা। আর মিথ্যা বলে সম্পদ হাসিল করা জায়েজ নয়।
তবে দ্বিতীয় সূরতে জায়েজ আছে। অর্থাৎ কোম্পানী যদি বলে যে, আপনার মূল বেতন ১৩০৫ ইউরো। আর বাকি টাকা আপনার বোনাস।
আর সরকার বেতন ১৩০৫ বা এর কম বেতনধারীকে বোনাস দিয়ে থাকে। সেই হিসেবে আপনার জন্য সরকারী অনুদান গ্রহণ জায়েজ হবে।
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ (٢:١٨٨)
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। [সূরা বাকারা-১৮৮]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ ۚ (٤:٢٩)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। {সূরা নিসা-২৯}
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ (٣:٦١)
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}
قوله تعالى- فَاجْتَنِبُواْ الرِّجْسَ مِنَ الأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ (الحج-30)
তোমরা মুর্তিপূজার নোংরামী থেকে বাঁচো, এবং মিথ্যা কথা থেকে বাঁচো। {সূরা হজ্জ্ব-৩০}
عَنْ أَبِي حَرَّةَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَلَا لَا تَظْلِمُوا، إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ
আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০৬৯৫, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫১০৫, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৮৫]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا (صحيح مسلم، كتاب الايمان، باب قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله تعالى عليه وسلم مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا، رقم الحديث-294)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে আমার উম্মতের উপর অস্ত্র উঁচু করে সে আমার উম্মতভূক্ত নয়, আর যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজী করে, সেও আমার উম্মতভূক্ত নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৪১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৭৯৭, মুসনাদে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭২১}
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}
لا يجوز لأحد أخذ مال بغير سبب شرعى (رد المحتار، زكريا-6/106، كرتاشى-4/61، الفتاوى الهندية، قديم-2/167، جديد-2/181، شرح المجلة رستم باز-1/62، رقم-97)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী, নরসিংদী।
ইমেইল– [email protected]