প্রশ্ন
স্বামী স্ত্রীকে বলেছিল, তোমাকে পছন্দ করে এমন কারো সাথে যদি ফোনে কথা বল তাহলে তুমি তালাক হয়ে যাবা। কিন্তু এই শর্ত স্বামীর মনে নাই। স্ত্রীর মনে আছে।
এখন স্ত্রীর ধারনা মতে এ শর্ত পুরা হয়ে গেছে , কিন্তু স্বামী শর্ত পুরা হওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। কারণ সে শর্ত ভুলে গেছে ।
এমন অবস্থায় স্বামী বলেছে,যেহেতু তোমার হিসাব অনুযায়ী শর্ত পুরা হয়ে গেছে। তাহলে তো তোমার ওপর এক তালাক বায়েন হয়ে গেছে,এটা তাহলে মেনে নাও। কথাটা বেশ কয়েকবার স্বামী বলেছে। স্ত্রী বলেছে ঠিক আছে।
কথাটা স্বামী এই হিসাবে বলেছে যে, স্ত্রী বার বার বলছিল যে চল আমরা নতুন করে বিয়ে করে নেই। তাই এটাই বোঝাবার জন্য বলেছিল যেহেতু তুমি শর্ত মেনে নিচ্ছ তাহলে, শর্ত পুরা হলে যে এক তালাক বায়েন হয় এটাও মেনে নাও। তাহলে আমরা বিয়ে করে নিব। আলাদা ভাবে তালাক দেওয়ার নিয়তে বলেনি।
একথা বলার দ্বারা কি স্ত্রীর ওপর স্বামীর শর্তের তালাক ব্যাতীত আলাদাভাবে কোন তালাক পতিত হয়েছে?
শর্তের তালাক কী স্ত্রীর ধারনা অনুযায়ী হবে?
মোট কয়টা তালাক হল?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী নিশ্চিত হয় যে, সে এমন শর্ত দেয়নি। তাহলে আপনার পক্ষে কোন স্বাক্ষী না থাকলে কোন তালাক পতিত হয়নি বলেই ধর্তব্য হবে। সাক্ষী না থাকা অবস্থায় স্বামীর কথাই ধর্তব্য হবে।
তবে যদি আপনার কথা সত্য হয়, এবং আপনি নিশ্চিত হন যে, আপনার স্বামী কথ বলার উপর তালাককে শর্তযুক্ত করেছে। আর সেই শর্ত পাওয়া গেছে।
এক্ষেত্রে শর্ত ভঙ্গ হবার কারণে,আপনার উপর এক তালাকে রেজয়ী পতিত হয়েছে। তালাকে বাইন নয়।
তারপর আপনার স্বামীর উক্ত কথার প্রেক্ষিতে বলা যে, ‘যেহেতু তোমার হিসাব অনুযায়ী শর্ত পুরা হয়ে গেছে তাই এক তালাকে বাইন হয়ে গেছে’ বলার দ্বারা কোন নতুন তালাক পতিত হবে না।
কারণ, এটি নতুন করে তালাক নয়, বরং পূর্ব তালাকের প্রতিক্রিয়ামাত্র।
যেহেতু আপনাদের মাঝে এক তালাকে রেজয়ী হয়ে গেছে। তাই শর্ত ভঙ্গ করার সময় থেকে তিন হায়েজের সময়সীমার মাঝে যদি আপনার স্বামী মৌখিকভাবে বা সহবাস ইত্যাদির মাধ্যমে আপনাকে ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আর নতুন করে বিবাহ করার প্রয়োজন নেই। তবে যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার স্বামী আর ভবিষ্যতে দুই তালাকের মালিক থাকবেন।
وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِنْ رِجَالِكُمْ فَإِنْ لَمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ (سورة البقرة-282)
وما سوى ذلك من الحقوق يقبل فيه رجلان أو رجل وامرأتان سواء كان الحق مالا أو غير مال، مثل النكاح والعتاق والطلاق الخ (هداية، اشرفى-3/154، الجوهرة النيرة، ملتان-2/138، دار الكتب ديوبند-2/309، البحر الرائق، زكريا-7/62، كوئته-7/104، الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-8/178)
والمرأة كالقاضى إذا سمعته أو أخبرها عدل لا يحل لها تمكينه، والفتوى على أنه ليس لها قتله ولا تقتل نفسها بل تفدى نفسها بمال أو تهرب (رد المحتار، زكريا-4/463، 2/468)
وتنحل اليمين بعد وجود الشرط مطلقا لكن إن وجد فى الملك طلقت (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-4/609، كرتاشى-3/355 ، تبيين الحقائق، زكريا-3/118، ملتان-2/235)
إذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لامرأته إن دخلت الدار فأنت طالق (هداية-2/385ـ هندية، قديم-1/420، جديد-1/488)
عن شعبة قال: سألت الحكم وحمادا عن رجل قال لامرأته: أنت طالق، أنت طالق، ونوى الأولى، قالا: هى واحدة، وكذالك إذا قال: اعتدى، اعتدى، (المصنف لابن أبى شيبة-9/544، رقم-18201)
اذا طلق الرجل امرأته تطليقة رجعية أو تطليقتين فله أن يراجعها فى عدتها (هداية، اشرفى-2/394، الفتاوى الهندية، قديم-1/470، جديد-1/533)
اذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله ان يتزوجها فى العدة وبعد انقضائها (الفتاوى الهندية-1/472، تبيين الحقائق-2/257)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী, নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com