লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
অধিক হারে মিথ্যা বলা হবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ، وَتَتَقَارَبَ الْأَسْوَاقُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ ” قِيلَ: وَمَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: ” الْقَتْلُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অচিরেই কিয়ামতের পূর্বে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। অধিকহারে মিথ্যা বলা হবে। কাছাকাছি বাজার শপিংমল হতে থাকে। সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে। খুনাখুনি বৃদ্ধি পাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৭২৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৭১৮]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: خَطَبَنَا عُمَرُ بِالجَابِيَةِ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي قُمْتُ فِيكُمْ كَمَقَامِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِينَا فَقَالَ: أُوصِيكُمْ بِأَصْحَابِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَفْشُو الكَذِبُ حَتَّى يَحْلِفَ الرَّجُلُ وَلاَ يُسْتَحْلَفُ، وَيَشْهَدَ الشَّاهِدُ وَلاَ يُسْتَشْهَدُ، أَلاَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ، عَلَيْكُمْ بِالجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالفُرْقَةَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الوَاحِدِ وَهُوَ مِنَ الاِثْنَيْنِ أَبْعَدُ، مَنْ أَرَادَ بُحْبُوحَةَ الجَنَّةِ فَلْيَلْزَمُ الجَمَاعَةَ، مَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَذَلِكَ الْمُؤْمِنُ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে জাবিয়া নামক স্থানে ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হে লোকেরা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন আমাদের মাঝে দাঁড়াতেন তেমনি আমি আজ তোমাদের মাঝে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমাদেরকে আমার সাহাবীগণ সম্পর্কে ওয়াসীয়ত করে যাচ্ছি। এরপর যারা তাদের পরে আসবে, এরপর হল তারা যারা তাদেরও পরে আসবে। এরপর মিথ্যার বিস্তৃতি ঘটবে। এমনকি একজন কসম করে বসবে অথচ তাকে কসম করতে বলা হয়নি। কোন সাক্ষী দিয়ে বসবে অথচ তাকে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়নি। শুনে রাখ, কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সঙ্গে নিভৃতে একত্রিত না হয় অন্যথায় শয়তান অবশ্যই তৃতীয় জন হিসাবে হাযির থাকে। তোমরা অবশ্যই মুসলিম জামাআতকে আকড়ে ধরে থাকবে। বিচ্ছিন্নতা থেকে বেঁচে থাকবে। শয়তান একাকী জনের সাথে থাকে। আর দুই জন থেকে সে আরো দূরে থাকে। যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম স্থান কামনা করে সে যেন জামাআতকে আকড়ে ধরে থাকে। নেক আমল যাকে আনন্দিত করে এবং মন্দ আমল যাকে দুঃখিত করে সেই হল মু’মিন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২১৬৫, ইফাবা-২১৬৮]
বাজার ও শপিংমলের আধিক্য হবে
عَنْ مَكْحُولٍ، قَالَ: قَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى السَّاعَةُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَلَكِنَّ أَشْرَاطَهَا تَقَارُبُ الْأَسْوَاقِ، وَمَطَرٌ وَلَا نَبَاتَ، وَظُهُورُ الْغِيبَةِ، وَظُهُورُ أَوْلَادِ الْغَيَّةِ، وَالتَّعْظِيمُ لِرَبِّ الْمَالِ، وَعُلُوُّ أَصْوَاتِ الْفُسَّاقِ فِي الْمَسَاجِدِ، وَظُهُورُ أَهْلِ الْمُنْكَرِ عَلَى أَهْلِ الْمَعْرُوفِ، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ الزَّمَانَ فَلْيَرُغْ بِدِينِهِ، وَلْيَكُنْ حِلْسًا مِنْ أَحْلَاسِ بَيْتِهِ
হযরত মাকহুল রহঃ থেকে বর্ণিত। এক গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। নবীজী জবাবে বলেন, যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি যে জিজ্ঞাসা করছে তার চেয়ে বেশি জানে না। কিন্তু এর আলামত হলো, বাজার বা শপিং সেন্টার একটা অন্যটার খুব কাছাকাছি হবে। বৃষ্টি হওয়া সত্বেও ফসল ভালো না হওয়া। গীবত ছড়িয়ে যাওয়া। জারজ সন্তান ছড়িয়ে পড়া। সম্পদশালীদের সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া। মসজিদে ফাসিকও পাপীলোকদের আওয়াজ উঁচু হওয়া। গোনাহগারদের নেকককারদের উপর প্রধান্য পাওয়া। যে ব্যক্তি এ যুগ পাবে, তার উচিত সে তার দ্বীন ও ঈমান নিয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়বে। আর নিজ ঘরের জিনপোশ হয়ে যায়। অর্থাৎ আর বাইরে বের না হয়। [আলফিতান লিনুআঈম বিন হাম্মাদ, বর্ণনা নং-১৭৯৬]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ، وَتَتَقَارَبَ الْأَسْوَاقُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ ” قِيلَ: وَمَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: ” الْقَتْلُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অচিরেই কিয়ামতের পূর্বে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। অধিকহারে মিথ্যা বলা হবে। কাছাকাছি বাজার শপিংমল হতে থাকে। সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে। খুনাখুনি বৃদ্ধি পাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৭২৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৭১৮]
পশুপাখি ও জড়পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলবে
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُكَلِّمَ السِّبَاعُ الإِنْسَ، وَحَتَّى تُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَتُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ مِنْ بَعْدِهِ
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, যতদিন না হিংস্র প্রাণীরাও মানুষের সাথে কথোপকথন করেছে ততদিন কিয়ামত সংঘঠিত হবে না। এমনকি তখন একজনের লাঠির মাথা, জুতার ফিতাও তার সাথে কথা বলবে এবং স্বীয় উরু দেশ বলে দিবে তার পরিবার তার অনুপস্থিতিতে কি করছে। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২১৮১, ইফাবা-২১৮৪]
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিয়ামত সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবাণী বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বাস্তবে পরিণত করে ফেলেছে ইতোমধ্যে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক সময় উপরোক্ত হাদীস বলেছেন, যখন আধুনিক টেকলোনজীর কথা কল্পনাও করা যেতো না।
কিন্তু বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক চিপ (Electronic Chip) এর বর্তমান যুগ নবীজীর কথাকে শতভাগ সত্য হওয়ার প্রমাণ দিচ্ছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এমন সব ইলেক্ট্রনিক চিপ বা ডিভাইস আবিস্কার করা হয়েছে। যা দেখতে খুবই ছোট। কিন্তু তাতে ট্রান্সমিশন থাকে। থাকে মেমোরীও। তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ফিট করে রাখা যায়। জুতায়, কাপড়ের বোতামে, আংটিতে এমন কি শরীরের ভিতরেও ফিট করা যায়।
যার ফলে অনেক দূর থেকে উক্ত স্থানের অবস্থান, কথোপকথন শোনা যায়। এমন কি পরবর্তীতে কম্পিউটারে মেমোরী লোড করে ডাটা ডাউনলোড করে তার অবর্তমানে কী কী হয়েছে সবই জানা যাবে।
পশ্চিমা বিশ্বে প্রাণীদের কথা বুঝা ও তাদের সাথে কথা বলার জন্য নিয়মিত গবেষণা চালু রয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক টিভি চ্যানেলে নিয়মিতই তাদের গবেষণা ও ফলাফলগুলো প্রকাশ করা হয়।
রজম ও দাজ্জালের আগমণ অস্বিকার
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ ” الرَّجْمَ حَقٌّ فَلَا تُخْدَعُنَّ عَنْهُ , وَآيَةُ ذَلِكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجَمَ وَرَجَمَ أَبُو بَكْرٍ وَرَجَمْنَا بَعْدَهُمَا , وَإِنَّهُ سَيَكُونُ أُنَاسٌ يُكَذِّبُونَ بِالرَّجْمِ , وَيُكَذِّبُونَ بِالدَّجَّالِ وَيُكَذِّبُونَ بِطُلُوعِ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَيُكَذِّبُونَ بِعَذَابِ الْقَبْرِ وَيُكَذِّبُونَ بِالشَّفَاعَةِ وَيُكَذِّبُونَ بِقَوْمٍ يُخْرَجُونَ مِنَ النَّارِ بَعْدَمَا امْتُحِشُوا
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত উমর রাঃ বলেন, হে লোকসকল! নিশ্চয় ‘রজম’ প্রমাণিত। সুতরাং তোমরা এ ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থেকো না। এর প্রমাণ হলো, নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন। আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ ও রজম করেছেন। আমরাও তাদের পর রজম করেছি। কিন্তু অচিরেই তোমাদের পর এমন এক দল আসবে, যারা রজমের বিধান অস্বিকার করবে। দাজ্জালকে অস্বিকার করবে। কিয়ামতের আগে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠাকে অস্বিকার করবে। কবরের আযাবকে অস্বিকার করবে। হাশরের ময়দানের শুপারিশ অস্বিকার করবে। এমন লোকদের কথাও অস্বিকার করবে, যাদের জাহান্নামে কৃতকর্মের শাস্তির পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। [মুসনাদুল হারেছ, হাদীস নং-৭৫১]
বিবাহিত ব্যাভিচারীদের শরয়ী শাস্তি ‘রজম’। বর্তমানে এ বিধানের বিরুদ্ধে অমুসলিমরা শুধু নয়, বরং তথাকথিত মুসলিম নামধারী সেক্যুলাররাও ইংরেজী ও বাংলায় গ্রন্থ রচনা করেছে।
কথিত এক কবি হাসান মাহমুদতো ‘শরীয়া কি বলে আমরা কী করি?’ নামে ইসলামের অনেক বিধানের সাথে রজম এর বিধান অস্বিকারকে কুরআন ও হাদীসের আলোকেই প্রমাণ করার ব্যর্থচেষ্টা করেছে।
প্রয়াত ভণ্ড পীর দেওয়ানবাগী কবরের আযাব ও হাশর নশর অস্বিকার করে বক্তৃতা দেয়ার সাথে সাথে বই লিখেছে।
এদিকে কথিত হেযবুত তাওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বাইযীদ খান পন্নী ‘দাজ্জাল’ নামক বই লিখে হাদীসে বর্ণিত দাজ্জাল অস্বিকার করে এক নতুন দাজ্জালীর সূচনা করেছে।
অপরদিকে আমির হামজা নামের এক জাহেল বক্তা ভরা মজমায় বক্তব্য দিয়ে বলে যে, গোনাহগার মুসলিম জাহান্নামে শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে মুক্ত হবার বিষয়টি নাকি হাদীসের নামে জালিয়াতি। এটা ভুল কথা। বরং যে একবার জাহান্নামে যাবে, সে শুধু জাহান্নামেই থাকবে। জাহান্নাম থেকে মুক্ত হবার কোন সুযোগ নেই।
এর মানে হযরত উমর রাঃ এর ভবিষ্যৎবাণীকৃত প্রতিটি কথাই বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।
বাদী তার মনীবকে জন্ম দিবে
হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত।
قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ
আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮, ইফাবা-১]
বাদী মনীবকে জন্ম দেবার ব্যাখ্যা কী?
১ এর দ্বারা মায়ের সাথে দুর্ব্যহার করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ লোকেরা নিজের মায়ের সাথে এমন খারাপ আচরণ করবে, এমন দুর্ব্যবহার করবে, যেমন মালিক তার কর্মচারীর সাথে করে থাকে। মারধর করা, গালাগাল করা, তার দ্বারা খিদমাত নেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তান নিজ মায়ের সাথে দাসীর মত আচরণ করবে।
২ বাস্তবিকই বাঁদী-দাসীর সন্তান বাদশা হবে। ফলে উক্ত দাসী মা হওয়ার পরও তার সন্তান বাদশা হওয়ায় তার অধীনত হবে। এ অর্থে হাদীসের বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য বাকি থাকে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অসংখ্য দাসীর সন্তান পরবর্তীতে বাদশা ও সম্রাট গত হয়েছে। যেমন বাদশা মামুনর রশীদের মা দাসী ছিলেন।
৩ উম্মে ওয়ালাদ বিক্রির রেওয়াজ হবে। উম্মে ওয়ালাদ বলা হয়, যার গর্ভ থেকে মনীবের ঔরষে সন্তান জন্ম নিয়েছে।
এমন উম্মে ওয়ালাদকে বিক্রি করা হারাম। কিন্তু কিয়ামতের পূর্ব সময়ে এমন উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি শুরু হবে। ফলে বিক্রি হতে হতে এমনও হয়ে যাবে যে, উক্ত বাদীর সন্তানই তাকে দাসী হিসেবে ক্রয় করে নিবে। এ ব্যাপারে সন্তানের কোন খবরও থাকবে না যে, সে তার মাকেই দাসী হিসেবে ক্রয় করে নিল। সে তার থেকে দাসীর মতই খিদমাত নিবে। [ফাতহুল বারী-১/১২২, দরসে মুসলিম, মাওলানা তাক্বী উসমানী-২৪৬]
উঁচু বিল্ডিং উঠবে
قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ
আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮, ইফাবা-১]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَوْمًا بَارِزًا لِلنَّاسِ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى السَّاعَةُ فَقَالَ ” مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَلَكِنْ سَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّتَهَا فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا كَانَتِ الْحُفَاةُ الْعُرَاةُ رُءُوسَ النَّاسِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا تَطَاوَلَ رِعَاءُ الْغَنَمِ فِي الْبُنْيَانِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের সাথে বসা ছিলেন। তখন তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, ইয়া রাসূলূাল্লাহ! কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? তিনি বলেনঃ জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞাত নয়। তবে আমি তোমাকে এর কতক আলামত সম্পর্কে অবহিত করবো। যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে, এটি কিয়ামতের একটি আলামত। যখন নগ্নপদ ও নগ্ন দেহবিশিষ্ট লোকেরা জনগণের নেতা হবে, এটি কিয়ামতের একটি আলামত। যখন মেষপালের রাখালেরা সুরম্য অট্টালিকায় বসবাস করবে। এগুলো হলো কিয়ামতের আলামত। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০৪৪]
عَنْ مَيْمُونَةَ، قَالَتْ: قَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ: «مَا أَنْتُمْ إِذَا مَرَجَ الدِّينُ، وَسُفِكَ الدَّمُ، وَظَهَرَتِ الزِّينَةُ، وَشَرُفَ الْبُنْيَانُ، وَاخْتَلَفَ الْأَخَوَانُ، وَحُرِّقَ الْبَيْتُ الْعَتِيقُ
হযরত মায়মূনা রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদা করেন, তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে। রক্ত ঝরানো হতে থাকবে। রূপচর্চা বৃদ্ধি পাবে। বিল্ডিংগুলো উঁচু উঁচু হবে। ভাইদের মাঝে মতপার্থক্য হবে। বাইতুল্লাহ শরীফকে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। [আলমু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৪, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১২৩৭১]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيمَتَانِ، يَكُونُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَتُهُمَا وَاحِدَةٌ، وَحَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ، وَحَتَّى يُقْبَضَ العِلْمُ وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ: وَهُوَ القَتْلُ، وَحَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ المَالُ فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ المَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ، وَحَتَّى يَعْرِضَهُ عَلَيْهِ، فَيَقُولَ الَّذِي يَعْرِضُهُ عَلَيْهِ: لاَ أَرَبَ لِي بِهِ، وَحَتَّى يَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي البُنْيَانِ، وَحَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: يَا لَيْتَنِي مَكَانَهُ، وَحَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ – يَعْنِي آمَنُوا – أَجْمَعُونَ، فَذَلِكَ حِينَ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ، أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا،
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে না যতক্ষণ দু’টি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষণ ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাচারী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষণ ইল্ম উঠিয়ে নেয়া না হবে। আর ভূমিকম্প অধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে) ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আর হারজ ব্যপকতা লাভ করবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষণ তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে।
তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সদাকাহ কে গ্রহণ করবে- এ নিয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ আনা হবে সে বলবে আমার এ মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষণ মানুষ উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণের জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ না হবে। আর যতক্ষণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষণ সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে এবং সকল লোক তা দেখবে এবং সেদিন সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতোপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭১২১]