প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / তোকে তালাক দিলাম তিনবার বললে কয় তালাক পতিত হয়?

তোকে তালাক দিলাম তিনবার বললে কয় তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব।

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আমি মোঃ …….., পিতাঃ ………., গ্রামঃ তেপুকুরিয়া, পোষ্টঃ বাঘা, উপজেলাঃ বাঘা, জেলাঃ রাজশাহী।

জনাব, গত কয়েকদিন আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হয়, এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে যে আমি তোমার ভাত খাবনা, তোমার সংসার করবনা। এ কথা সে বারবার বলতে থাকে। আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও সে একই কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে আমিও রাগান্বিত হয়ে তাকে বলে ফেলি যে, যা তোকে তালাক দিলাম, তালাক দিলাম, তালাক দিলাম। এভাবে তিনবারই আমি এ কথা বলি। ( তবে এ কথা বলার দ্বারা আমার তাকে পরিত্যাগ করা নিয়াত ছিলনা।)

এখন আমরা উভয়েই অনুতপ্ত। আমরা আাবার স্বাভাবিক পরিবার জীবনে ফিরে এসে সংসার করতে চাই। প্রকাশ থাকে যে, আমার ৪ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংসার জীবনে ফিরে আসতে হলে করনীয় বিষয় কোরআন-হাদিসের হাওয়ালা সহ জানিয়ে উপকৃত করনে।

বিনীত মোঃ ……..  বাঘা,

রাজশাহী।

(বিঃদ্রঃ প্রশ্নকারীর নাম মুছে দেয়া হয়েছে)

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক শব্দ ইচ্ছেয় ও অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে দিলে তালাক হয়ে যায়।

সেই হিসেবে উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্ত্রী তিন তালাকে মুগাল্লাজা হয়ে আপনার উপর হারাম হয়ে গেছে।

সুতরাং তার সাথে ঘর সংসার করা আপনার জন্য জায়েজ নয়।

তালাকের পর ইদ্দত শেষে যদি অন্যত্র তার বিয়ে হয়। সেখানে ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর দ্বিতীয় স্বামী কোন কারণে, মারা যায়, বা তাকে তালাক দেয়, তাহলে ইদ্দত শেষে আপনি আবার বিয়ে করতে পারবেন।

এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পদ্ধতি নেই।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়,তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}


وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি ‎এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি ‎মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ ‎পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে ‎আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ‎ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯,সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-১৪৭২০,সুনানে দারা কুতনী,হাদীস নং-১৪৩}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

 

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস