প্রশ্ন
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর দ্বারা কুরবানীর (নিজ মালিকানা) পশু জবাই (শিকার) করলে কুরবানী আদায় হবে কিনা?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরবানীর পশুকে যদি স্বাভাবিকভাবে তথা গলায় ছুড়িয়ে চালিয়ে রগ কর্তন করার মাধ্যমে জবাই করার সুযোগ থাকে, তাহলে তাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে জবাই করালে সেই পশু হালাল হবে না।
যখন পশুই হালাল হবে না, সুতরাং “কুরবানী যে হবে না” তা বলাই বাহুল্য।
الثانى الجرح فى أى موضع كان من البدن وهذا كالبدل عن الأول، لأنه لا يصار إليه عند العجز عن الأول، وإنما كان كذالك لأن الأول، أبلغ فى إخراج الدم من الثانى فلا يترك إلا بالعجز عنه ويكتفى بالثانى للضرورة (البحر الرائق-8\306)
তবে যদি পশুকে কোনভাবেই ধরা যাচ্ছে না। তাহলে বিসমিল্লাহ বলে তীর ছুড়ে বা শিকারী কুকুরকে আল্লাহর নামে উক্ত পশুকে আঘাত করার জন্য ছাড়া হবে। তারপর যদি তীরের আঘাতে বা শিকারী কুকুরের কামড়ে পশুটির শরীরে এমন ক্ষত হয় যে, যদ্দারা তার ভিতরের রক্ত বের হয়ে আসে, এবং কুকুর সেই পশুর কোন অংশ না খায়, তাহলে উক্ত পশুটি হালাল হবে।
পশুটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত বের হয়ে মারা গেলে খাওয়া জায়েজ হবে। আর যদি মারা না যায়, তাহলে তাকে জবাই করা আবশ্যক। জবাই ছাড়া তা খাওয়া হালাল হবে না।
আর যদি এমন ক্ষত যদ্দারা রক্ত বের না হয় তীর বা কুকুরের কামড়ে, বরং তীরের আঘাতেই মারা যায়, বা কুকুরের আঘাতে মারা যায় কিন্তু ভিতর থেকে রক্ত বের না হয়, কিংবা শিকার করার পর কুকুর পশুটিকে খেতে শুরু করে, তাহলে উক্ত পশু হালাল হবে না।
যদি পশু হালাল না হয়, তাহলে কুরবানীও হবে না।
عَنْ أَبِي الْعُشَرَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا تَكُونُ الذَّكَاةُ، إِلَّا فِي الْحَلْقِ، وَاللَّبَّةِ قَالَ: «لَوْ طَعَنْتَ فِي فَخِذِهَا لَأَجْزَأَكَ»
আবুল ‘উশারা (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কণ্ঠনালী ও বুকের উপরিভাগের মাঝখান ছাড়া কি যবেহ হয় না? তিনি বলেনঃ তুমি যদি তার উরুতে বর্শা ঢুকিয়ে দিতে পারো তবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩১৮৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৮১]
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ: أُرْسِلُ كِلاَبِي المُعَلَّمَةَ؟ قَالَ: «إِذَا أَرْسَلْتَ كِلاَبَكَ المُعَلَّمَةَ، وَذَكَرْتَ اسْمَ اللَّهِ، فَأَمْسَكْنَ فَكُلْ، وَإِذَا رَمَيْتَ بِالْمِعْرَاضِ فَخَزَقَ فَكُلْ»
‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম- আমি আমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ছেড়ে দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন তুমি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো ছেড়ে দাও এবং যদি সে কোন শিকার ধরে আনে, তাহলে তা খাও। আর যদি তীক্ষ্ম তীর নিক্ষেপ কর এবং এতে যদি শিকারের দেহ ফেড়ে দেয়, তবে তা খাও। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৩৯৭]
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا نُرْسِلُ الكِلاَبَ المُعَلَّمَةَ؟ قَالَ: «كُلْ مَا أَمْسَكْنَ عَلَيْكَ» قُلْتُ: وَإِنْ قَتَلْنَ؟ قَالَ: «وَإِنْ قَتَلْنَ» قُلْتُ: وَإِنَّا نَرْمِي بِالْمِعْرَاضِ؟ قَالَ: «كُلْ مَا خَزَقَ، وَمَا أَصَابَ بِعَرْضِهِ فَلاَ تَأْكُلْ»
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে শিকারে পাঠিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কুকুরগুলো তোমার জন্য যেটি ধরে রাখে সেটি খাও। আমি বললামঃ যদি ওরা হত্যা করে ফেলে? তিনি বললেনঃ যদি ওরা হত্যাও করে ফেলে। আমি বললামঃ আমরা তো ফলার দ্বারাও শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ সেটি খাও, যেটি তীরে যখম করেছে; আর যেটি তীরের পার্শ্বের আঘাতে মারা গেছে সেটি খেও না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৭৭]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমু
ইমেইল– ahlehaqmedia201