প্রশ্ন
হানাফি মাযহাব এবং শাফেয়ি মাযহাবের ২জন ব্যক্তি ১টি পশুর কুরবানিতে শরিক হয়েছে এমন পশু যবেহকারী যদি ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তাহলে উক্ত পশুর হুকুম কি হবে? এবং তার কারণ কি তা দলীল সহ জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের মতে পশু হালাল হবার জন্য জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক। ইচ্ছেকৃত বিসমিল্লাহ ছাড়া জবাইকৃত পশু হারাম।
যদিও শাফেয়ী মাযহাব মতে জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। তাই তাদের মতে বিসমিল্লাহ ছাড়া পশু জবাই করলেও উক্ত পশু তাদের মতে হালাল। [আল মাজমূ শরহুল মুহাজ্জাব-৮/৪১০]
ফিক্বহী অনেকগুলো মূলনীতির উপর ভিত্তি করে উক্ত পশুটি হালাল হয় না। যেহেতু ইচ্ছেকৃত বিসমিল্লাহ ছাড়া জবাইকৃত পশু হালাল হয় না, সেই হিসেবে কুরবানীটিও শুদ্ধ হবে না।
মূলনীতি নং–১
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা উচিত।
عَنْ أَبِي الحَوْرَاءِ السَّعْدِيِّ، قَالَ: قُلْتُ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ: مَا حَفِظْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ،
আবূল হাওরা আস-সাদী (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কথাটি মনে রেখেছিঃ যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫১৮]
মূলনীতি নং-২
এক বিষয়ে হালাল ও হারাম একসাথে হয়ে গেলে, হারাম হওয়াটা প্রাধান্য পায়।
14 – قَاعِدَة إِذا اجْتمع الْحَلَال وَالْحرَام أَو الْمحرم والمبيح غلب الْحَرَام وَالْمحرم (شن)
যখন হালাল ও হারাম একত্র হয়, বা হালালকারী ও হারামকারী একসাথে আসে, তখন হারাম ও হারামকারী বিষয়টি প্রাধান্য পায়। [কাওয়ায়েদুল ফিক্বহ, কায়েদা নং-১৪]
মূলনীতি নং-৩
হানাফী মাযহাবের অনুসারী ব্যক্তির জন্য অন্য মাযহাবের অনুসারী ইমামের পিছনে ততক্ষণ ইকতিদা শুদ্ধ হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি এমন কোন কাজ না করেন, যদ্বারা হানাফী মাযহাব অনুপাতে নামায ভেঙ্গে যায়।
যদি তিনি এমন কোন কাজ করেন যদ্বারা হানাফী মাযহাব অনুপাতে নামায ভেঙ্গে যায়, তাহলে উপরোক্ত ইক্তিদা শুদ্ধ হবে না।
সেই হিসেবে কুরবানীর ক্ষেত্রেও একই বিধান আরোপিত হবে।
যেহেতু হানাফী মাযহাব মতে বিসমিল্লাহ ছাড়া পশু জবাই করলে পশুটি হালাল হয় না,তাই উক্ত শরীকানা কুরবানী বিশুদ্ধ হবে না।
وأما الاقتداء بالمخالف فى الفروع….. فيجوز مالم يعلم منه ما يفسد الصلاة على اعتقاد المقتدى عليه الإجماع (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الإمامة-2\302)
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ۗ [٦:١٢١]
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। [সূরা আনআম-১২১]
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ ۗ [٢٢:٣٤]
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। [সূরাতুল হজ্জ-৩৪]
فَكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُم بِآيَاتِهِ مُؤْمِنِينَ [٦:١١٨]
অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর বিধানসমূহে বিশ্বাসী হও। [সূরা আনমাম-১১৮]
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ المُعَلَّمَ فَقَتَلَ فَكُلْ، وَإِذَا أَكَلَ فَلاَ تَأْكُلْ، فَإِنَّمَا أَمْسَكَهُ عَلَى نَفْسِهِ» قُلْتُ: أُرْسِلُ كَلْبِي فَأَجِدُ مَعَهُ كَلْبًا آخَرَ؟ قَالَ: «فَلاَ تَأْكُلْ، فَإِنَّمَا سَمَّيْتَ عَلَى كَلْبِكَ وَلَمْ تُسَمِّ عَلَى كَلْبٍ آخَرَ»
‘আদী ইবনু হাতিম (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর সম্পর্কে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ তুমি যখন তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর শিকার ধরতে ছেড়ে দাও, তখন সে হত্যা করলে তা তুমি খেতে পার। আর সে তার অংশবিশেষ খেয়ে ফেললে তুমি তা খাবে না। কারণ সে তা নিজের জন্যই শিকার করেছে। আমি বললামঃ কখনো কখনো আমি আমার কুকুর (শিকারে) পাঠিয়ে দেই, অতঃপর তার সঙ্গে অন্য এক কুকুরও দেখতে পাই (এমতাবস্থায় শিকারকৃত প্রাণীর কী হুকুম)? তিনি বললেনঃ তবে খেও না। কারণ তুমি বিসমিল্লাহ্ বলেছ কেবল তোমার কুকুরের বেলায়, অন্য কুকুরের বেলায় বিসমিল্লাহ্ বলনি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৫]
ومن ذلك الورع عن متروك التسمية وإن لم يختلف فيه قول الشافعي رحمه الله لأن الآية ظاهرة في إيجابها والأخبار متواترة فيه فإنه صلى الله عليه وسلم قال لكل من سأله عن الصيد إذا أرسلت كلبك المعلم وذكرت عليه اسم الله فكل
ونقل ذلك على التكرر وقد شهر الذبح بالبسملة
وكل ذلك يقوي دليل الاشتراط ولكن لما صح قوله صلى الله عليه وسلم المؤمن يذبح على اسم الله تعالى سمى أو لم يسم
واحتمل أن يكون هذا عاماً موجباً لصرف الآية وسائر الأخبار عن ظواهرها ويحتمل أن يخصص هذا بالناسي ويترك الظواهر ولا تأويل وكان حمله على الناس ممكنا تمهيداً لعذره في ترك التسمية بالنسيان وكان تعميمه وتأويل الآية ممكناً إمكاناً أقرب رجحنا ذلك ولا ننكر رفع الاحتمال المقابل له فالورع عن مثل هذا مهم واقع في الدرجة الأولى (احياء علوم الدين لامام الغزالى الشافعى-2\115-116)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমু
ইমেইল– ahlehaqmedia201