প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের ধোঁকাবাজীঃ এক তাবলীগী ভাইকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের ধোঁকাবাজীঃ এক তাবলীগী ভাইকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

بسم الله الرحمن الرحيم

গরমকাল। সপ্তাহের প্রথম সকাল। আমি ক্লাস করাতে যাবো বলে ঘর থেকে বের হলাম।

দেখি দরজার বাইরে এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। খুব আদবের সাথে আমাকে সালাম দিল। জিজ্ঞেস করল আমার নাম কি? তার দু’চোখ বেয়ে অশ্র“ ঝরছিল।

বলতে লাগলঃ হুজুর! আমি বহুত পেরেশানীতে আছি। আপনি একটু সময় বের করে আমার আবেদনটা একটু শুনুন।

আমি তাকে আমার সাথে দরসগাহে নিয়ে এলাম। সে তার কাহিনী বলতে শুরু করলঃ “আমি খুব বদনসীব ও গোনাহগার মানুষ। আমি এমন এক কলেজে পড়তাম যেটি অমুসলিমদের। সেখানে আমরা মাত্র ছয়জন ছিলাম মুসলমান। আমাদের মাঝে একজনের তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পর্ক ছিল। তার দাওয়াতে আমরাও তাবলীগের কাজে শরীক হয়ে গেলাম।

আল্লাহর রহমাতে আমরা নামাযে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। সর্বাত্মক চেষ্টা থাকতো সব কাজ ফেলে হলেও জামাতের সাথে নামায পড়ার। এমনকি তাকবীরে উলার জন্যও ছিল আমাদের জোর প্রচেষ্টা। নিজেদের ভাই-বোন এবং এলাকার বন্ধু বান্ধবদেরও দাওয়াত দিতাম। এতে করে আল্লাহর রহমতে অনেক সফলতাও আসছিল। তাদের মাঝে অনেকে নামায পড়া শুরু করে দেয়। সেই সাথে অতিক্রান্ত কাজা নামাযও আদায় করতে শুরু করে দেয়। সবাই অতীত ভুলের জন্য আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা প্রার্থনা করতো। তওবা করতো অতীত গোনাহের”।

এসব বলতে বলতে যুবকের দু’চোখ বেয়ে অঝর ধারায় অশ্র“ ঝরছিল।

আমি যুকবটির কথা শুনে খুবই পেরেশান হচ্ছিলাম। মনে মনে দুআ করছিলাম যে, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুসলমানের মনে তাঁর ইবাদতের এমন জযবা ও আগ্রহ মনে বসিয়ে দেন। وما ذلك على الله عزيز

যুবকটি বলতে লাগলঃ “পরশু দিন আমরা গাড়িতে করে তাবলীগে মার্কাজে যাচ্ছিলাম। গাড়িতে কিছু পুরাতন বন্ধদের সাথে দেখা হল। মেডিকেলে আমরা এক সাথে পড়তাম। প্রাথমিক কথাবার্তার পর তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করল “কোথায় যাচ্ছিস?” আমরা বললামঃ “তাবলীগের মার্কাজে। আমরা বললামঃ চল আমাদের সাথে মার্কাজে যাই”।
তারা বলতে লাগলঃ আরে তোমাদের নামাযইতো হয় না।

আমরা বললামঃ কেন?

– তোমরা কি ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়?

– না, পড়ি না।

তারা পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে তাতে লিখলঃ “তোমাদের আক্বিদা হল ফাতিহা ছাড়া নামায হয়ে যায়”। এটা লিখার পর আমাকে বলল এর উপর দস্তখত করে দাও। আমি তাতে দস্তখত করে দিলাম। সে আমাকে বললঃ “তুমি এমন হাদীস আনবে, যার অর্থ হল ফাতিহা ছাড়া নামায হয়ে যায়। আর আমি সেসব হাদীস আনবো, যার অর্থ হবে ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না”।

এ কথোপথনের পর আমি মার্কাজে চলে গেলাম। বয়ান শুনলাম। তারপর কয়েকজন বড়দের এ কাগজটি দেখালাম। তাদের বললাম এ কাগজের বক্তব্য অনুপাতে একটি হাদীস লিখে দিতে। তারা আপনার নাম বলে বললেন যে, আপনার কাছে এসে এ মাসআলা বুঝে নিতে। আমি কাল জুমআর দিন আপনার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি অন্য কোথায় যেন জুমআ পড়াতে চলে গিয়েছিলেন। আমি যখন জুমআর নামায পড়ে ঘরে আসলাম। তখন দেখি আমার সেই কলেজ সাথী আরো মৌলবী নিয়ে আমার বাসায় এসে বসে আছে। আমিও তাদের সাথে বসে গেলাম। এক মৌলবী সাহেব সালাম কালাম ছাড়াই খুবই ভয়ানক উচ্চ আওয়াজে বলতে লাগলঃ যদি কোন হানাফী একটি সহীহ সরীহ, মারফু, গায়রে মাজরূহ হাদীস দেখাতে পারে যে, রাসূল সাঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে নিষেধ করেছেন, তাহলে আমি ফাতিহার একেক হরফের উপর দশ টাকা করে পুরস্কার দিব। যার সংখ্যা হাজার টাকা হয়ে যাবে।

আরেক মৌলবী বলতে লাগলঃ একেতো প্রথমে তুমি নামাযই পড়তে না। বেনামাযী ছিলে। এখন নামায পড়ছো, কিন্তু সেই বেনামাযীই রয়ে গেলে। তোমাদের নামায বাতিল এবং বেকার। তোমাদের নামায আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। শুধু তোমাদের নামায নয়, তোমাদের ধর্মও সন্দেহযুক্ত হয়ে গেছে। যদিও আমরা ও তোমরা নবীজী সাঃ এরই পড়ি। কিন্তু আমরা বলি যে, কালিমা যার পড় কথা তারই মান। আর তোমরা বলে থাক যে, কালিমা নবীজী সাঃ এর পড়। আর কথা মান ইমাম আবু হানীফার। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। কিন্তু ইলমে হাদীসে তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন। এজন্য কিয়াস করে মাসআলা বলতেন। কিন্তু সাথে সাথে একথাও বলে দিতেন যে, যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, তখন আমার কিয়াসকে দেয়ালে নিক্ষেপ করে তোমরা রাসূল সাঃ এর হাদীসের উপর আমল করবে।

রাসূল সাঃ এর সহীহ হাদীস হল, “ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না”। এ হাদীস ইমাম আবু হানীফা রহঃ পাননি। তাই তিনি কিয়াস করে বলে দিলেন যে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়বে না। এখন যেহেতু আমরা এ সহীহ হাদীস পেয়ে গেলাম, তখন এ সহীহ হাদীসের উপর আমল করার দ্বারা রাসূল সাঃ ও খুশি হবেন, সেই সাথে ইমাম আবু হানীফা রহঃ ও। আর যদি এ হাদীসের উপর আমল না করা হয়, তাহলে শুধু রাসূল সাঃ ই অসন্তুষ্ট হবেন না, সেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ ও অসন্তুষ্ট হবেন। কেননা, তিনি সহীহ হাদীস পেলে তার কথা ছেড়ে দিয়ে রাসূল সাঃ এর কথাই যেন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু হানাফীদের হালাত হল-

না খোদা মিলেছে না মুর্তি মিলেছে,
না এই দিকে পথ না ঐ দিকে।

তোমাদের সারা জীবনের একটি নামাযও কবুল হয়নি। তোমাদের নামায দ্বারা আল্লাহও অসন্তুষ্ট, তার রাসূল সাঃ ও অসন্তুষ্ট। অসন্তুষ্ট ইমাম আবু হানীফা রহঃ ও। এখনো তওবার পথ খোলা আছে। তওবা কর।
যুবকটি ঘটনাটি শেষ করে বলতে লাগলঃ “আসলেই আমরা নামায পড়া সত্বেও নামাযী নই? আসলেই আমাদের নামাযের প্রতি আল্লাহ ও রাসূল সাঃ অসন্তুষ্ট? আমার সকল নামাযই কি বরবাদ?” একথা বলে যুবকটি আবার কাঁদতে শুরু করে দিল। বলতে লাগলঃ দুনিয়াব্যাপী অধিকাংশ নামাযী মুসলমানরা আসলেই কি বেনামাযী? আমার নামাযের কী হবে? আল্লাহর কসম লাগে আমাকে এ মাসআলা বুঝিয়ে দিন।”

আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললামঃ “আরে ভাই! এ মাসআআ এত কঠিন নয়, যেমন তুমি মনে করছ। আসল কথা হল, মাসআলা এক সুরার নয়, বরং পূর্ণ কুরআনের। রাসূল সাঃ যেহেতু দ্বীনে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে গেছেন। তাই তিনি পূর্ণাঙ্গ কুরআনের মাসআলা বুঝিয়ে গেছেন। এটাতো আপনি জানেন যে, নামায পড়ার পদ্ধতি দুইটি। যথা- হয়তো আপনি একাকী নামায পড়বেন, যেমন সুন্নত, নফল ইত্যাদি। অথবা আপনি জামাতের সাথে নামায পড়বেন। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায, জুমআ, ঈদের নামায ইত্যাদি। এছাড়া আর কোন পদ্ধতি নেই।

একাকী নামায পড়ার পদ্ধতি

ইসলামের শুরু লগ্নে তাহাজ্জুদ নামায পড়া ফরজ ছিল। তাহাজ্জুদ নামায লোকেরা ঘরে একা একা পড়ে নিত। সহীহ মুসলিমের হাদীস অনুপাতে এটি এক বছর ফরজ ছিল। তারপর এর ফরজিয়্যত রহিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার বিধান অবতীর্ণ হল- فاقرؤ ما تيسر من القرآن (المزمل-২০)

তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ মনে হয় পড়। {সূরা মুজ্জাম্মিল-২০)

এ আয়াতে পূর্ণ কুরআন বিদ্যমান। যেমন পানির প্রতিটি ফোটাই পানি। তেমনি কুরআনের প্রতিটি আয়াতকেই কুরআন বলা হয়। এ আয়াত দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, নামাযে মুতলাকানভাবে কুরআন পড়া ফরজ। এ আয়াতে কোন সুনির্দিষ্ট আয়াত বা সূরার কথা বলা হয়নি।

কোথাও মজলিস হলে, কোন কারী সাহেবকে যদি বলা হয় যে, আপনি কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করুন। কারী সাহেব যদি জিজ্ঞেস করে যে, কোত্থেকে পড়বো? তখন আপনি যদি বলেন যে, যেখান থেকে তোমার সহজ মনে হয়, সেখান থেকে পড়। তাহলে কারী সাহেব পূর্ণ কুরআনের যেখান থেকেই পড়ুক না কেন আপনার উদ্দেশ্য হাসীল হয়ে যাবে।
এবার খেয়াল করুন রাসূল সাঃ একা একা নামায পড়ার কী পদ্ধতি শিখিয়েছেন?

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাঃ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ল। নামায শেষে রাসূল সাঃ কে সালাম দিল। রাসূল সাঃ সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে যাও! এবং আবার নামায পড়, কেননা, তুমি আসলে নামায পড়নি। লোকটি ফিরে গেল, গিয়ে পূর্বের মতই আবার নামায পড়লো। তারপর এসে রাসূল সাঃ কে সালাম দিল। রাসূল সাঃ বললেনঃ তুমি ফিরে যাও! তুমি মূলত নামায পড়নি। তিনবার এমন হওয়ার পর লোকটি বললঃ ঐ সত্বার কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আর এর চেয়ে ভালভাবে নামায আদায় করতে পারি না। আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দেন। তখন রাসূল সাঃ বললেনঃ তুমি যখন নামাযে দাঁড়াও তখন তাকবীর বলবে, তারপর তোমার কাছে কুরআনের যতটুকু সহজ মনে হবে তাই তিলাওয়াত করবে। তারপর রুকু করবে ততক্ষণ পর্যন্ত যে, তোমার মনে হবে যে, তুমি রুকুকারী। তারপর মাথা তুলবে। সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সেজদা করবে ধীরস্থিরভাবে। এরপর সেজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সেজদা করবে। তারপর পূর্ণ নামায আদায় করবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৬০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯১১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৮৯০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৬১}

রাসূল সাঃ একাকী নামায আদায়কারীর জন্য যেমন তাকবীর, রুকু ও সেজদার হুকুম দিয়েছেন, তেমনি কুরআনে কারীম তেলাওয়াতেরও হুকুম দিয়েছেন। এ ঘটনাটি হযরত রেফাআ বিন রাফেজ রাঃ ও বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে যে, তুমি কিবলার দিকে মুখ করবে, তখন তাকবীর বলবে, তারপর সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর [কুরআনে কারীমের] যা জান পড়। {মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৪০}

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেনঃ আমাদের আদেশ দেয়া হল যে, সূরা ফাতিহা ও যা কিছু [কুরআনে] সহজ তা যেন তিলাওয়াত করি। {মুসনাদে ইমামে আজম-৫০, আবু দাউদ-১/১১৮, মুসনাদে আহমাদ-৩/৩০, সহীহ ইবনে হিব্বান-৪/১৪০, মুসনাদে আবী ইয়ালা-২/৪১৭}

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় রাসূল সাঃ আদেশ দিয়েছেন যে, মদীনায় ঘোষণা করে দাও যে, কুরআন পড়া ছাড়া নামায হয় না। অন্তত সূরা ফাতিহা ও তা ছাড়া অতিরিক্ত হোক। {মুসনাদে ইমামে আজম-৫৮, আবু দাউদ-১/১১৮, কিতাবুল কিরাত}

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, ঐ নামায যাতে সূরায় ফাতিহা পড়া হয় না সেটি অপূর্ণাঙ্গ, তবে যদি ইমামের পিছনে নামায পড়ে তাহলে ভিন্ন কথা। {কিতাবুল কিরাত-১৭১}
হযরত উবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ঐ ব্যক্তির নামায হয় না, যে সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে কুরআনের আরো কিছু অংশ না পড়ে।

এ হাদীসের রাবী ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহঃ বলেনঃ এ হাদীসটি একাকী নামায আদায়কারীর জন্য প্রযোজ্য। {আবু দাউদ-১/১১৯}
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ বলেনঃ এ হাদীসটি একাকী নামায আদায়কারীর জন্য প্রযোজ্য। {সুনানে তিরমিজী-১/৫৮}
উল্লেখিত হাদীসের আলোকে একাকী নামায আদায়কারীর বিষয়ে বুঝা গেল যে, নামাযে মুতলাকানভাবে কুরআন পড়া ফরজ। সুনির্দিষ্টভাবে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। সূরা ফাতিহার পর কুরআনের আরো কিছু অংশ পড়াও ওয়াজিব।

জামাতে নামায পড়ার পদ্ধতি

আল্লামা সুয়ুতী রহঃ “আলইতক্বান” কিতাবে লিখেছেন যে, “সূরায়ে মুজ্জাম্মিল তৃতীয় নাম্বারে নাজীল হয়েছে। সূরা ফাতিহা সাত নম্বরে, এবং সূরা আরাফ উনচল্লিশ নাম্বারে নাজীল হয়েছে। সূরায়ে আরাফের একটি আয়াত হল- وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ [٧:٢٠٤] অর্থাৎ আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। {সূরা আরাফ-২০৪}

হযরত আবূ মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ তোমরা কি জান? নামায কিভাবে আদায় করবে? রাসূল সাঃ রাসূল সাঃ [জামাতের সাথে নামায পড়ার পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার জন্য] বক্তৃতা করলেন। আমাদের নামায শিখালেন। সুন্নত শিখালেন। আমাদের [জামাতে] নামায আদায় পদ্ধতি শিখালেন। বললেনঃ এ হিসেবে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ “যখন তোমরা [জামাতে] নামায শুরু কর। তখন কাতার ভালভাবে সোজা করে নাও। তারপর তোমাদের মাঝ থেকে একজনকে ইমাম বানাবে। তারপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর যখন সে غير المغضوب عليهم ولا الضالين বলবে, তখন তোমরা আমীন বলবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের মোহাব্বত করবেন। তারপর যখন সে রুকু করবে, তখন তোমরা রুকু করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৩১}

আর কাতাদা থেকে সুলাইমান থেকে জারীর এর যে সূত্র রয়েছে সে সূত্রের হাদীসে অতিরিক্ত এসেছে যে, রাসূল সাঃ এরপর বলেনঃ আর যখন ইমাম কেরাত পড়ে, তখন তোমরা চুপ থাকবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৩২}

ইমাম মুসলিম রহঃ বলেনঃ এ হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসীন একমত। এ হাদীস হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকেও বর্ণিত। {সুনানে ইবনে মাজাহ-৬২} সে হাদীসও আমার কাছে সহীহ। {সহীহ মুসলিম-১/১৭৪, হাদীস নং-৯৩২}
এ হাদীসে রাসূল সাঃ জামাতে নামায পড়ার সময় তাকবীর, রুকু, সেজদা ইত্যাদিতে ইমামের সাথে মুক্তাদীও একই কাজ করবে মর্মে বলেছেন, কিন্তু কেরাতের ক্ষেত্রে ভিন্নতার কথা বলেছেন। বলেছেন যে, ইমাম কেরাত পড়বে, আর মুক্তাদী চুপ থাকবে।

এছাড়া হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতই তার জন্য কেরাত বলে ধর্তব্য হবে। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৭২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১০৫০, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৮০০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৫৭৯, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ-৯৬, মুসনাদে ইমামে আজম-৬১}

এর দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মুক্তাদীর নামায কেরাত ছাড়া আদায় হয় না। তবে ইমামের কেরাতটাই মুক্তাদীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়।

উদাহরণ

যেমন একথা স্বতসিদ্ধ যে, খুতবা ছাড়া জুমআর নামায হয় না। তবে খতীবের খুতবা পড়ার দ্বারা সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। কেউ খতীবের আওয়াজ শুনে বা না শুনে কিংবা কেউ খুতবা না শুনে শুধু নামাযের সময় এসে শরীক হয়ে গেল, যে না খতীবের খুতবা শুনেছে, না খতীবকে খুতবা দিতে দেখেছে, তার পক্ষ থেকেও খুতবা হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হয়। এরকম ঘটনা যে মুক্তাদীর হয়, সে কখনো একথা বলে না যে, সে খুতবা ছাড়াই জুমআর নামায পড়েছে।
সবাই একথাই বলে যে, আমরা খুতবাওয়ালা জুমআ পড়েছি। ঠিক তেমনি মাসআলা হল, কিরাত পড়া ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু জামাতের সাথে নামায পড়লে ইমামের কেরাত [ফাতিহা ও সূরা] সকল মুক্তাদীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। ইমামের কেরাত কারো কানে পৌঁছুক বা না পৌঁছুক। এমনকি যে মুক্তাদী ইমামের সাথে রুকুতে এসে শরীক হয়, যে ইমামের কেরাত না শুনেছে, না নিজে কেরাত পড়েছে তার রাকাতও গ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন মাযহাবের চার ইমাম। কোন মুক্তাদী একথা বলে না যে, সে কিরাত [সূরা ফাতিাহ ও অন্য সূরা] ছাড়া নামায আদায় করেছি। বরঞ্চ সবাই একথাই বলে থাকে যে, আমরা কেরাতসহ নামায পড়েছি।

এমনিভাবে মুআজ্জিনের এক আজান পুরো মহল্লার জন্য যথেষ্ট। মুআজ্জিন ছাড়া মহল্লার সবাই কখনো একথা বলে না যে, আমরা আজান ছাড়া খেলাফে সুন্নত নামায পড়েছি। বরং সবাই একথাই বলে যে, মুআজ্জিনের এক আজান পুরো মহল্লার জন্য যথেষ্ট। যেমন এক ইকামত পুরো জামাতের জন্য যথেষ্ট। ঐ ব্যক্তির জন্যও যে, ইকামতের সময় উপস্থিত ছিল না। বরং ইকামতের পরে এসে শরীক হয়েছে। সেও ইকামতসহ নামায পড়েছে বলে ধর্তব্য হয়।

একটি সুতরা যা ইমামের সামনে রাখা হয়, সেটি সকল মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। এক খুতবা জুমআয় শরীক সকলের জন্য খুতবা হয়ে যায়। যদিও কিছু মুসল্লি ইমামের খুতবার সময় উপস্থিত নাও থাকে”।
আমার কথায় যুবক লোকটি খুবই খুশি হয়। বলেঃ “মাসআলাটি আমার বুঝে এসে গেছে”।
আমি বললামঃ “সে তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে। তাই তার জবাব তার মতই দিতে হবে। এবার তুমি গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে যে, যখন জুমআর দিন তোমাদের খতীব খুতবা পড়ে, তখন কি তোমরা আলাদাভাবে সবাই খুতবা পড়? সে তখন বলবে- না। তখন তুমি একটি কাগজে লিখবে যে, “তোমাদের আক্বিদা হল খুতবা ছাড়া নামায হয়ে যায়”।

তারপর উক্ত কাগজে তোমার সাথিটির দস্তখত নিয়ে বলবে যে, ঠিক আছে! এবার আমি এমন হাদীস আনবো যার দ্বারা প্রমাণিত হবে যে, রাসূল সাঃ খুতবাসহ জুমআ পড়েছেন। খুতবা ছাড়া নামায হয় না। আর তোমার দায়িত্ব হল তুমি এমন হাদীস আনবে, যারা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ খুতবা ছাড়া নামায পড়েছেন। আর তিনি একথা বলেছেন যে, খুতবা ছাড়া নামায বিলকুল সহীহ হয়।

আমার কথায় এবার লক্ষ্য করলাম উক্ত যুবকের চেহারায় খুশির আভা ফুটে উঠেছে। চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। সে

আমার কথাগুলো বার বার দোহরিয়ে মুখস্ত করে নিল। বলতে লাগলঃ “হযরত! আমাকে একটু রিহার্সেল করিয়ে দিন!

আমি অনেক যুবকের মন থেকে এসব ওয়াসওয়াসা ইনশাল্লাহ দূরে করে দিব”।

আমি বললামঃ “তুমি ঐ মৌলবী সাহেবের কাছেও যাবে। যে তোমাকে ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়তে নিষেধ সম্বলিত শব্দ দেখাতে বলেছিল। আরো বলেছিল যে, সে এজন্য সূরা ফাতিহার প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে দশটি করে টাকা দিবে।
তুমি তার কাছে গিয়ে বলবেঃ তারাবীহের মাঝে যখন ইমাম সাহেব সূরা বাকারা পড়ে, তখন ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্য সূরা বাকারা পড়া নিষিদ্ধ? তখন সে বলবে- হ্যাঁ নিষিদ্ধ। তখন তুমি বলবেঃ যদি তুমি একটি সহীহ, সরীহ, মারফূ গায়রে মাজরূহ হাদীস এ বক্তব্যের উপর দেখাতে পার যে, তারাবীহ অথবা জুমআ কিংবা দুই ঈদ বা পাঞ্জেগানা নামাযে ইমামের পিছনে সূরা বাকারা পড়া নিষেধ বলা হয়েছে, তাহলে হাদীসে বাকারা শব্দ দেখাতে পারলে আমি তোমাকে সূরা বাকারার প্রতিটি হরফের বিনিময়ে একশত করে টাকা পুরস্কার দিব।

[কতবড় ধোঁকাবাজি! যেখানে কুরআনের তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকার নির্দেশ আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ দিয়েছেন, চাই ইমাম সূরা ইয়াসিন পড়ুক, বা সূরা বাকারা পড়ুক বা সূরা ফাতিহা পড়ুক। সেখানে এরকম ধূর্তামী করার মানে কি?]

আমি তাকে আরো বললামঃ তুমি দ্বিতীয় মৌলবী সাহেবের কাছেও যাবে। গিয়ে তার কাছে জানতে চাবে যে, হায়েজা মহিলার জন্য সূরা ফাতিহা জায়েজ আছে নাকি নিষেধ আছে? যে মহিলা বা পুরুষের উপর গোসল ফরজ তার জন্য সূরা ফাতিহা পড়া জায়েজ আছে না নিষিদ্ধ? সে নিশ্চয় বলবে- নিষিদ্ধ। তখন তুমি তাকে জিজ্ঞেস করবে- কোন হাদীসের উপর ভিত্তি করে একথা বলছেন? তখন সে বলবে- রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, হায়েজা ও গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কুরআনে কারীম পড়বে না।

তখন তুমি ঝটপট বলে দিবে- আরে ভাই! আমিতো সূরায়ে ফাতিহার মাসআলা জিজ্ঞেস করছি। এ হাদীসেতো কুরআনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা ফাতিহার কথাতো নেই। তুমি একটি সহীহ সরীহ গায়রে মাজরূহ হাদীস দেখাও, যাতে রাসূল সাঃ ফাতিহা শব্দ বলে, তা হায়েজা, নেফাসী ও গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তিকে পড়তে নিষেধ করেছেন। যদি দেখাতে পারেন, তাহলে আমি তোমাকে দশ লাখ টাকা পুরস্কার দিব।
তারপর তৃতীয় মৌলবী সাহেবের কাছে যাবেন। গিয়ে তাকে বলবেন যে, মৌলবী সাহেব! আপনি বলেছিলেন যে, ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এ হাদীস পাননি, যাতে বলা হয়েছে যে, সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। তাই তিনি কিয়াসের দ্বারা মাসআলা বলেছেন, যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, তখন তার কিয়াসকে যেন ছেড়ে দেয়া হয়।

ইমামের আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে বলা এ বক্তব্যটির প্রমাণ দিতে হবে। আমরাতো দেখেছি যে, মুসনাদে ইমাম আজম কিতাবের মাঝে ইমাম আবু হানীফা রহঃ তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে। যাতে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, “সূরা ফাতিহা ও তার সাথে কুরআনের আরো কিছু অংশ পড়া ছাড়া নামায হয় না”। আরেকটি হাদীস এনেছেন হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে। যাতে আবু হুরায়রা রাঃ বলেনঃ আমাকে রাসূল সাঃ হুকুম দিয়েছেন যে, তুমি মদীনায় ঘোষণা দাও যে, নামায কেরাত ছাড়া শুদ্ধ হয় না। চাই সূরা ফাতিহা এবং কুরআনের অতিরিক্ত আরো কিছু অংশ হোক।

আর তৃতীয় হাদীসটি হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়ে, তাহলে ইমামের কিরাত তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।

এ তিনটি হাদীসের আলোকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ আমাদের মাসআলা শিক্ষা দিয়েছেন। আপনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে অসত্য বলেছেন।
তারপর তুমি উক্ত মৌলবী সাহেবকে বলবেঃ ভাই! আমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। তাই তুমি আমাকে পূর্ণ কুরআনের মাসআলাটি বুঝিয়ে দাও। আপনি কুরআনের কারীমের ঐ আয়াত দেখিয়ে দিন, যাতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, ইমামের পিছনে ১১৩ সূরা পড়া নিষেধ এবং হারাম আর একটি সূরা তথা ফাতিহা পড়া ফরজ। এ ছাড়া নামায হবে না। বাতিল এবং বেকার। যদি না দেখাতে পারেন, তাহলে একথা স্বীকার করে নাও যে, এ মাসআলায় কুরআন তোমাদের পক্ষে কিছুই বলেনি। তাহলে এবার বুখারী মুসলিম থেকে এ বক্তব্যের পক্ষে হাদীস দেখাও”।

যুবকটি খুব খুশি হয়ে আমার কাছ থেকে উঠে চলে গেল।

এক সপ্তাহ পর আরো ছয়জন যুবককে সাথে নিয়ে যুবকটি ফিরে এল। তাদেরও আমি মাসআলাটি ভাল করে বুঝিয়ে দিলাম। সে বললঃ “আমি তাকে বলেছি যে, তোমরা খুতবা পড় না, তাই লিখে দাও যে, খুতবা ছাড়া জুমআর নামায পরিপূর্ণ সহীহ হয়ে যায়। আর এ দাবির পক্ষে হাদীস দেখাও। আমার কথা শুনে সে গালি গালাজ করা শুরু করে দিল।
প্রথম মৌলবী সাহেবকে বললাম যে, ইমামের পিছনে সূরা বাকারা নিষেধ সমর্থনে সহীহ সরীহ গায়রে মাজরূহ হাদীসে বাকারা শব্দ দেখান। আর আমার কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে নেন। তখন সেও হাদীস দেখানোর বদলে বলতে লাগলঃ তুমি দ্বীনের ব্যাপারে ভন্ডামী করছো। আমি তাকে বললামঃ যদি এর নাম ভন্ডামী হয়, তা এ ভন্ডামীর সূচনাতো আপনি শুরু করেছেন।

দ্বিতীয় মৌলবী সাহেবকে বললামঃ হায়েজা ও ফরজ গোসল আবশ্যক ব্যক্তির জন্য ফাতিহা পড়া নিষেধ সম্বলিত একটি সহীহ সরীহ হাদীস দেখান। তখন সেও গালি দেয়া শুরু করে দেয়।

তৃতীয় মৌলবী সাহেবের কাছে গিয়ে বললামঃ আপনি আমাদের ইমামের উপর মিথ্যারোপ করছেন। এবার ইমাম সাহেব রহঃ কিয়াসের বদলে যে হাদীস উপস্থাপন করেছেন সেটাকে মেনে নিন। তখন লোকটি হাদীস দেখানোর বদলেও সেও ইমাম সাহেব রহঃ কে গালি দেয়া শুরু করে দিল”।

যুবকটি মুচকি হেসে বলতে লাগলঃ “হযরত! আমি একটি আশ্চর্য ঘটনা দেখলাম। যে গায়রে মুকাল্লিদের সামনেই কুরআনের আয়াত واذا قرئ القرآن বলি। সেই বলতে থাকে যে, এ আয়াত নাকি কাফেরদের জন্য নাজিল হয়েছে, তাই আমরা কেন এর উপর আমল করবো? আর যখন হাদীস শুনাই তখন বলে যে, এসব হাদীস দুর্বল। আমি তাদের বললামঃ আপনি একটি হাদীস দেখান যাতে রাসূল সাঃ একথা বলেছেন যে, এ আয়াত কাফেরদের জন্য নাজিল হয়েছে, মুসলমানদের জন্য নয়। আমি ভুল করে তা মুসলমান নামাযীদের জন্য প্রয়োগ করে ইমামের কেরাতের সময় চুপ থাকার নির্দেশ দিয়েছি।

হুজুর! আমি যখন হাদীস বললামঃ যাতে বলা হয়েছে যে, ইমামের কেরাত মুক্তাদীর কেরাত বলে সাব্যস্ত। তখন ওরা ঠাট্টা করে বলে যে, তাহলে ইমামের রুকু ও সেজদাও মুক্তাদীর রুকু সেজদা বলে ধর্তব্য হওয়ার কথা। আমি জবাবে বললামঃ সেখানেতো রাসূল সাঃ বলেই দিয়েছেন যে, যখন ইমাম রুকু করে, তখন তোমরাও রুকু কর। যখন ইমাম সেজদা করে তখন তোমরাও সেজদা কর। আপনি কি এমন কোন হাদীস দেখাতে পারবেন, যাতে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, ইমামের রুকু সেজদা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়? তাহলে একথা বলছেন কেন?

আচ্ছা! তোমরা জুমআর খুতবা তোমরা সবই পড় না কেন? যদি ইমামের খুতবা তোমাদের সবার খুতবা হয়ে যায়, তাহলে তোমরা জুমআর নামাযও কেউ পড়ো না, কারণ তখন বলে দিও যে, ইমামের নামায তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাচ্ছে খুতবার মত”।

মোটকথা যুবকটি বললঃ আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমতে এ ব্যাপারে পরিতৃপ্ত যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত হানাফীদের মাসলাক কুরআন ও হাদীসের উপর পরিপূর্ণ ভিত্তিশীল। আমি অন্যদেরও একথা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

4 comments

  1. JazakAllah khair..anak valo hoeche,Alhamdulillah.

  2. zazakallah

  3. Al hamdulillah.
    Khub valo laglo. Abong jiner o onek fayda holo. Zajakallah.

  4. জাজাকাল্লাহ। অনেক চমৎকার বিষয়কে তুলে ধরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *