প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
জনাব,দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েন,আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
প্রশ্নঃ
আমি এবং আমার স্বামী,আমরা দুই জন দুই জায়গাতে থাকি, বিয়ের পর আমাদের দুইজনের মাঝে স্পর্শ হলেও আমাদের মাঝে সহবাস করা হয় নি,এবং এমন কোন জায়গায় আমরা সময় ও কাটাই নি,যেখানে চাইলেই সহবাস করা যাবে।
কিন্তু মোবাইলের ইনবক্সে ২/৩ বার ২ জনই ২ জনকে কিছু গোপন ছবি পাঠিয়েছিলাম।
বিভিন্ন কারনে যখনই আমাদের ঝগড়া হয় মাঝেমাঝেই আমার স্বামী আমাকে বলে আমাকে আর ফোন,ম্যাসেজ দিবা না,দিলে তালাক।
তখন আমি আর তাকে ফোন,ম্যাসেজ দেই না।
কিন্তু পরে সে যখন আমাকে ফোন দেয় এবং আমি তাকে ঐ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলে আমি আমার কথা তুলে নিছি,
ফোন- ম্যাসেজ দিও সমস্যা নাই,তার এই কথা শুনার পর আমি পুনরায় তাকে ফোন – ম্যাসেজ দিতাম।
এমন পরিস্থিতি আমাদের দুজনের মাঝে বহুবার হয়েছে।
প্রত্যেকবারই আমি যখন বলেছি তোমার কথা তুলে নাও এবং সে যখন নিজ মুখ দিয়ে বলেছে , আমি আমার কথা তুলে নিছি তারপর আমি তাকে ফোন- ম্যাসেজ দিয়েছি।
এতে কি আমাদের বিয়ের কোন সমস্যা হয়েছে? আমাদের মাঝে কি কোনবার তালাক পতিত হয়েছে?????
কোন সমস্যা হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
আল্লাহ চাইলে আমি মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমার স্বামীর সাথেই থাকতে চাই,সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়ে থাকলে উপায় বলে দিয়ে আমাকে বাধিত করবেন।
আমার স্বামীর এরূপ শর্তের কারণে আমি কি কখনোই তাকে আর ফোন – ম্যাসেজ দিতে পারবো না?
দয়া করে আমাকে একটু জানাবেন please……..
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
নাম প্রকাশ করতে চাইনা।
ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কথোপথনের সময় যদি আপনার স্বামী নিয়ত করে থাকে যে, এখন ফোন মেসেজ দিলে তালাক। তাহলে তৎক্ষণাত না দিয়ে অন্য সময়ে ফোন মেসেজ দিলে তালাক হবে না।
কিন্তু তৎক্ষণাতের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি বলে থাকে যে, যখনি ফোন মেসেজ দিবা তখনি তালাক বা বলল আমাকে ফোন বা মেসেজ দিলেই তালাক। তাহলে পরবর্তীতে আপনি তার অনুমতি নিয়ে ফোন মেসেজ দিলেও তালাক পতিত হয়ে গেছে।
প্রথম মেসেজ বা কল দেবার মাধ্যমে এক তালাকে রেজয়ী পতিত হয়ে গেছে।
এরপর যদি রুজু না করে থাকেন, তাহলে তিন হায়েজ শেষ হবার পর আপনাদের মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।
এখন আবার একত্র হতে চাইলে নতুন করে মোহর ধার্য করে দুইজন সাক্ষির উপস্থিতিতে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।
আর যদি রুজু করে থাকেন। তারপর আবার উপরোক্ত পদ্ধতিতে তালাক দিয়ে থাকেন আগের হুকুম আবার আরোপিত হবে। এইভাবে যতবার রুজু করে তালাক দেয়া হয়েছে তত তালাক পতিত হয়েছে। সেই হিসেবে যদি তিনবার রুজু করে তিনবার উপরোক্ত পদ্ধতিতে তালাক হয়ে থাকে, তাহলে তিন তালাক পতিত হয়ে আপনার স্বামী স্ত্রীর বন্ধন শেষ হয়ে গেছে। এখন আর উক্ত স্বামীর সাথে ঘর সংসার করা যাবে না।
তবে আপনার উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে বুঝা যায় যে, আপনাদের প্রথম তালাক হয়ে গেছে। এরপর আর রুজু করা হয়নি। তাই যদি প্রথম তালাকের পর তিন হায়েজ পরিমাণ সময় অতিক্রান্ত না হয়ে থাকে, তাহলে মুখে রুজু করে নিলেই আপনারা আবার স্বামী স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন।
আর যদি তিন হায়েজ পরিমাণ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে বিয়ে করে নিতে হবে।
উভয় ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতে আপনার স্বামী আর দুই তালাকের মালিক থাকবেন।
স্মর্তব্য যে,
তালাক কোন ছেলেখেলা নয়। কথায় কথায় তালাকের কথা বলার বাচ্চাসূলভ মনোবৃত্তি দূর করতে হবে।
شرط للحنث فى قوله إن خرجت مثلا فأنت طالق لمريد الخروج فعليه فورا لأن قصده المنع عن ذلك الفعل عرفا ومدار الأيمان عليه (رد المحتار-5/554)
لو أرادت المرأة الخروج فقال إن خرجت فأنت طالق فجلست ثم خرجت لم يحنث (هداية، كتاب الأيمان-2/486، 2/483)
الصريح كأنت طالق ومطلقة وطلقتك يقع واحدة رجعية (البحر الرائق-3/437)
وإذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط اتفاقا (الفتاوى الهندية، قديم-1/420، جديد-1/488، هداية-2/385)
الصريح كأنت طالق ومطلقة وطلقتك تقع واحدة رجعية (البحر الرائق-3/437)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]