প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / যিনাকারী তওবা করার পর যিনাকৃত মহিলার কাছে ক্ষমা চাওয়া কি জরুরী?

যিনাকারী তওবা করার পর যিনাকৃত মহিলার কাছে ক্ষমা চাওয়া কি জরুরী?

প্রশ্ন

From: প্রকাশে অনিচ্ছুক
বিষয়ঃ অপরাধ ও গোনাহ

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

হযরত,
প্রথমেই আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

প্রশ্ন ১- কোনো ছেলে যদি কোনো মেয়ের সম্মতিক্রমে তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে এবং পরে ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে এবং এটা থেকে ফিরে আশে এবং আল্লাহর কাছে মাফ চায়, তাকে কি মেয়েটার কাছে ও মাফ চাওয়া জরুরি?

প্রশ্ন ২- কোনো মেয়ে যদি কোনো ছেলেকে ফাঁদে ফেলে তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে এতে কি ছেলেটি গুনাহগার হবে? এখানে উল্লেক্ষ্য যে মেয়েটি বিবাহিত এবং ছেলেটি তার সম্পর্কে অজ্ঞ। এবং ফাঁদে ফেলার উদ্দেশ্য ছিল ছেলেটি যদি জেনে যায় মেয়েটি বিবাহিত তাহলে তাকে প্রতারণা করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। কিন্তু ছেলেটি তওবা করে ফিরে এসেছে। এক্ষেত্রে কি ছেলেটি গুনাহগার হবে? তাহলে করনীয় কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিবাহ বহির্ভূত বেগানা নারীপুরুষ সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে উপরোক্ত গোনাহে লিপ্ত হয়ে গেলে, সাথে সাথেই খাটি দিলে তওবা করা কর্তব্য।

যিনা মারাত্মক পর্যায়ের কবীরা গোনাহ। এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়া হয়। আর ইসলামী আইন অনুপাতে অবিবাহিত যিনাকারীকে প্রকাশ্যে একশত বেত্রাঘাত এবং বিবাহিত যিনাকারীকে প্রকাশ্যে প্রস্তর মেরে হত্যা করার বিধান।

শাস্তির পরিমাণ ও ধরণই প্রমাণ করে ইসলামে যিনা কত বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

তাই এহেন গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে দ্রুত তওবা করে ফিরে আসা আবশ্যক।

যার সম্মতিতে এহেন পাপকর্মে লিপ্ত হওয়া হয়, তওবাকালে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

আর গোনাহ থেকে তওবা করে ফিরে আসার দ্বারা গোনাহ হবার প্রশ্ন করাটাই অবান্তর।

وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا [٢٥:٦٨]

يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا [٢٥:٦٩]

إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]

এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।

কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।

কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৬৮-৭০]

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ [٢٤:٢

ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। [সূরা নূর-২]

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خُذُوا عَنِّي، فَقَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلاً الثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ، ثُمَّ الرَّجْمُ، وَالبِكْرُ بِالبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَنَفْيُ سَنَةٍ. (سنن الترمذى, رقم-1434)

وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]

আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]

وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١

মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর-৩১]

হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ

গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

One comment

  1. আলহামদুলিল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *