প্রচ্ছদ / ওয়াকফ/মসজিদ/ঈদগাহ / হারাম টাকা মসজিদ মাদরাসায় প্রদান ও হারাম টাকার মালিকের সাথে খানা খাওয়া প্রসঙ্গে

হারাম টাকা মসজিদ মাদরাসায় প্রদান ও হারাম টাকার মালিকের সাথে খানা খাওয়া প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

মুহতারাম, বর্তমানে মুসলমান লোকসকলের মধ্যে হালাল ও হারাম বিষয়ে সম্যক ধারণা বা সচেতনতার স্বল্পতা খুবই প্রবল। দীর্ঘদিন ধরে কোন কাজ হালাল মনে করে করছে কিন্তু আদতে তা হারাম – এমনটি তো প্রায়ই দেখা যায়। এই প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন:

১) দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতে বিভিন্ন সময়ে যখন সফরে বের হওয়া হয় এসব সফরের জামাতে সদ্য দ্বীনের ওপর চলার চেষ্টা করছে এমন সাথীদের কিংবা একেবারেই নতুন সাথীদের একটি বড় অংশ দেখা যায়।

বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় যে তারা অনেকেই হালাল হারাম সম্পর্কে সম্যক অবগত ও সচেতন নয় (দুঃখজনকভাবে কিছু পুরাতন সাথীদের মধ্যেও এমনটি দেখা যায়) কিন্তু এসব সফরে খাওয়ার খরচ, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি খেদমতের সকল খরচে জামাতের সকলের সমান অংশগ্রহণ থাকে। তাহলে এখানে এ আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান যে এই খরচের মধ্যে কারো হারাম টাকা অন্তর্ভুক্ত আছে (এবং বাস্তবে এমনটি হতে আমি দেখেছিও); আবার অনেকসময় মেহমানদারীও হয় যখন দেখা যায় মেজবানের উপার্জন সম্পর্কে সম্যক ধারণা অনেক সময়ই নেওয়া হয় না।

এসব বিষয় সামনে রেখে করণীয় কি?এসব আশঙ্কায় জামাতের সাথে সফরে না যাওয়া কি ঠিক হবে?

২) মসজিদগুলোতে ‘মুক্ত হস্তে দান করুন’ না লিখে ‘হালাল হস্তে দান করুন’ লেখা উচিত – শ্রদ্ধেয় এক শিক্ষকের কাছ থেকে একবার এমনটিই শুনেছিলাম। বাস্তবেও বর্তমানে মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণের সময় কিংবা সাধারণ সময়ে যেসব দানের টাকা আসে তারমধ্যে হারাম টাকা থাকার আশঙ্কা মোটেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাহলে এমন অর্থ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, পরিচালনা ও ইমাম, মোয়াজ্জিন, শিক্ষকবৃন্দ ও খাদেমদের হাদিয়া দেওয়ার বিধান কি?

৩) মসজিদে বিভিন্ন সময়ে বৈধ ও অবৈধ বিভিন্ন উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে খাবার বিতরণ করা হয়। কেউ সম্পদশালী হলেই, তার সম্পদ হয়তো হারাম হবে – এমন বদধারণা করা নিশ্চয়ই কঠিন গুনাহের কাজ। কিন্তু তারপরও অনেকসময় মনের মধ্যে আশঙ্কা থাকেই। এক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যদি কোন ব্যক্তি হারাম উপার্জনের সাথে হালাল উপার্জন সমান থাকে, তাহলে তার খানা খাওয়া ও হাদিয়া গ্রহণে কোন সমস্যা নেই।

তবে যদি নিশ্চিত জানা থাকে যে, হারাম থেকে টাকা খরচ করছে, তাহলে তার খানা খাওয়া ও হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়।

আর মুসলমানদের প্রতি ভালো ধারণা রাখা শরয়ী বিধান। তবে নিশ্চিত জানা থাকলে ভিন্ন কথা।

সেই হিসেবে দাওয়াত ও তাবলীগে আগত মুসল্লিদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত জানা না থাকে যে, সে হারাম মাল থেকেই খরচ করছে, তাহলে তার সাথে একত্রে খানা খেতে কোন সমস্যা নেই।

মসজিদ মাদরাসায় হারাম টাকা প্রদান করা জায়েজ নয়। নিশ্চিতভাবে জানা হারাম টাকা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা কর্তৃপক্ষের উপর আবশ্যক।

তবে নিশ্চিতভাবে জানা না থাকলে উক্ত টাকা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।

শুধুমাত্র আশংকার বশে খানাকে হারাম বলা যাবে না। তবে যদি কারো সন্দেহ হয়, তাহলে সে এসব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে কোন মুসলমানদের প্রতি মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকাও শরীয়তের কাম্য বিষয়।

عن ابن مسعود رضى الله عنه قال: جاء اليه رجل فقال: إن لى جارا يأكل الربا، وإنه لا يزال يد عونى فقال مهنأه لك وإثمه عليه (مصنف عبدر الرزاق-8/150، رقم-14675)

হযরত ইবনে মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তার কাছে এক ব্যক্তি আসল। এসে বলল, আমার এক প্রতিবেশী আছে। সে সুদ খায়। কিন্তু সে সর্বদা আমাকে সহযোগিতা করে। তখন ইবনে মাসঊদ রাঃ বলেন,  উপকার তোমার হলেও গোনাহটা তার। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৪৬৭৫]

احب إلى أن لا يأكل منه يوسعه حكما أن ياكله إن كان ذلك الطعام لم يكن عين الغصب، أو الرشوة الخ (رد المحتار، كتاب الزكاة، مطلب التصدق من المال الحرام-3/319، الفتاوى الهندية-5/350، جديد-5/404، المحيط البرهانى-8/64، رقم-9594)

عن سلمان الفارسى رضى الله عنه قال: إذا كان لك صديق عامل أو جار عامل أو ذو قرابة عامل فأهدى لك هدية، أو دعاك إلى طعام فاقبله، فان منهأه لك وإثمه عليه (مصنف عبد الرزاق-8/150، رقم-14677)

أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس الخ (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الثانى عشر فى الهدايا والضيافات-5/342، جديد-5/396، تاتارخانية-18/175، رقم-28405)

اكل الربا وكاسب الحرام أهدى  إليه أوضافه وغالب ماله حرام لا يقبل ولا يأكل مالم يخبره أن ذلك المال أصله حلال ورثه، أو استقرضه وإن كان غالب ماله حلالا، لا بأس بقبول هديته والأكل منها (هندية، كتاب الكراهية، الباب الثانى عشر فى الهدايا والضيافات-5/343، جديد-5/397، الفتاوى التاترخانية-18/175، رقم-28405)

غالب مال المهدى إن حلالا لا بأس بقبول هديته، وأكل ماله ما لم يتعين أنه من حرام وإن غالب ماله الحرام لا يقبلها، ولا يأكل إلا إذا قال: أنه حلال ورثته أو استقرضته (بزازية على هامش الهندية، كتاب الكراهية، الفصل الرابع فى الهدية والميراث-6/360)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ [٢:٢٦٧]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত। [সূরা বাকারা-২৬৭]

عن أبى هريرة رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أيها الناس: إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا (صحيح مسلم، باب قبول الصدقة من الكسب الطيب وتريتها-1/326، رقم-1015)

لو أنفق فى ذلك مالا خبيثا، أو مالا سببه الخبيث والطيب فيكره، لأن الله تعالى لا يقبل إلا الطيب، فكره تلويث بيته بمالا يقبله (الدر المختار مع رد المحتار-2/431)

قَاعِدَة أُمُور الْمُسلمين على السداد حَتَّى يظْهر غَيره (قواعد الفقه، رقم-52)

قَاعِدَة الْبناء على الظَّاهِر وَاجِب مَا لم يتَبَيَّن خِلَافه (قواعد الفقه، رقم-62)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *