প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / হকের ঝান্ডাবাহী উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে কথিত আহলে হাদীসদের আক্রমণ

হকের ঝান্ডাবাহী উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে কথিত আহলে হাদীসদের আক্রমণ

মুফতী রফীকুল ইসলাম মাদানী

লা-মাযহাবীদের দলের নাম রেখেছে আহলে হাদীস আন্দোলন। তাদের প্রচারপত্র ও বই-পুস্তকের শিরোনামে রয়েছে, “আহলে হাদীস আন্দোলন পরিচিতি।” জানিনা তারা কিসের আন্দোলনে নেমেছে? কার বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করছে? তাদের বর্তমান কার্যক্রম, অশুভ তৎপরতা ও অশালীন আচার আচরণ দেখে মনে হয় উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উদ্দেশ্যেই তাদের জন্ম। তাইতো তারা উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে আদা-জল খেয়ে লেগেছে। স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান-এর পেছনে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে অপবাদ অপপ্রচারের ষড়যন্ত্রে তারা মেতে উঠেছে। প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বই-পুস্তক তো আছেই, শুধু উলামায়ে দেওবন্দের কুৎসা, অপবাদ অপপ্রচারের বিরাট দাস্তান নিয়ে স্বতন্ত্র বই-পুস্তকও রচনা করতে  তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। উলামায়ে দেওবন্দের প্রতি তাদের বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচায়ক কয়েকটি বই থেকে কিছু উক্তি নিম্নে উল্লেখ করছি-

(ক)

পাক ভারতে লা-মাযহাবীদের অন্যতম প্রসিদ্ধ আলিম মাওলানা আবু শাকুর আ. কাদির হাছাবরী লিখে-

“مقلدین حنفیہ کے ہر دوفرقے دیوبندی اور بریلوی بلاشبہ گمراہ ہے اور اہل حدیث جیسے مسلمان نہیں۔۔۔ جن سے مناکحت جائز نہیں”

“ হানাফী মাযহাবের অনুসারী দেওবন্দী ও বেরলভী উভয় দল, নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট। আহলে হাদীস দল যেমন মুসলমান তারা এমন মুসলমান নয়। এদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন বৈধ হবে না।” সিয়াহাতুল জানান, পৃ. ৫ দেথুন আল-কালামুল মুফীদ পৃ. ২১

(খ)

উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে লেখা চরম হঠকারীমূলক স্বতন্ত্র বই “ আদ-দেওবন্দীয়া”র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২৮০টি পৃষ্ঠা শুধু উলামায়ে কিরামের কুৎসা-সমালোচনা আর অপবাদ-অপপ্রচারের বিষোদগারে পরিণত করেছে। এ বিরাট বইয়ের শুরুতেই লিখেছে-

ومن الطوائف الاسلامیۃ التی افتتنت بمثل ھذہ المعتقدات التی لا تخلو من الشرک باللہ ۔۔۔ طائفۃ الدیوبندیۃ۔

“ ইসলামী ফিরক্বা সমূহের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি শিরক জনিত ফিৎনামূলক আক্বীদার জালে আবদ্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে দেওবন্দী জামাআত একটি।” পৃ. নং ৬

উক্ত বইয়ের ১২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে-

(ھم دعاۃ البدعۃ فی الھند والمشرکون عباد القبور)

“দেওবন্দীরা হিন্দুস্তানে বিদআতের দায়ী এবং কবরপূজারী মুশরিক।” আদওেবন্দীয়া, লিখক আবু উসামা সাইয়্যেদ তালিবুর রহমান, সহযোগিতা আবু হাসসান আনছারী , প্রকাশকাল-১৪১৫হিজরী, ১৯৯৫ ইং দারুল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, পাকিস্তান ।

উক্ত বইয়ের ১২৩ পৃষ্ঠায় হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.) কে মুশরিক হেতু ধ্বংসের জন্য বদদোয়া করেছে এবং ২৫৩ পৃষ্ঠায় তাঁর একটি কথা উল্লেখ করতঃ লিখেছে, তা-হল “বিতাড়িত শয়তানের কথা।” আদওেবন্দীয়া, লিখক আবু উসামা সাইয়্যেদ তালিবুর রহমান, সহযোগিতা আবু হাসসান আনছারী , প্রকাশকাল-১৪১৫হিজরী, ১৯৯৫ ইং দারুল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, পাকিস্তান ।

৮৭ (নাউযুবিল্লাহ)

(গ)

ন্যক্কারজনক অপবাদ আর জাহেলী অপব্যাখ্যাার জঘন্যতম বিষোদগার “জুহুদুল উলামাইল হানাফীয়া” নামক বিশাল-বিশাল তিন ভলিয়ম কিতাবের প্রতিটি পাতায় উলামায়ে দেওবন্দের কুৎসা , অপবাদ-অপব্যাখ্যাার ঝড়-তুফান চালিয়েছে।

উক্ত বইয়ের ১ম খ- ৫২১ পৃষ্ঠায় লিখেছে-

(حسین احمد الملقب عند الدیوبندیۃ بشیخ الاسلام، احد مشاھیر القبوریۃ الخرافیۃ، کان داعیۃ الی الخرافات القبوریۃ والخز عبلات الصوفیۃ)

“হুসাইন আহমাদ, দেওবন্দীদের নিকট শাইখুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত। কবরপূজা ও কাল্পনিক কুসংস্কারের এক প্রখ্যাত ব্যক্তি। তিনি কুসংস্কার, কবরপূজা ও ভ্রান্ত ছুফী মতবাদের দাবিদার ছিলেন।”

এভাবে ১ম খ- ১০৮ পৃষ্ঠায় শাইখুল হিন্দ (রহ.) সম্মন্ধে কটুক্তি করতে গিয়ে লিখেছে-

(قد وصل فی الغلو والتعصب للحنفیۃ الی حد حَرَّفَ فی القرآن)

“হানাফী মাযহাবের জন্য বাড়াবাড়ি ও হঠকারী করতে গিয়ে কুরআনের তাহরীফ (পরিবর্তন-পরিবর্ধন) পর্যন্ত করেছেন।”

হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) সম্বন্ধে অপবাদ দিতে যেয়ে ১ম খ-ের ৬৩২ পৃষ্ঠায় লিখেছে-

(صوفی خرافی ، عندہ خیر کثیر، وشر مستطیر یحمل افکار قبوریۃ صوفیۃ بل وثنیۃ وجودیۃ خرافیۃ)

“তিনি ভ্রান্ত ছুফী ও কুসংস্কারক ছিলেন, তার নিকট অনেক ভালোও ছিল, অগাধ বিভ্রান্তিও ছিল, আর ছিল কবরপূজা ও ভ্রান্ত ছুফীবাদ বরং মুর্তি পূজা ও কাল্পনিক কুসংস্কার।”

এভাবে কাসিম নানুতবী, রশীদ আহমাদ গাংগুহী, আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী, খলীল আহমাদ সাহারানপুরী, শিব্বীর আহমাদ উছমানী, শাইখুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.) প্রমুখ আকাবিরে দেওবন্দের প্রথিতযশা ও ক্ষণজন্মা আলিম আর মুসলিম মিল্লাতের প্রত্যেক মনীষীকে উক্ত বইয়ের পাতায়-পাতায় এ সমস্ত জঘন্যতম অপবাদে ন্যক্কারজনক ও অশালীন ভাষায় মর্মান্তিকভাবে অভিযুক্ত করেছে।

দেখুন, পৃ. ১/৫১৭-৫১৮, ২/৭১৩-৭১৪,৭৭২-৭৭৩ ও ৭৭৬ ইত্যাদি। বইয়ের নাম জুহুদু উলামাইল হানাফীয়া, লিখক, শামছুদ্দীন আস সালাফী, আফগানী। প্রকাশকাল১৪৬১ হিজরী ১৯৯৬ইং। দারুছ ছামীয়ী, পাকিস্তান লেখক বিগত কয়েক বছর পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যৌবন কালেই মারা গেছে।  আল্লাহ পাক মোমিনদের পক্ষ হয়ে দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিরোধ করেন।

পর্যালোচনা

“উলামায়ে দেওবন্দ” ইতিহাসের পাতায় একটি জিহাদী কাফেলার নাম। বাতিলের আতঙ্ক, আপোষহীন তৌহীদী মতবাদের মূর্তপ্রতীক ও কুরআন-সুন্নাহর যোগ্য উত্তরসূরীদের প্রতিচ্ছবি ও কর্ণধার। এদেশের মুসলিম কৃষ্টি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ফিরিঙ্গি হায়েনাদের কালো থাবা থেকে রক্ষা করা ও দেশকে বিজাতীয় আগ্রাসনের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গিত করেছিলেন। তাদের ক্ষুরধার লেখনী প্রসূত সঞ্জিবনী সুধার উত্তাপ, অসাধারণ সাংগঠনিক প্রতিভা আর সীমাহীন আত্মত্যাগ ও দুঃসাহসিক কুরবানীর বদৌলতে আমরা আজ মুক্ত-স্বাধীন ও স্বতন্ত্র আবাসভূমির মুসলিম অধিবাসী। চলমান বিশ্বে যখন আবার ঐ ফিরিঙ্গিদের সর্বগ্রাসী থাবা বিস্তার হতে যাচ্ছে, এরই প্রেক্ষাপটে ফিরিঙ্গিদের মহা আতঙ্ক উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে পুনরায় তাদের দোসরদের লেলিয়ে দিয়েছে। তাই অর্থ-বলে, সংস্থার আড়ালে, সেবার নামে উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে তারা বহুমুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরই অপপ্রয়াসে উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে এহেন ভিত্তিহীন অপবাদ-অপপ্রচার ও বিদ্বেষী আক্রমণের ঝড়-তুফান।

দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং মানবিক জীবনধারায় সামগ্রিক দিক তথা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও বাতিল-কুসংস্কার প্রতিরোধে শত বাধা বিপত্তির সাগর পাড়ি দিয়ে সফল অবদান রেখে আসছেন। প্রাচীন কুসংস্কারের স্থলে একটি আধুনিক, সার্বজনীন ও সংস্কারমূলক শিক্ষাধারার প্রবর্তন করেছেন উলামায়ে দেওবন্দ। বহু জাতি ও ধর্মের মানুষের আবাসভূমি এই ভারতবর্ষ, বিভিন্ন সংস্কৃতির ভাবধারায় গড়ে উঠা মানুষের  মাঝে ইসলামী সংস্কৃতিকে স্বতন্ত্র রূপে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে উলামায়ে দেওবন্দের অবদান চির ভাস্বর হয়ে থাকবে। বিশেষ করে হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষা করার জন্য তারা ইসলামের সাংস্কৃতিক জীবনের রূপরেখা ওয়াজ-নসীহত, বই-পুস্তকের মাধ্যমে যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী সংস্কৃতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটিয়ে তারা কুসংস্কার নির্মূলের আদর্শিক ভূমিকা রেখে আসছেন। তাঁরাই সঠিক ইসলামী মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এ পরিসরে উলামায়ে দেওবন্দের ক্ষুরধার লিখনী, বিশেষতঃ থানবী (রহ.)-এর ” ইসলাহুর রুসূম” এবং “আগলাতুল আওয়াম” ইত্যাদি মূল্যবান কিতাব অত্যন্ত সংস্কারমূলক ভূমিকা রেখেছে। আজ তাঁদেরকে অভিহিত করা হচ্ছে কুসংস্কারক হিসেবে (!) এর বিচার আল্লাহর দরবারেই পেশ করছি।

কুসংস্কার নির্মূলের সাথে সাথে শিরক-বিদআ’ত ও ধর্মহীনতার মূলোৎপাটনে উলামায়ে দেওবন্দ অপরিসীম আত্মত্যাগ ও কুরবাণী স্বীকার করেছেন। বাতিলের বিরুদ্ধে তাদের নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতার ইতিহাস অতি দীর্ঘ ও বিস্তৃত। কালে কালে ভারতের মাটিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা বাতিলের মোকাবিলায় উলামায়ে দেওবন্দ নিবেদিত না হলে ইসলামের আলো এদেশ থেকে হয়ত চিরতরে নির্বাপিত হয়ে যেত অথবা ইসলাম তার স্বকীয় রূপ হারিয়ে নতুন কোন ভ্রান্ত রূপ নিয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছাত। আর গোটা মুসলিম জাতিকে দিতে হত এর চরম খেসারত। তাই বাতিল প্রতিরোধে তাদের অফুরন্ত অবদানের চিত্র মুসলিম জাতি চিরকাল হৃদয়ে গেঁথে রাখবে, আর লিখে রাখবে স্বর্ণাক্ষরে।

সকল প্রকার ধর্মহীনতা ও ধর্মদ্রোহিতা, শিয়া ফিৎনা এবং বৃটিশ ফিরিঙ্গিদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা কাদিয়ানী, বেরলভী, লা-মাযহাবী সমস্ত মতবাদ ও তাদের বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য উলামায়ে দেওবন্দ ছিলেন সব সময় অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায়। হযরত নানুতবী (রহ.) এই চেতনাকে উচ্চতর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিশ্লেষণ করেন। হযরত গাঙ্গুহী (রহ.) একটি ফিক্বহ শাস্ত্রের যুক্তি প্রমাণের আলোকে বিশ্লেষণ করেন। অতঃপর হযরত থানভী (রহ.) ও হযরত খলীল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বাতিল প্রতিরোধ ও বিদআত বর্জনের আন্দোলনকে সামাজিক ও সামগ্রিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ পরিসরে তাদের বলিষ্ঠ আলোচনা ও ক্ষুরধার রচনাবলী স্মরণীয়-বরণীয়ভাবে জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করছে। তাই বাতিল প্রতিরোধ ও বিদআত বর্জনে তাদের কতিপয় পুস্তক ও মূল্যবান বাণী উপস্থাপন করা জরুরী মনে করি।

ইলমীভাবে বাতিল প্রতিরোধ ও বিদআত সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ওলামায়ে দেওবন্দ কর্তৃক বহু বই পুস্তক রচনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে  শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান(রহ.) প্রণীত আদিল্লায়ে কামেলা” “ইযাহুল আদিল্লাহ”, মাও. কাসিম নানুতভী (রহ.) প্রণীত “হাদীয়াতুশ শিয়া” “মাছাবীহুত্তারাবীহ” “তাওছীকুল কালাম ফিল ক্বিরাআতি খালফাল ইমাম” “হিদায়াতুল মু’তাদী”, মাও. রশিদ আহমাদ গাংগুহী (রহ.) প্রনীত “ফাতওয়া গ্রন্থ” “হিদায়াতুশ শিয়া”, মাও. খলীল আহমাদ সাহারানপুরী প্রনীত “আল-বারাহিনুল ক্বাতিয়াহ” “আল-মুহাননাদ আলাল মুফাননাদ”, আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.) প্রণীত “আক্বীদাতুল ইসলাম আলা হায়াতিননবী”, শাইখুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.) প্রণীত “ফিৎনায়ে মাওদুদিয়্যাত”, শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.) প্রণীত “আশশিহাবুস সাকিব”, মুফতী শফী (রহ.) প্রণীত “খতমে নবুওয়াত”, “মাক্বামে ছাহাবা”, আসসুন্নাহ ওয়াল বিদআহ”, মাও. মনজুর নু’মানী প্রণীত “ইরানী ইনক্বিলাব” “ফায়সালাকুন মুনাজারা”, মাও. সারফরায খান রচিত “রাহে সুন্নাত”, মাও. আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) রচিত “শিরক ও বিদআত”, মাও. ইউসুফ লুদূয়ানভী (রহ.) কর্তৃক প্রণীত “ইখতিলাফে উম্মত আওর সীরাতে মুস্তাকীম”, মাও. মুফতী তক্বী উছমানী রচিত “আমীরে মুয়া’বিয়া আওর তারীখী হাক্বাইক্ব” “তাক্বলীদ কী শরয়ী হাইসিয়্যত” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

ভারতবর্ষের বাতিল প্রতিরোধ ও প্রচলিত বিদআতের উচ্ছেদ প্রকল্পে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) এর বই পুস্তক বেশুমার, তন্মধ্যে “হিফজুল ইমান” “আশরাফুল জওয়াব” “ইছলাহুর রুসূম” “আগলাতুল আওয়াম” ইত্যাদি তাঁর অনন্য রচনাবলী।

তাছাড়াও উলামায়ে দেওবন্দ তাদের ওয়াজ নসীহত, বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সর্বদাই উম্মতকে শিরক , বিদআ’ত ও কুসংস্কার সম্পর্কে সচেতন করে আসছেন। প্রয়োজনে তাদের সাথে বাহাছ ও মুনাযারা করার জন্য তাঁরা সর্বদাই বীরদর্পে এগিয়ে এসেছেন। এ জন্য বহু ক্ষেত্রে তাঁদেরকে জীবনের ঝুঁিক নিয়ে আর জান বাজি রেখেও কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই তাঁরা শিরক বিদআত ও কুসংস্কারের সাথে আপোষ করেননি। বলতে গেলে বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম উলামায়ে দেওবন্দের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই তাঁরা লা-মাযহাবী বা “আহলে হাদীস” নামক বিদআতী বা নতুন দলের সঙ্গেও কোন আপোষ করেননি; বরং লা-মাযহাবীদের জন্মকাল থেকেই উলামায়ে দেওবন্দ তাদের ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তৃতা-বিবৃতি, দরস তাদরীসের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে এদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও আসল রূপ তুলে ধরেন। শাইখুল হিন্দ (রহ.) এর রচিত “আদিল্লায়ে কামেলা ও ইযাহুল আদিল্লাহ” এবং নানুতভী (রহ.) রচিত “মাছাবিহুত তারাবীহ ও তাওছীকুল কালাম” ইত্যাদি এ ধারার প্রয়াস। উলামায়ে দেওবন্দের সতর্ক পদক্ষেপ ও সচেতনতার ফলে লা-মাযহাবীদের সমস্ত ষড়যন্ত্র সর্বদাই নস্যাৎ-বেগতিক হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ জানতে পেরেছে তাদের গভীর চক্রান্তের রূপরেখা। তাই লা-মাযহাবীরা দেওবন্দীদের অপবাদ ও অপপ্রচারে আদাজল খেয়ে লেগেছে। উলামায়ে দেওবন্দের উপর আরোপিত সমস্ত অভিযোগ-অপবাদ তাদের প্রতি লা-মাযহাবীদের ক্ষোভ ও আক্রোশেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

শিরক, বিদআ’ত, কবরপূজা, মাযারপূজা ও কুসংস্কারের প্রতিরোধকল্পে সমস্ত আকাবিরে দেওবন্দের স্বতন্ত্র রচনাবলী এবং তাফসীর, হাদীস, ফিক্বহ ও বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবপত্রে প্রাসঙ্গিক অসংখ্য স্থানে তাঁদের সুস্পষ্ট অবস্থানের প্রমাণ সম্মলিত কিতাবপত্রই আমাদের হাতের নাগালে আছে। কমপক্ষে বেহেশতী যেওর তো প্রায় সবার ঘরেই আছে। সুতরাং সম্মানিত পাঠকগণকে এ সমস্ত বিষয়ে তাদের কিতাবপত্র অধ্যয়ন করত এসব ব্যাপারে তাদের অবস্থান অত্যন্ত সুচিন্তিত ও গবেষণামূলকভাবে পর্যালোচনা ও বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়-ইছলাহুর রাসুম পৃ. ১২৫ বেহেশতী যেওর, থানভী পৃ. ১/৪১,৬১ ও ৬/৬৩ ফাতওয়ারে রশীদিয়া, ১/১৪৩, তালিফাতে রশীদিয়া পৃ. ৬৯ আশরাফুল লাতাইফ পৃ. ২৪ ফয়যুল বারী, ২/৪২ ফাতওয়ায়ে শাইখুল ইসলাম (মাদানী) পৃ.১১৪ ইত্যাদি।

কেননা আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

(یا ایھا الذین آمنوا ان جاء کم فاسق بنبأ فتبینوا ان تصیبوا قوما بجھالۃ، فتصبحوا علی مافعلتم نادمین۔)

হে মুমিনগণ! যদি কোন অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি তোমাদের কাছে সংবাদ পরিবেশন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞাতবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। আল-হুজরাত-৬

মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-

(کفی بالمرء کذبا ان یحدث بکل ما سمع)

(পরিপূর্ণ আস্থা ও নির্ভরতা ছাড়া ) যদি কেউ কিছু শুনামাত্রই অপরের নিকট বর্ণনা করে তাহলে সে মিথ্যুক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মুসলিম শরীফ,১/১০  হা. নং-৫

উলামায়ে দেওবন্দের তাৎক্ষণিক বলিষ্ঠ ভূমিকার ফলশ্রুতিতেই পাক-ভারত ও উপমহাদেশে, বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে সকল প্রকার বাতিল পন্থীদের বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচী ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে, এটা দিবালোকের মতই সুস্পষ্ট। পক্ষান্তরে উলামায়ে দেওবন্দের সীমাহীন ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়েই দ্বীনের সঠিক শিক্ষাকার্যক্রমের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সহৃদয় বিবেচনার আলোকে উলামায়ে দেওবন্দ ও তাঁদের অনুসারীদের দ্বীনী অবস্থান মূল্যায়ন করবেন বলে আশা রাখি।

আরও জানুন

ইমাম আবূ হানীফা রহঃ ফার্সি ভাষায় নামায পড়ার অনুমতি দিয়েছেন?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম হজরত। আশা করি পবিত্র ঈদ-উল ফিতর আপনার অনেক সুন্দরভাবে কেটেছে । হজরত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস