প্রশ্ন
আসসালামুওয়ালাইকুম।
মৃত ব্যক্তির জন্য ৩য়, ৪০তম এবং বাৎসরিকভাবে যে ওরশের অনুষ্ঠান করা হয় তা কি শরীয়াত সম্মত? এরকম অনুষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য দেয়া কি যায়েজ? অনুগ্রহ করে শরিয়াতের দলিল ভিত্তিক উত্তর দিয়ে ইসলামকে সঠিকভাবে জানাতে এগিয়ে আসুন।
মাসউদ
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এটি শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি নয়। এটি হিন্দুয়ানী পদ্ধতি। হিন্দুরা ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর তিনদিন পর্যন্ত আগুনে জ্বলতে দেয়। তারপর ৪র্থ দিন মৃতের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান করে, আবার ৪০দিনের দিনের দিন উক্ত মৃতের হাড্ডিগুলো নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আরেকটি খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আর বৎসরে উক্ত মৃত্যু দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
ইসলামে এসব দিবসের কোন মূল্যই নেই। যদি মূল্য থাকতো, তাহলে রাসূল সাঃ নিজেই তা পালন করতেন। রাসূল সাঃ এর ছেলেগণ নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু নবীজী সাঃ কোন সন্তানের বেলায়ই উক্ত রুসুমগুলো পালন করেননি।
খলীফায়ে রাশেদীনসহ কোন সাহাবী নবীজী সাঃ এর জন্য উপরোক্ত রুসুমগুলো পালন করেননি। কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফাসসির, কোন তাবেয়ী, কোন তাবে তাবেয়ী, কোন মুজতাহিদ ইমামগণ উক্ত রুসুম পালন করেননি।
কুরআন ও হাদীস বা ফিক্বহের কিতাবে এরকম রুসুমের কথা উল্লেখ নেই। তাই এসব পালন করা বিদআত। যে অনুষ্ঠান পালন বিদআত, সে অনুষ্ঠানে দান করাও জায়েজ নেই।
তবে মৃতের জন্য এমনিতে দুআর আয়োজন করা যেতে পারে নির্দিষ্ট দিনের পাবন্দী না করে। যেকোন দিন মৃতের ঈসালে সওয়াবের জন্য গরীবদের খাওয়ানো যায়। দান-সদকা করা যেতে পারে। কুরআন পড়ে ঈসালে সওয়াব করা যেতে পারে। কিন্তু ৩য়, ২১ বা চল্লিশা বা মৃত্যুবার্ষিকী ইত্যাদি তারিখ নির্ধারণ পূর্বক এসব রুসুম পালন বিধর্মীর অনুসরণের কারণে নিষিদ্ধ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৯৬৬, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৮৬২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৩২৭, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০১৬}
দুআ করার প্রমাণ
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
আর যারা পরবর্তীতে আসবে, তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, এবং আমাদের সেসকল ঈমানদার ভাইদের ক্ষমা করুন যারা আমাদের পূর্বে গত হয়েছে। {সূরা হাশর-১০}
দান-সদকা করার প্রমাণ
عن ابن عباس رضي الله عنهما أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوِفِيَت وَلَمْ توصِ أَفَيَنْفَعُهَا أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا؟ قَالَ: (نَعَمْ)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ রাসূল! আমার মা ইন্তেকাল করেছে কিন্তু তিনি কোন ওসীয়ত করেনি। আমি যদি তার নামে সদকা করি তাহলে কি তার কোন উপকার হবে? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ। {আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-৩৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-২৫১৫, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮০৬১, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৬৩০}
মৃতের পক্ষ থেকে পূণ্যের কাজ করার প্রমাণ
أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، قَالَ: أَمَرَتِ امْرَأَةٌ سِنَانَ بْنَ سَلَمَةَ الْجُهَنِيَّ أَنْ يَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ أُمَّهَا مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجَّ، أَفَيُجْزِئُ عَنْ أُمِّهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا، أَلَمْ يَكُنْ يُجْزِئُ عَنْهَا فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। সিনান বিন সালামা জুহানীর স্ত্রী রাসূল সাঃ কে বলেন, তার মা ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু হজ্ব করেননি। যদি তিনি তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করে দেন, তাহলে কি তার মায়ের পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ হবে? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ, যদি তার মায়ের উপর কোন ঋণ থাকতো, আর সে তার আদায় করে দিতো, তাকি আদায় হতো না, তেমনি হজ্ব আদায় হবে। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২৬৩৩}
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় এমতাবস্থায় যে, তার উপর রোযা আবশ্যক ছিল, তাহলে তা যেন তার আত্মীয়রা রেখে দেয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৯৫২, ১৮৫১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৪৭}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক–তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।