প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্
# আমি একজন ছাত্র | আমার দ্বারা কিছু গুনার জন্ম হইছে | মানুষ সেই গুনা গুলোকরতেছে | কিন্তু আমি সব গুনা থেকে তওবা করছি | এখন প্রশ্ন হলো তারা সেইগুনার কাজ গুলো করার ফলে আমার আমলনামায় কি গুনা লেখা হবে ? যদি লেখাহয় তাহলে আমার করণীয় কি?
# আমার একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল | ৫ বছর আমাদের রিলেসন ছিল এবং তার সাথে কিছু গুনা হইছে যা সেক্স রিলেটেড | ২ বছর হইছে আমি ওর সাথে কথা বন্ধ করে দিছি | তাবলিগ মেহেনত এর সাথে লেগে আল্লাহ আমাকে বুজ দিছে (আলহামদুলিল্লাহ)| এখন ওই মেয়ে আমার সাথে কথাবলতে চায়, আরো বলে যে ও অনেক কষ্টে আছে, অনেক বদদুয়া দেয় বলে যে “মন ভাঙ্গা মসজিদভাঙ্গা সমান | তুমি কক্ষনো সুখী হতে পারবানা ইত্যাদি ইত্যাদি” |
আর বিয়ার বেপার আমার বাসা থেকে ওর বেপার রাজি হবে না | সবচে বড় বেপার হলো তার এবং তার ফ্যামিলির মাঝে কোনো দিনদারি নাই | আমি ওকে প্রথম প্রথম দীন ইসলাম নিয়ে অনেক এডভাইস দিতাম কিন্তু ও আমার কোনো কথাই শুনত না এবং এখন পর্যন্ত শুনতেছে না |
প্রশ্ন হলো-
১. আমি যে তার সাথে সম্পর্ক বিদছেদ করলাম এর ফলে সে যে কষ্ট পাচ্ছে এতে আমার কোনো গুনা হবে কিনা?
২. ওকে আমি বিয়া না করলে আমার কোনো গুনা হবে কিনা?
৩. নামাজে এবং নামাজের বাহিরে ওর সাথে আমার ঘটে যাওয়া কিছু অশ্লীল মুহুত্তের কথা আমার মনে পরে যায় তখন কি করণীয় ? এতে কি আমার কোনো গুনা হবে ?
৪.আগে প্রেমর নেশায় আবেগ হয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছি,যা পূরণ করা যাবে না | এই ধরনের প্রতিশ্রুতির কি হুকুম ?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনি যা করেছেন, তা খুবই গর্হিত কাজ করেছেন। এজন্য সাচ্চা দিলে তওবা করুন। তওবা হল তিনটি জিনিসের নাম। যথা-
১-গোনাহটি ছেড়ে দেয়া।
২-পূর্বের গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩-ভবিষ্যতে আর কখনো সে গোনাহে লিপ্ত না হবার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া।{সূরা নিসা-১৭-১৮}
পয়েন্ট আকারে আপনার প্রশ্নের জবাব দেয়া হল।
১ম প্রশ্নের জবাব
গোনাহ আপনি যা করেছেন তা পূর্বেই করেছেন। এখন সে সম্পর্ক বাদ দিয়ে বরং গোনাহ থেকে রক্ষা পেলেন। বাকি কথা হল, যদি সম্ভব হয়, উক্ত মেয়েকেই বিয়ে করুন। যাতে করে আপনার মনে উক্ত মেয়ের প্রতি যে টান রয়েছে সেটি সর্বদা মনে রেখে গোনাহে লিপ্ত না হন।
২য় প্রশ্নের জবাব
বিয়ে না করলে গোনাহ হবে এমন কথা নয়। বাকি মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে কাউকে ঠকানো অবশ্যই গোনাহের কাজ। তাই বিবাহ না করলে উক্ত মেয়ে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
৩য় প্রশ্নের জবাব
গোনাহের কথা মনে করে মনে মনে আনন্দ নেয়াও গোনাহ। তাই এ থেকে সর্বাত্মকভাবে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে যখনি গোনাহের কথা মনে আসবে, তখনি মন থেকে তা দূরে করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। মৃত্যুর কথা, আখেরাতের কথা, হাশরের ময়দানের কথা, জাহান্নামের কথা মনে করলে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ চেষ্টাই করে যাবে।
তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে, সম্ভব হলে উক্ত মেয়েকে বুঝিয়ে সমঝিয়ে দ্বীনদারীর ওয়াদা করিয়ে বিয়ে করে ফেলাই উচিত। যাতে করে গোনাহের শিকড়ই উপড়ে যায়।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২
৪র্থ প্রশ্নের জবাব
কোন গোনাহের কাজের প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করা জায়েজ নয়। তাই আপনার গোনাহের কর্মের কোন প্রতিশ্রুতিই পূর্ণ করা আবশ্যক নয়।
وَلَا تَجْعَلُوا اللَّهَ عُرْضَةً لِّأَيْمَانِكُمْ أَن تَبَرُّوا وَتَتَّقُوا وَتُصْلِحُوا بَيْنَ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ [٢:٢٢٤
আর নিজেদের শপথের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না মানুষের সাথে কোন আচার আচরণ থেকে পরহেযগারী থেকে এবং মানুষের মাঝে মীমাংসা করে দেয়া থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ সবকিছুই শুনেন ও জানেন। {সূরা বাকারা-২২৪}
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِى هُوَ خَيْرٌ وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর কসম খায়, তারপর এর বিপরীত কাজে কল্যাণ দেখে, তাহলে সে যেন উক্ত কল্যাণধর্মী কাজটি করে এবং স্বীয় কসমের কাফফারা প্রদান করে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৩৬২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৩৫২,৪৩৪৭, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৯৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৮২৫১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-৫১৬, মুসনাদে ইবনুফ জিদ, হাদীস নং-১৩৬, মুসনাদে তায়ারিসী, হাদীস নং-১৩৭০, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১৪৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৩৪৫, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৭২৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৮৬৩৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১০৮, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬২৪৭}
আমাদের শেষ কথা
একজন অবেলা মেয়েকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে নোংরা কাজ করা। তারপর সুফী সেজে তাকে ভুলে যাওয়া কোন ভাল কাজ নয়। তাই আমাদের শেষ কথা থাকবে। আপনি সক্ষম হলে উক্ত মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। তাকে তাবলীগের মাস্তুরাত জামাতে প্রেরণ করুন। যাতে করে দ্বীনী বিষয় শিখতে পারে। উক্ত মেয়েকে দ্বীনদার বানিয়ে বিয়ে করে ফেললে আশা করি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে আশা করি।
বাকি যদি উক্ত মেয়ের মাঝে দ্বীনদারী আশার সম্ভাবনা না দেখা যায়, তাহলে তাকে একদম ভুলে যাওয়াই উচিত। কোন ভাবেই যেন উক্ত মেয়ের কথা আপনার মনে না আসে। আর আপনি দ্রুত কোন ভাল দ্বীনদার মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। বিয়ে করে ফেললে আশা করি এ গোনাহের পথ বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا، فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে কয়েকজন যুবক ছিলাম। তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যে বিবাহের সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা চক্ষুকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। আর যে ব্যক্তি তাতে অক্ষম, সে যেন রোযা রাখে, কেননা, তা যৌন শক্তিকে হ্রাস করে। {বুখারী, হাদীস নং-৫০৬৬,৪৭৭৯}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
Ukto same ghotona amar porichito ak jon ak bibahito mohilar sathe ghotiase jar husband 2-3 bosor bides thake thik moto khobor rakhe na and bajjik vabe dindaro na. sei mohila akhon ki korbe? Oi mohila akhon valo hote chai abong sei samir sathe thakteo chai na. Janale kritoggo thakbo.