প্রশ্নঃ
অমুসলিম ব্যক্তির নিকট থেকে সুদবিহীন ধার/কর্জ নিয়ে ব্যবসায় বাণিজ্য করা জায়েজ হবে কিনা ?
প্রশ্নকর্তাঃ
nasim haidar
nasimhaidar00@gmail.com
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا و مسلما
উত্তরঃ
হ্যাঁ। অমুসলিমদের থেকে ধার/কর্জ নেওয়া জায়েজ আছে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ مُشْرِكٌ مُشْعَانٌّ طَوِيلٌ بِغَنَمٍ يَسُوقُهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” بَيْعًا أَمْ عَطِيَّةً؟ – أَوْ قَالَ: – أَمْ هِبَةً “، قَالَ: لاَ، بَلْ بَيْعٌ، فَاشْتَرَى مِنْهُ شَاةً
আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময়ে এলোমেলো লম্বা লম্বা চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক ব্যক্তি তার বকরী হাঁকিয়ে উপস্থিত হল। নবী করীম (ﷺ) তাকে বললেন, এটা কি বিক্রির জন্য, না দান হিসেবে, অথবা তিনি বললেন, না হেবা হিসাবে? সে বলল, বরং বিক্রির জন্য। তখন তিনি তার কাছ থেকে একটি বকরী খরিদ করলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ২২১৬)
الفتاوی الھندیہ: (348/5)
لاباس بان یکون بین المسلم والذمی معاملۃ اذا کان ممالابدمنہ۔
প্রিয় ভাই! বর্তমানে কর্জে হাসানাহ কেউ দিতে চায় না। অথচ হাদীসে এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ-র সবচেয়ে বড় কারণ কর্জ আদায়ে গড়িমসি করা। এজন্য ধার/কর্জ নেওয়ার সময় তা আদায়ের মানসিকতা নিয়েই গ্রহণ করা।
এবিষয়ে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ»
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়তে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২২৯ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৮৭)
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এর যিম্মায় একজন লোকের এক নির্দিষ্ট বয়সের উট ঋণ ছিল। লোকটি তাঁর নিকট সেটির তাগাদা করতে আসল। তিনি সাহাবীদের বললেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা সে বয়সের উট তালাশ করলেন। কিন্তু তার চাইতে বেশী বয়সের উট ছাড়া পাওয়া গেলো না। তিনি বললেন, সেটি তাকে দিয়ে দাও। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনার পূর্ণ বদলা দিন। নবী (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৩৫ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৯৩)
আরেক বর্ণনায় আসছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَطْلُ الغَنِيِّ ظُلْمٌ، فَإِذَا أُتْبِعَ أَحَدُكُمْ عَلَى مَلِيٍّ فَلْيَتْبَعْ»
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা যুলুম। যখন তোমাদের কাউকে (তার জন্য) কোন ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা* করা হয়,তখন সে যেন তা মেনে নেয়।
*ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করা (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৪২ (আন্তর্জাতিক নং ২২৮৭)
তবে লেনদেন করার সময় নবীজি সাঃ এর সুন্নত সমূহ হলো,
১- সময় নির্ধারিত করে লেনদেন করা।
২- সময় লিখে রাখা।
৩- ইনসাফপূর্ণ ব্যক্তির মাধ্যমে লিখানো।
৪- সাক্ষীর মাধ্যমে লেনদেন করা।
এর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে সূরায়ে বাক্বারার ২৮২ নং আয়াতে।
والله أعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।
সাবেক শিক্ষার্থী ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সত্যায়নে
.মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা
পরিচালক: তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।