প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / খতমে তারাবী পড়া কি বিদআত?

খতমে তারাবী পড়া কি বিদআত?

প্রশ্ন

السلام عليكم

হজরত অনেক আহলে হাদিস ভাইয়েরা বলে থাকেন তারাবিতে কোরআন শরীফ খতম করা সহি হাদিস দারা দ্বারা প্রমানিত নয়। এটা বিদআত। তাদের এই কথাকে রদ করব কিভাবে???

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যারা তারাবীতে কুরআন খতমকে বিদআত বলেন, তারাই মূলত বিদআতি। কারণ, সালাফে সালেহীনের সকলেই তারাবীতে খতমে কুরআনের প্রবক্তা ছিলেন।  চার মাযহাবের সকল ইমামগণই তারাবীতে কুরআন খতমের প্রবক্তা ছিলেন।

বরং হযরত উমর রাঃ থেকে তিনবার খতমের বর্ণনাও পাওয়া যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রমজান মাসে খতমে কুরআনের বর্ণনা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْرَضُ عَلَيْهِ الْقُرْآنُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ، فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ،

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রতি রমজানে একবার কুরআন পেশ বা তিলাওয়াত করা হতো, তবে তার ইন্তিকালের বছর তার কাছ তা দু’বার পেশ বা তিলাওয়াত করা হয়। [ সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৭৯৩৮,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৬৯]

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ الْقُرْآنَ،

হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে কুরআন পেশ করেন। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৪৪০]

তারাবী নামাযে যেন  কুরআন খতম হয়, সেজন্য হযরত উমর রাঃ প্রতি রাকাতে কত আয়াত করে পড়বে তাও নির্দিষ্ট করে আদেশ দিতেন।

عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، قَالَ: ” دَعَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِثَلَاثَةِ قُرَّاءٍ فَاسْتَقْرَأَهُمْ، فَأَمَرَ أَسْرَعَهُمْ قِرَاءَةً أَنْ يَقْرَأَ لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثِينَ آيَةً، وَأَمَرَ أَوْسَطَهُمْ أَنْ يَقْرَأَ خَمْسًا وَعِشْرِينَ، وَأَمَرَ أَبْطَأَهُمْ أَنْ يَقْرَأَ عِشْرِينَ آيَةً “

হযরত উসমান নাহদী রহঃ বলেন, হযরত উমর রাঃ তিন ক্বারীকে ডাকলেন। তারপর তাদের কিরাত শুনলেন। দ্রুত তিলাওয়াতকারীকে আদেশ করলেন রমজানে (তারাবীর মাঝে) লোকদের (প্রতি রাকাতে) ত্রিশ আয়াত করে পড়ার, মধ্যম ধরণের তিলাওয়াতকারীকে পঁচিশ আয়াত এবং ধীরে তিলাওয়াতকারীকে বিশ আয়াত পড়ার হুকুম দিলেন। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩০০৪, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯৫]

عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «مَنْ أَمَّ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ فَلْيَأْخُذْ بِهِمُ الْيُسْرَ، فَإِنْ كَانَ بَطِيءَ الْقِرَاءَةِ فَلْيَخْتِمِ الْقُرْآنَ خَتْمَةً، وَإِنْ كَانَ قِرَاءَتُهُ بَيْنَ ذَلِكَ فَخَتْمَةٌ وَنِصْفٌ، فَإِنْ كَانَ سَرِيعَ الْقِرَاءَةِ فَمَرَّتَيْنِ»

হযরত হাসান বসরী রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি রমজানে লোকদের (তারাবীর) ইমামতী করে, সে যেন সহজতা অবলম্বন করে। যদি তার কিরাত ধীরে ধীরে হয়, তাহলে যেন এক খতম কুরআন পড়ে। যদি মধ্যম ধরণের হয়, তাহলে দেড় খতম। আর যদি দ্রুত হয়, তাহলে দুই খতম করবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২২, হাদীস নং-৭৭৬১]

كَانَ مُحَمَّد بن إِسْمَاعِيل البُخَارِيّ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ يجْتَمع إِلَيْهِ أَصْحَابه فيصلى بهم وَيقْرَأ فِي كل رَكْعَة عشْرين آيَة وَكَذَلِكَ إِلَى أَن يخْتم الْقُرْآن وَكَانَ يقْرَأ فِي السحر مَا بَين النّصْف إِلَى الثُّلُث من الْقُرْآن فيختم عِنْد السحر فِي كل ثَلَاث لَيَال

যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ এর বন্ধুরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী] নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন। {হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}

এখন কথা হল, যদি তারাবীতে খতম করা বিদআত হয়, তাহলে হযরত উমর রাঃ কি বিদআতি ছিলেন?

হযরত হাসান বসরী রহঃ কি বিদআতি ছিলেন?

ইমাম বুখারী রহঃ কি বিদআতী ছিলেন?

ইমাম আবূ হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মত পৃথিবী বিখ্যাত মুজতাহিদগণ কি বিদআত করতেন?

আল্লাহ মাফ করুন। পড়াশোনার কমতি যেন আমাদের আমলের বরবাদীর কারণ না হয়। তাই কোন মাসআলা বলার আগে, কোন ফাতওয়া দেবার আগে অবশ্যই বিজ্ঞ ও হক্কানী উলামাগণ থেকে তাহকীক বলে বলা উচিত।

(والختم) مرة سنة ومرتين فضيلة، وثلاثا أفضل (ولا يترك) الختم (لكسل القوم) (الدر المختار-2\601، باب التراويح)

السنة فى التراويح إنما هو الختم مرة، فلا يترك لكسل القوم (الفتاوى الهندية-1\130

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *