প্রচ্ছদ / প্রবন্ধ নিবন্ধ / হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (৩০)

হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (৩০)

নারীদের আপাদমস্তক পর্দায় আবৃত করা মানবাধিকার লংঘন এবং নির্যাতনমূলক।

হেযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ 

এসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে শালীনতার হুকুম দিয়েছে কিন্তু তার মানে কি এই যে নারীকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে,কিম্ভুতদর্শন অবয়বে ঘর থেকে বের হতে হবে?মোটেই নয়।কিন্তু এসব বিকৃতিই আজ সমাজের গভীরে দৃঢ়মূল হোয়ে আছে। স্বভাবতই এই অপ্রাকৃতিক শরীয়তের বিরুদ্ধে মোসলেম নারীর হৃদয় একসময় বিদ্রোহ কোরে উঠেছে,তারা প্রকৃত এসলামের রূপ সন্দর্শন করে নি,মানবাধিকার লংঘনকারী নির্যাতনমূলক পর্দাপ্রথাকেই তারা ভেবেছে এসলামের বিধান।এই অন্যায়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা খোদ এসলামকেই নিষ্পেষণের কল বোলে মনে কোরছে। (সম্পাদকীয়-দৈনিক দেশেরপত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সংখ্যা-১৫, সোমবার, ২৩ জুন ২০১৪)

পর্যালোচনাঃ

আপাদমস্তক পর্দায় আবৃত করাকি ইসলামের বিকৃতি নাকি এটি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত শরীয়তের বিধান?

চলুন কুরআন-হাদীস থেকেই এর উত্তর দেখে নেয়া যাকঃ

কুরআনের দলিলঃ

পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

ﻭَﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈْﻦَ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ۖ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে।(সূরা আন-নূর -৩১)

এই আয়াতে-
ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ

“তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে।”-এর তাফসীরে,

ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, “তা হল-পরিধেয় কাপড়,বোরখা ইত্যাদি।” অর্থাৎ মহিলারা তাদের পোশাকের উপর যে বোরখা পরিধান করেন তা সরে গিয়ে যদি পরিধেয় বস্ত্র কখনও কখনও দেখা যায় তাতে কোন দোষ নেই।কারণ এটা তার ইচ্ছাকৃত নয় এবং এটা বন্ধ করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়।হযরত হাসান (রহঃ), ইবনে সীরিন(রহঃ), আবুল জাওযা (রহঃ), ইব্রাহীম নাখয়ী(রহঃ) এবং আরও অনেকে হযরত ইবনে মাসঊদ (রাঃ)- এর এ মতামতের অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।(তাবারী-১৯/১৫৬)

ইবনে মাসউদ (রাঃ) -এর এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য ।

এরপর আল্লহ ﷻ বলেছেনঃ

وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ

এবং তারা যেন তাদের গলা ও বুক মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে।(সূরা নূর-৩১)

এ কথাটিও মুখ আবৃত করার নির্দেশ দেয়।কারণঃ

প্রথমতঃ মাথার কাপড় বা ওড়না দিয়ে গলা ও বুক আবৃত করতে হলে তা মুখের উপর দিয়ে নামিয়ে আনাই স্বাভাবিক ।

দ্বিতীয়তঃ মাথার চুল ,গলা ও বুক আবৃত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ফিতনা বা অশান্তি রোধের জন্য।আর এদিক থেকে মাথার চুল ,গলা ও বুক আবৃত করার চেয়ে মুখ আবৃত করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি ।মুখই সৌন্দর্য্যের মূল স্থান এবং মুখের সৌন্দর্য্যই মানুষকে বেশি আকর্ষিত করে।মুখ দেখতে পেলে মানুষ আর অন্যান্য অঙ্গের দিকে অত গুরুত্ব দিয়ে তাকায় না।তাহলে কিভাবে মনে করা যায় যে শরীয়তে মুখ খোলা রেখে চুল ,গলা ও বুক আবৃত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে?

এরপর আল্লহ ﷻ বলেছেনঃ

وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ

তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। (সূরা নূর-৩১)

এখানে আল্লহ ﷻ মুমিন নারীদের পায়ের অলংকার,তোড়া ইত্যাদির অবস্থান জানানোর জন্য সজোরে পদক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন ।
এভাবে আমরা দেখছি যে পদদ্বয়কেও আবৃত করতে হবে এবং পায়ের তোরার শব্দ করে পদচারনা করা যাবে না।একজন বিবেকবান মানুষ সহজেই বুঝতে পারবেন যে পদদ্বয়ের চেয়ে মুখের সোন্দর্য্য আরও বেশি আকর্ষনীয়।তাহলে আমরা কিভাবে কল্পনা করতে পারি যে আল্লহ ﷻ পায়ের অলংকারের শব্দ করতে নিষেধ করবেন অথচ মুখ অনাবৃত রাখতে বলবেন?

অপর আয়াতে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰٰ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)

হযরত ইসমাঈল ইবনে উলাইয়্যা (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি চাদর নিলেন এবং ঘোমটার মতো পরে মাথা-মুখ ঢেকে ফেললেন। কপাল, নাক ও বাম চোখও ঢাকলেন, ডান চোখ খোলা রাখলেন।
এরপর বললেন, ‘এভাবে আমাদেরকে চাদর পরে দেখিয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনে আওন, তাঁকে দেখিয়েছেন ,(বিখ্যাত তাবেয়ী)মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, আর তাঁকে দেখিয়েছেন , আবিদাহ সালমানী(রহঃ) (যিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর শাগরিদ ও শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী)’।

(তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ইবনে কাছীর- ৩/৮২৫ ;জামিউল বায়ান,তাবারী-২০/৩২৫)

এই আয়াতের তাফসীর থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা আবশ্যক ।

এতো গেল কুরআন মাজীদের দলিল।এবার চলুন হাদীসের দিকে দৃষ্টিপাত দেয়া যাক।

হাদীসের দলিলঃ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নাবী ﷺ বলেছেনঃ

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ‏

নারী হল ‘আউরাত’ বা গোপন যোগ্য। সে যখন বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।(তিরমিজী-১১৭৪; মিশকাত-৩১০৯; ইবনু খুযাইমা-১৬৮৫)

এ হাদীসে নারীকেই ‘আউরাত’ বা আবৃতব্য বলা হয়েছে, এ থেকে জানা যায় যে নারীর পুরো দেহই আবৃতব্য, এ থেকে কোনো অঙ্গ বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।শুধু একান্ত প্রয়োজনে চোখ উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে।

হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ نَظَرِ الْفُجَاءَةِ فَأَمَرَنِي أَنْ أَصْرِفَ بَصَرِي

আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে করণীয় কী-জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন।
(সহীহ মুসলিম-৫৫৩৭)

ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ فَكَيْفَ يَصْنَعْنَ النِّسَاءُ بِذُيُولِهِنَّ قَالَ ‏”‏ يُرْخِينَ شِبْرًا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَتْ إِذًا تَنْكَشِفَ أَقْدَامُهُنَّ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَيُرْخِينَهُ ذِرَاعًا لاَ يَزِدْنَ عَلَيْهِ ‏

যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে তাঁর কাপড় গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দিকে তাকাবেন না। উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন বললেন, মেয়েরা তাঁদের আচলকে কি করবে? তিনি ﷺ বললেন, এক বিঘৎ নিচে নামিয়ে দিবে। উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, তা হলে তো তাদের পা অনাবৃত হয়ে যেতে পারে? তিনি বললেন, তা হলে এক হাত নিচে ঝুলিয়ে দিবে। এর বেশী করবে না।( সুনানে তিরমিযী-১৭৩৭; সুনানে আবু দাউদ-৪০৭১, ৪০৭৩; ইবনে মাজাহ-৩৫৮০, ৩৫৮৩; সুনানে নাসাঈ-৫৩৩৬, ৫৩৩৭, ৫৩৩৮, ৫৩৩৯)

হাদিসটি মহিলাদের পা ঢেকে রাখার প্রমাণ বহন করে। আর এটা মহিলা সাহাবীদের নিকট খুবই পরিচিত। নিঃসন্দেহে দুই পায়ের গোড়ালী খোলা রাখার ফিতনা, মুখমন্ডল ও দু’কব্জি খোলা রাখার চাইতে নগণ্য। তাই মুখমন্ডল আবৃত রাখার গুরুত্ব কতটুকু তা এ হাদীস থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব ।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

قَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَاذَا تَأْمُرُنَا أَنْ نَلْبَسَ مِنَ الثِّيَابِ فِي الإِحْرَامِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تَلْبَسُوا الْقَمِيصَ وَلاَ السَّرَاوِيلاَتِ وَلاَ الْعَمَائِمَ، وَلاَ الْبَرَانِسَ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ أَحَدٌ لَيْسَتْ لَهُ نَعْلاَنِ، فَلْيَلْبَسِ الْخُفَّيْنِ، وَلْيَقْطَعْ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ

এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেনঃ নাবী ﷺ বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপি পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে তা হলে সে যেন মোজা পরিধান করে তাঁর গিরার নিচের অংশটুকু কেটে নেয়। তোমরা জাফরান এবং ওয়ারস লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগন মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা লাগাবে না। (সহীহ বুখারী-১৭১৯)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী ﷺ এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও হাত মোজা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- হজ্বের সময় পুরুষগণ যেমন শরীরের গঠনে সেলাইকৃত জামা পরিধান করতে পারবে না, তেমনি মহিলাগণ হাত ও চেহারার মাপের তৈরিকৃত পোশাক পরিধান করতে পারবে না। তবে তাদের তখন পর-পুরুষের সামনে তাদের চেহারা ও হাত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয় নি-যেমনিভাবে পায়জামা পরিধান নিষিদ্ধ হওয়ায় পুরুষদের জন্য সতর উন্মুক্ত রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি। বরং তখন পর্দার জন্য হুকুম হয় যে,যেমনিভাবে পুরুষগণ তখন আলাদা কাপড় পড়ে সতর ঢাকেন, তেমনি নারীগণ তখন চেহারার ওপর আলাদা কাপড় পরে ঝুলিয়ে পর্দা করবেন। তখন তারা দস্তানা বা হাত মোজা ব্যবহার না করে হাতকে কাপড়ের ভেতরে রেখে পর্দা করবেন।

তাওয়াফের সময় মহিলা সাহাবীদের নিকাব ব্যবহারঃ

ছাফিয়্যাহ বিনতে শায়বাহ বলেনঃ

ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻃَﺎﻓَﺖْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻫِﻲَ ﻣُﻨْﺘِﻘَﺒَﺔٌ

আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে নিকাব পরিহিত অবস্থায় কা‘বা ঘর তওয়াফ করতে দেখেছি।
(ইবনু সা‘দ ৮/৪৯)

আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ

ﻛُﻨَّﺎ ﻧُﻐَﻄِّﻲْ ﻭُﺟُﻮْﻫَﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ، ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻤْﺘَﺸِﻂُ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺣْﺮَﺍﻡِ

আমরা পুরুষদের হ’তে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম এবং ইহরামের পূর্বে চিরুনী করতাম।
(মুস্তাদরাক হাকিম-১/৪৫৪ ; ইরওয়া-১০২৩; সহীহ ইবনু খুযাইমা-হা/২৬৯০)

হাদিসটিতে “আমরা” বলা হয়েছে। সুতরাং এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেলো যে, মহিলা সাহাবীগণ পরপুরুষের সামনে অবশ্যই চেহারা ঢেকে রেখে পর্দা করতেন।

হযরত ফাতেমা বিনতে মুনযির (রহঃ) বলেনঃ

كُنَّا نُخَمِّرُ وُجُوهَنَا وَنَحْنُ مُحْرِمَاتٌ وَنَحْنُ مَعَ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ
আমরা আসমা বিনতে আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহা এর সঙ্গী ছিলাম। আমরা ইহরাম অবস্থায় মুখ ঢেকে ফেলতাম, কিন্তু তিনি আমাদেরকে কিছুই বলতেন না।(মুয়াত্তা মালেক-১/৪০৫ “ইহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল ঢাকা” ৬নং পরিচ্ছেদ, ১৮নং রেওয়ায়ত; মুস্তাদরাক হাকেম-১/৪৫৪)

উক্ত হাদিস অনুযায়ী মহিলারা গায়রে মাহরাম পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত করতেন। হাদিসটিতে আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা এখানে “বহুবচন” ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ ছাড়া অন্য নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।

কুরআন-হাদীস ও মহিলা সাহাবীদের কর্মপন্থা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, মহিলাদের আপাদমস্তক পর্দায় আবৃত করা মনগড়া কোন বিধান নয়, বরং এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল বিদ্যমান।

এরকম দলিলসমৃদ্ধ একটি ফরজ বিধানকে কটুক্তি করা কত বড় ধৃষ্টতা একবার চিন্তা করে দেখুন।

হেযবুত তওহীদের উক্ত লেখনীতে পর্দা নিয়ে কটুক্তির শব্দগুলো লক্ষ করুনঃ

কিম্ভুতদর্শন অবয়ব
এটি অপ্রাকৃতিক শরীয়ত
মানবাধিকার লংঘনকারী
নির্যাতনমূলক

যেখানে ইসলামের যেকোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও উপহাস, কটুক্তি,ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা কুফরী , সেখানে পর্দার মত ফরজ বিধান সম্পর্কে এ ধরনের নোংরা শব্দ ব্যবহার করা কতবড় অপরাধ ভেবে দেখুন।তাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ তার প্রমাণ নিচের হাদীসে বিদ্যমানঃ

আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেনঃ

إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ مَا فِيهَا يَهْوِى بِهَا فِى النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ

নিশ্চয়ই বান্দা অনেক সময় এমন বাক্য উচ্চারণ করে যার অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে ভেবে দেখা হয় না। অথচ তা তাকে জাহান্নামের এত নিচে নিক্ষেপ করে যার দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝের দূরত্ব থেকেও বেশি।’ (বুখারী – ৬৪৭৭; মুসলিম – ৭৬৭৩)

যারা এ ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত ,ঘৃণায় তাদের সঙ্গে উঠাবসাও ত্যাগ করতে হবে।

পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

وَقَدۡ نَزَّلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أَنۡ إِذَا سَمِعۡتُمۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ يُكۡفَرُ بِهَا وَيُسۡتَهۡزَأُ بِهَا فَلَا تَقۡعُدُواْ مَعَهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦٓ إِنَّكُمۡ إِذٗا مِّثۡلُهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ جَامِعُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡكَٰفِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا

আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী। (সূরা আন-নিসা-১৪০)

0Shares

আরও জানুন

হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম কি গান বাজনা করতেন?

প্রশ্ন লেখক কবি দার্শনিক জনাব ফরহাদ মজহার তার এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, “ইসলামে গান বাজনা …