প্রচ্ছদ / ভ্রান্ত মতবাদ / হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (১২)

হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (১২)

হেযবুত তওহীদের সত্যায়নে আল্লাহ মো’জেজা সংঘটিত করেছেন

হিযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ

আমাদের এমাম বোলছেন,বর্ত্তমানে সারা দুনিয়ায় এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি চালু আছে তা আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়,বরং প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত।প্রকৃত এসলাম কি তাও তিনি মানবজাতির সামনে পেশ কোরেছেন।এখন প্রশ্ন হল তার এই কথা সত্য না অসত্য তা আমরা কি কোরে বুঝবো,বর্ত্তমানে চালু থাকা হাজার হাজার এসলামী মতবাদের ভিড়ে তাঁরটাই যে সত্য সে ব্যাপারে কি কোরে নিশ্চিত হবো?-একমাত্র পথ -আল্লাহ যদি পূর্বের মতো কোন মো’জেজা ঘটিয়ে জানিয়ে দেন সেক্ষেত্রেই আমরা তা বুঝতে পারবো।কিন্তু আমাদের এমাম নবী রাসূল নন যে আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে মো’জেজা ঘটাবেন,তাই এখন কোন বিষয়কে সত্যায়ন করার প্রয়োজন হোলে তাঁর নিজেকেই মো’জেজা প্রদর্শন ছাড়া আর কোন পথ নেই।

তাই গত ২ ফেব্রুয়ারী ,২০০৮ তারিখে হেযবুত তওহীদ ও তাঁর এমামকে সত্যায়ন করার জন্য আল্লাহ নিজে ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ডের মধ্যে অন্তত ৮ টি মো’জেজা সংঘটিত কোরলেন ।মোবাইল ফোন যোগে এমামের একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণের সময় ২৭৫ জন নরনারীর উপস্থিতিতে আল্লাহ এ মো’জেজাগুলি সংঘটিত করেন।(আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষনা-৯)

পর্যালোচনাঃ

ক.

পন্নী সাহেবের মতে বর্তমান ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়।

হাদীসের বক্তব্যঃ

عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটিই থাকবে। (সহীহ মুসলিম-ইঃফা,হাদীস নং-৪৭৯৭)

ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﺠْﻤَﻊُ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺿَﻠَﺎﻟَﺔٍ ، ﻭَﻳَﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন অামার সকল উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্য করবেন না।(তিরমিযি হাদিস-২১৬৭;আবু দাউদ হাদিস-৪২৫৩)

এছাড়াও আরো অনেক হাদীস দিয়ে আমরা পূর্বের পর্বে প্রমাণ দিয়েছি যে প্রত্যেক যুগে অবশ্যই একটি দল হক্বের উপর থাকবে।ফলে ইসলাম বিকৃত হওয়ার কোন সুযোগ-ই নেই।

সুতরাং বর্তমান ইসলাম বিকৃত-এটি একটি ভিত্তিহীন কথা।

এরকম হাদীস বিরোধী মতবাদের স্বপক্ষে আল্লাহ ﷻ মু’জিজা প্রকাশ করে সত্যায়ন করবেন তা নিতান্তই হাস্যকর কথা।

খ.

#মু‘জিযা কাকে বলে?

মুহাক্কিক আলেমগণ বিভিন্ন আঙ্গিকে মু‘জিযার সংজ্ঞা পেশ করেছেন। ভাষ্য ভিন্ন হলেও সংজ্ঞাগুলোর মূল বক্তব্য এক ও অভিন্ন।

সংজ্ঞা-১.

আল্লামা মীর সায়্যিদ শরীফ জুরজানী রাহ. (৭৪০ হি.-৮১৬ হি.) মু‘জিযার সংজ্ঞায় বলেন,

المعجزة أمر خارق للعادة داعية إلى الخير والسعادة مقرونة بدعوى النبوة، قصد به إظهار صدق من ادعى أنه رسول من الله.

মু‘জিযা এমন বিষয়, যা অলৌকিক বা সাধারণ ও চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমরূপে প্রকাশ পায় এবং কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বান করে, যা নবুওতের দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তার দ্বারা এমন ব্যক্তির সত্যবাদিতা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য, যিনি দাবি করেন যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। (আত তা‘রীফাত, পৃ- ২২৫)

উপরিউক্ত সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায় যে, মু‘জিযার মধ্যে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা শর্ত, তাহলে তা মু‘জিযা বলে গণ্য হবে। শর্তগুলো এই-

ক. অলৌকিক বা সাধারণ ও চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়া।

খ. কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বান করা।

গ. নবুওতের দাবির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া।

ঘ. যিনি নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবি করেন, তার দাবির সত্যতা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য থাকা।

মু‘জিযার শর্তগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইমাম কুরতুবী (৬৭১ হি.) তার তাফসীর গ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআনে’র ভূমিকায়। (খ. ১, পৃ. ৭১-৭২)

সংজ্ঞা-২.

আল মু‘জামুল ওয়াসীত অভিধানে মু‘জিযার সংজ্ঞা এভাবে বর্ণিত হয়েছে-

هي أمر خارق للعادة يظهره الله تعالى على يد النبي،تأييدا لنبوته،وما يعجز البشر أن يأتوا بمثله.

মু‘জিযা হল অলৌকিকভাবে প্রকাশিত সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম বিষয়, যা আল্লাহ তাআলা কোনো নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করেন, তাঁর নবুওতের প্রতি সমর্থন-দান বা তার নবুওতকে শক্তিশালী করার জন্য এবং যা মানুষকে তার অনুরূপ ব্যতিক্রমী বিষয় উপস্থাপন করতে অক্ষম করে দেয়।’ (আল মু‘জামুল ওয়াসীত ,عجز শব্দমূল)

উপরোক্ত আলোচনা হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে,মু’জিযার একটি অন্যতম দিক হল- মু’জিযা নবুওয়াতের সাথে সম্পৃক্ত ।

মজার ব্যপার হল হিযবুত তাওহীদের উক্ত বইটিতেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে ।

বইটিতে “মো’জেজা কি” শিরোনামে লিখা হয়েছেঃ

“নবী রসূলগণ যে সত্যিই আল্লাহর তরফ থেকে মনোনীত ও নবুয়্যত প্রাপ্ত ব্যক্তি তা সত্যায়নের জন্য যে অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা তাঁরা আল্লাহর হুকুমে ঘটিয়ে দেখাতেন সেগুলোই হোচ্ছে মো’জেজা।”(আল্লাহর মো’জিজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-৭)

এর আগের বাক্যে লিখা হয়েছেঃ “অলৌকিক এ ঘটনাগুলি আল্লাহই ঘটাতেন,তবে নবীদের মাধ্যমে।”

সুতরাং তাদের লিখনী থেকেও একথাই প্রতিয়মান হয় যে,মু’জিযা নবীদের সাথেই খাছ।

গ.

পন্নী সাহেবের দাবি হচ্ছে তার প্রচারকৃত মতবাদ-ই প্রকৃত ইসলাম ।এবং তার মতবাদকে সত্যায়নের জন্য আল্লহ ﷻ মু’জিযা সংঘটিত করেছেন।

এবং যেহেতু তিনি নবী বা রাসুল নন,তাই আল্লাহ ﷻ নাকি নিজ থেকেই মু’জিযা সংঘটিত করেছেন ।

পন্নী সাহেব তার এই উদ্ভট দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ কুরআন-হাদীস থেকে দেখাতে পারবেন না।মু’জিযা কেবল নবীদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়।১৪০০ বছরের ইতিহাসে এমন কোন নজীর নেই যে আল্লাহ ﷻ নবী ছাড়া অন্য কারও কথা সত্যায়নের জন্য নিজ থেকে মু’জিযা প্রকাশ করেছেন।

নিজের মতবাদকে সত্য প্রমাণে পন্নী সাহেব নিজে থেকেই এমন উদ্ভট কথা আবিষ্কার করেছেন ।
অবশ্য ১৪০০ বছর পূর্বেই রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে এসব থেকে সতর্ক করে গিয়েছেন।

রাসূল ﷺ বলেছেনঃ

 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ ‏”‏ ‏.‏

শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোননি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলতে পারে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং -৭)

“তিনি নবী নন,তাই আল্লাহ ﷻ নিজেই মু’জিযা প্রকাশ করেছেন”-পন্নী সাহেবের এমন উদ্ভট দাবি উল্লেখিত হাদীসের বাস্তব উদাহরণ ।

[মাওলানা আহমাদ মায়মূন হাঃফি এর রিসালার সহায়তা নেয়া হয়েছে]
0Shares

আরও জানুন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে শিরক করেছেন?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি দাবী করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম …