প্রচ্ছদ / কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা / পুরুষের জন্য চার বিয়ের সুযোগ থাকার কথা হাদীসে আসে নি?

পুরুষের জন্য চার বিয়ের সুযোগ থাকার কথা হাদীসে আসে নি?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি ভালো আছেন। এক ভার্সিটির শিক্ষক বলতেছে,”পুরুষের জন্য চার বিবাহ করা কোনো হাদিসে নেই”। কথাটি কতটুকু সত্য?

উত্তর

وعليكم السلام  ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। হাদীসের ভান্ডার সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তিনি এমনটি বলেছেন। পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ ৪টি বিয়ের সুযোগ থাকার কথা কুরআনের সাথে সাথে হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত।

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ حَدَّثَهُ أَنَّهُ رَأَى رَجُلًا كَانَ يُقَالُ لَهُ غَيْلَانُ بْنُ سَلَمَةَ الثَّقَفِيُّ كَانَ تَحْتَهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ عَشْرُ نِسْوَةٍ، فَأَسْلَمَ وَأَسْلَمْنَ مَعَهُ، فَأَمَرَهُ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ ” يَتَخَيَّرَ مِنْهُنَّ أَرْبَعًا “

হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন উমর তার পিতা রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি দেখেছেন যে, গায়লান বি সালামা সাকাফী নামক এক ব্যক্তি যার অধীনে জাহিলী যুগ থেকে দশজন বিবি ছিল। তারপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। সেই সাথে তার স্ত্রীগণও ইসলাম গ্রহণ করলেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে স্ত্রীগণের মাঝে চারজনকে রাখার আদেশ করলেন। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৮৪৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪১৫৮, মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২৭৮১, সুনানে সগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৪১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৬০৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৯৫৩, সুনানে দারা কুতনী হাদীস নং-৩৬৯৪, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫৪৩৭]

عَنِ الْحَارِثِ بْنِ قَيْسِ بْنِ عَمِيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَسْلَمْتُ وَعِنْدِي ثَمَانِ نِسْوَةٍ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” اخْتَرْ مِنْهُنَّ أَرْبَعًا “

হযরত হারেছ বিন কায়স বিন আমীরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি, তখন আমার বিবি ছিল আটজন। একথা আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি আমাকে তাদের মাঝে চারজনকে রাখার আদেশ করেছেন। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৮৪৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৯৫২,সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২২৪১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৬৯০, সুনানে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৮৭২]

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَتَزَوَّجَ فَوْقَ أَرْبَعٍ،

কোন মুসলমানের জন্য চারজনের উর্ধে বিবাহ করা জায়েজ নয়। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৮৪৮, সুনানে সগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৪২০]

حَدَّثَتْنِي أُمُّ زَيْنَبَ، أَنَّ أُمَّ سَعِيدٍ أُمَّ وَلَدِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عنه حَدَّثَتْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَصُبُّ عَلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الْمَاءَ، وَهُوَ يَتَوَضَّأُ، فَقَالَ: يَا أُمَّ سَعِيدٍ ” قَدِ اشْتَقْتُ أَنْ أَكُونَ عَرُوسًا ” قَالَتْ: فَقُلْتُ: وَيْحَكَ مَا يَمْنَعُكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: ” أَبَعْدَ أَرْبَعٍ؟ ” قَالَتْ: فَقُلْتُ: تُطَلِّقُ وَاحِدَةً مِنْهُنَّ وَتَزَوَّجْ أُخْرَى قَالَ: ” إِنَّ الطَّلَاقَ قَبِيحٌ أَكْرَهُهُ “

উম্মে যয়নব রাঃ থেকে বর্ণিত। উম্মে উসাইদ ছিলেন হযরত আলী রাঃ এর উম্মে ওয়ালাদ। তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাঃ কে পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম। আর হযরত আলী অজু করছিলেন। তখন তিনি বললেন, হে উম্মে উসাইদ! আমি বাসর করতে চাই। তখন উম্মে উসাইদ বলেন, আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিমীন! আপনাকে মানা করেছে কে? তিনি বলেন, চারের বেশি হয়ে যাবে যে। তখন উম্মে উসাইদ বললেন, আপনার এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করুন। তখন হযরত আলী রাঃ বললেন, তালাক দেয়া নিকৃষ্ট কাজ। আমি এটা অপছন্দ করি। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৮৪৯]

এতগুলো হাদীসের কিতাবে পুরুষের চার বিয়ের বৈধতার কথা আসার পরও কোন ব্যক্তি যখন বলে যে, চার বিয়ের কথা হাদীসে আসেনি। তাহলে এটি তার অজ্ঞতা ছাড়া আর কী হতে পারে?

উক্ত শিক্ষককে বলুন, তিনি যেন তার সাবজেক্টে লেকচার দেন। কুরআন ও হাদীস বিষয়ে অজ্ঞতা সত্বেও ইলম ফলানোর দুঃসাহস না দেখান।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …