প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মুহতরাম, আমি সরাসরি ফোন দিয়েছিলাম। আপনি মেইল করতে বলেছিলেন। সংক্ষেপে আবার লিখি।
আমার স্ত্রী আমাকে ১ তালাক দেয়ার নিয়তে উকিলের কাছে যায়। কিন্তু উকিল তাকে বলে যে, বাংলাদেশী আইনে ১ তালাক দেয়ার নিয়ম নাই। তাকে ডিভোর্স দিতে চাইলে ৩ তালাকের কাগজেই সাইন করেই দিতে হবে এবং সেই ক্ষেত্রে ৯০ দিন সময় পাওয়া যাবে পুনঃরায় স্বামী স্ত্রীর বন্ধন টিকাই রাখতে, নয়ত ৯০ দিন পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে।
এটা শুনে আমার স্ত্রী তৎক্ষনাত ডিভোর্স পেপারে সাইন না করে চলে আসে । এবং আরো চিন্তা ভাবনা করে, সিদ্ধান্ত নেয় যেহেতু ৯০ দিনের ভিতরে মিমাংসা করা যাবে এবং আইন অনুসারে এটাই নিয়ম যে ৩ তালাকের পেপারেই সাইন করতে হবে, তাই সে এক তালাকের নিয়ত মনে রেখেই উল্লেখিত তিন তালাকের ডিভোর্স পেপার সাইন করে পাঠিয়ে দেয়।
যা অদ্যাবধি আমার হাতে এসে পৌছাই নাই। এবং সে এখন আমাকে জানায়। এবং জানতে চায়, এখন শরীয়াহ অনুসারে আমরা আর স্বামী স্ত্রী হিসাবে বর্তমান আছি কিনা?
হুজুর, আমিও আমার স্ত্রী কে ভালবাসি, এখন আমাদের বিষয় টার হালত কি, তা জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন, আমরা ২ জনই খুব পেরেশানির মধ্যে আছি, উল্লেখ্য আমি সিংগাপুর থাকি, এবং আগামি ৭ দিন পর আমার ফ্লাইট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তালাক প্রদানের পর তা নব্বই দিন প্রযোজ্য হবার সরকারী বিধানটি শরয়ী বিধানের খেলাফ। শরীয়তে উক্ত নিয়মের কোন ভিত্তি নেই।
তালাক দেবার মাধ্যমে সাথে সাথেই তা পতিত হয়ে যায়। যদি না তা কোন শর্তের সাথে সম্পৃক্ত করে।
আর তালাক বলা বা লিখে দেবার মাধ্যমে তালাক হয়ে যায়। মনের নিয়ত তখন ধর্তব্য থাকে না। বরং বাহ্যিক কর্মটাই ধর্তব্য হয়।
সেই হিসেবে আপনার স্ত্রী তিন তালাক লেখা আছে জানা সত্বেও নিজের উপর তালাক পতিত করার তালাকনামায় সাইন করার দ্বারা তিন তালাকই পতিত হয়ে গেছে।
তাই এখন আর তার সাথে ঘরসংসার করা আপনার জন্য বৈধ হবে না।
ইদ্দত শেষে যদি উপরোক্ত মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। সেখান থেকে কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়,বা তার স্বামীর মারা যায়, তাহলে ইদ্দত পালন শেষে তাকে আপনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবেন। এছাড়া আর কোন গত্যান্তর নেই। [কিতাবুন নাওয়াজেল-৯/৫২১-৫২৩]
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। [সূরা বাকারা-২৩০]
ولو استكتب من آخر كتابا بطلاقها وقرأه على الزوج، فأخذه الزوج وختمه وعنوانه وبعث به إليها، فأتاها وقع إن أقر الزوج أنه كتابه (رد المحتار-4/456)
ولو قال للكاتب: أكتب طلاق امرأتى كان إقرارا بالطلاق وإن لم يكتب (رد المحتار-4/456)
وإن كان الطلاق ثلاثا فى الحرة أو ثنتين فى الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا، ويدخل بها ثم يطلقها، او يموت عنها (الهداية-2/399)
উল্লেখ্য যে, আপনার স্ত্রীর নিজের উপর তিন তালাক পতিত করা তখনি শুদ্ধ হবে, যদি আপনি তাকে তিন তালাক পতিত করার ক্ষমতা প্রদান করে থাকেন।
কিন্তু আপনি যদি তাকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান না করে থাকেন,তাহলে কোন তালাকই পতিত হবে না।
কিংবা এক তালাকের ক্ষমতা প্রদান করে থাকেন, কিন্তু সে নিজের উপর তিন তালাক পতিত করে নিয়েছে, তাহলেও কোন তালাক পতিত হবে না।
وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة . (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452
ومحله المنكوحة واهله زوج عاقل بالغ مستيقظ (الدر المختار مع رد المحتار-4/431، مجمع الانهر-2/4، النهر الفائق-2/310
فى الدر المختار: (قَالَ لَهَا طَلِّقِي نَفْسَك وَلَمْ يَنْوِ أَوْ نَوَى وَاحِدَةً) أَوْ ثِنْتَيْنِ فِي الْحُرَّةِ (فَطَلَّقَتْ وَقَعَتْ رَجْعِيَّةً، وَإِنْ طَلَّقَتْ ثَلَاثًا وَنَوَاهُ وَقَعْنَ)
وفى رد المحتار: (قَوْلُهُ وَنَوَاهُ) أَيْ الثَّلَاثَ، وَأَفْرَدَ الضَّمِيرَ بِاعْتِبَارِ الْمَذْكُورِ، أَوْ لِأَنَّهَا فَرْدٌ اعْتِبَارِيٌّ وَقَيَّدَ بِهِ احْتِرَازًا عَمَّا إذَا لَمْ يَنْوِ أَصْلًا أَوْ نَوَى وَاحِدَةً أَوْ ثِنْتَيْنِ فَإِنَّهُ لَا يَقَعُ شَيْءٌ عِنْدَهُ كَمَا عَلِمْتَ (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب الأمر باليد-4/575)
لو قال: طلقى نسفسك واحدة، فطلقت نفسها ثلاثا لم تقع (الفتاوى السراجية، كتاب الطلاق، باب التوكيل والتفويض-221)
وكذا فى البدائع الصنائع-3/196)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]