প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / ধর্ষিতা মহিলার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করার হুকুম কী?

ধর্ষিতা মহিলার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

ধর্ষিতা মহিলার পেটে যে বাচ্চা আসে, সেই বাচ্চা ধর্ষিতা কী করবে? রাখবে নাকি নষ্ট করে দিবে? যেমন বার্মার বর্বর জালিম সেনাবাহিনী কর্তৃক কতিপয় ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারী এখন গর্ভবতী বলে শোনা যাচ্ছে। তারা কি গর্ভের সন্তান রাখবে নাকি নষ্ট করে দিবে?

নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

যদি বাচ্চার শরীরে রুহ চলে আসে, তাহলে তা নষ্ট করা যাবে না। নষ্ট করা জায়েজ হবে না।

পেটের বাচ্চার শরীরে রূহ আসে চার মাস পর। অর্থাৎ ১২০ দিন পর। পেটের বাচ্চার এতদিন হয়ে গেলে তাকে নষ্ট করা সর্বসম্মত মতানুসারে হারাম।

কিন্তু রূহ আসার আগে নষ্ট করার বিষয়ে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। অনেকের মতেই তা বৈধ। অনেক ফক্বীহদের মতেই তা মাকরূহ।

তবে যদি শারিরীক মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। কিংবা আগত  স্বাস্থ্যগত মারাত্মক সমস্যার শংকা হয়, তাহলে গর্ভজাত সন্তানের শরীরে রূহ আসার পূর্ব হলে গর্ভ নষ্ট করতে পারে।

যেহেতু ধর্ষিতা নির্যাতিতা। সামাজিকভাবে ছোট হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই তার ক্ষেত্রে পেটের বাচ্চার বয়স চার মাস হবার আগে নষ্ট করার সুযোগ থাকা বক্তব্যের উপর আমল করা যেতে পারে বলে মনে হয়।

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصْدُوقُ، قَالَ: ” إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ: اكْتُبْ عَمَلَهُ، وَرِزْقَهُ، وَأَجَلَهُ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ، ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوحُ،

 ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সত্যবাদী হিসেবে গৃহীত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা গোশতপিন্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, তার রিয্ক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২০৮]

جاء في الموسوعة الفقهيةنَفْخُ الرُّوحِ يَكُونُ بَعْدَ مِائَةٍ وَعِشْرِينَ يَوْمًا، كَمَا ثَبَتَ فِي الْحَدِيثِ الصَّحِيحِ الَّذِي رَوَاهُ ابْنُ مَسْعُودٍ مَرْفُوعًا: إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْل ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْل ذَلِكَ، ثُمَّ يُرْسِل الْمَلَكَ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ. وَلاَ يُعْلَمُ خِلاَفٌ بَيْنَ الْفُقَهَاءِ فِي تَحْرِيمِ الإْجْهَاضِ بَعْدَ نَفْخِ الرُّوحِ. فَقَدْ نَصُّوا عَلَى أَنَّهُ إِذَا نُفِخَتْ فِي الْجَنِينِ الرُّوحُ حُرِّمَ الإْجْهَاضُ إِجْمَاعًا. وَقَالُوا إِنَّهُ قَتْلٌ لَهُ، بِلاَ خِلاَفٍ

وفيه ايضا: فِي حُكْمِ الإْجْهَاضِ قَبْل نَفْخِ الرُّوحِ اتِّجَاهَاتٌ مُخْتَلِفَةٌ وَأَقْوَالٌ مُتَعَدِّدَةٌ، حَتَّى فِي الْمَذْهَبِ الْوَاحِدِ، فَمِنْهُمْ مَنْ قَال بِالإْبَاحَةِ مُطْلَقًا، وَهُوَ مَا ذَكَرَهُ بَعْضُ الْحَنَفِيَّةِ، فَقَدْ ذَكَرُوا أَنَّهُ يُبَاحُ الإْسْقَاطُ بَعْدَ الْحَمْل، مَا لَمْ يَتَخَلَّقْ شَيْءٌ مِنْهُ. وَالْمُرَادُ بِالتَّخَلُّقِ فِي عِبَارَتِهِمْ تِلْكَ نَفْخُ الرُّوحِ …… وَمِنْهُمْ مَنْ قَال بِالإْبَاحَةِ لِعُذْرٍ فَقَطْ، وَهُوَ حَقِيقَةُ مَذْهَبِ الْحَنَفِيَّةِ. (الموسوعة الفقهية الكويتية، حُكْمُ الإْجْهَاضِ بَعْدَ نَفْخِ الرُّوحِ- حُكْمُ الإْجْهَاضِ قَبْل نَفْخِ الرُّوحِ-2/57-58)

قَالَ فِي النَّهْرِ: بَقِيَ هَلْ يُبَاحُ الْإِسْقَاطُ بَعْدَ الْحَمْلِ؟ نَعَمْ يُبَاحُ مَا لَمْ يَتَخَلَّقْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَنْ يَكُونَ ذَلِكَ إلَّا بَعْدَ مِائَةٍ وَعِشْرِينَ يَوْمًا، وَهَذَا يَقْتَضِي أَنَّهُمْ أَرَادُوا بِالتَّخْلِيقِ نَفْخَ الرُّوحِ وَإِلَّا فَهُوَ غَلَطٌ لِأَنَّ التَّخْلِيقَ يَتَحَقَّقُ بِالْمُشَاهَدَةِ قَبْلَ هَذِهِ الْمُدَّةِ كَذَا فِي الْفَتْحِ،…. قَالَ ابْنُ وَهْبَانَ: فَإِبَاحَةُ الْإِسْقَاطِ مَحْمُولَةٌ عَلَى حَالَةِ الْعُذْرِ، أَوْ أَنَّهَا لَا تَأْثَمُ إثْمَ الْقَتْلِ اهـ (رد المحتار، كتاب النكاح، باب نكاح الرقيق، مَطْلَبٌ فِي حُكْمِ إسْقَاطِ الْحَمْلِ-4/336)

وفى البحر الرائق-3/215)

أمرأة عالجت فى إسقاط ولدها لا تأثم مالم يستبن شيئ من خلقه (البحر الرائق، كتاب الكرهاية-8/376

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– [email protected] 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …