প্রশ্ন
নাম-
বিষয়ঃ এবোরশান
এটা ২০০৭ এর ঘটনা। আমি তখন হাজব্যান্ডের সাথে প্রবাসে ছিলাম। হঠাত করে আমার প্রেগ্ন্যান্সি ধরা পরে। আমি খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড খুশি ছিল না। সে জোর করে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার এবরশন করায়। আমি রাজি ছিলাম না দেখে সে নানা রকম অশ্লীল গালিগালাজ, মেন্টাল টরচার করেছে। বলেছিল যদি এবরশন না করাই তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিবে ও বাচ্চার কোন রেস্পন্সিবিলিটি সে নিবে না। ওই দেশে আমার পাশে কাউকে পাইনি। সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় আমি তার প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হই। ওই সময় আমার সেই মানসিক জোর ছিল না, তাই আমি ডিভোর্স এর ব্যাপার চিন্তাও করতে পারিনি।
এখন আমার প্রশ্ন হলোঃ
১) এই কারনে কি আমিও সমানভাবে গুনাহের ভাগিদারী?
২) আমার কি রক্তমূল্য আদায় করতে হবে? যদি হয় তাহলে সেটার নিয়ম বিস্তারিত জানাবেন দয়া করে। আমার সন্তান তখন ৭ সপ্তাহের ছিল।
৩) আমার জীবনের এই করুন কাহিনী আমি ফেসবুকে একটি গ্রুপে গল্প আকারে লিখেছি। এটা কি গিবতের পর্যায়ে পড়বে? গ্রুপের সবাই জানে এটা আমার জীবনের ঘটনা। এছাড়া ঘটনাটি লেখার পর অনেক বোনই কমেন্টে আমার এক্স হাজব্যান্ডের এই কাজের জন্য তার প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেছে। তাকে খুনি বলেছে। এগুলো কি গিবত হবে? এখন এটা নিয়ে অনেকেই কনফিউজড। এব্যাপার গুলো একটু বিস্তারিত জানতে চাই। আপনি যেই উত্তর গুলো দিবেন সেটা আমি আপনার নাম সহ গ্রুপে পোস্ট করবো। রক্তমূল্য ও গিবতের ব্যাপারে আমরা সবাই আপনার উওরের অপেক্ষায় আছি। আশা করি আপনি ব্যাপার গুলো পরিষ্কার করবেন ইন শা আল্লাহ।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
১ম প্রশ্নের জবাব
যেহেতু আপনি উপরোক্ত কাজ করতে রাজি ছিলেন না। বরং অপরাগ হয়ে করেছেন। তাই উপরোক্ত অপরাধের গোনাহ আপনার কাঁধে বর্তাবে না। তাই এ বিষয়ে অহেতুক পেরেশান হবার কোন প্রয়োজন নেই।
فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٢:١٧٣]
অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়,তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল,অত্যন্ত দয়ালু। [সূরা বাকারা-১৭৩]
২য় প্রশ্নের উত্তর
এ বিষয়টিকে এভাবে আম পাবলিসিটি করা ঠিক হয়নি। মানুষের ভুল হতেই পারে। সেই ভুলকে বাহিরে বলে বেড়ানোর দ্বারা কোন সমাধান আসে না। ব্যক্তিগত ভুলকে আমভাবে প্রকাশ করা উচিত নয়।
গীবত হওয়া না হওয়ার মূলনীতি হল, যে কথা কারো সামনে বললে কষ্ট পাবে, সেই কথাটিই উক্ত ব্যক্তির আড়ালে বলার নাম হল গীবত।
কারো নাম উল্লেখ না করে, শুধু মানুষকে সতর্ক করার জন্য কারো দোষ আমভাবে বলাতে কোন সমস্যা নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْغِيبَةُ؟ قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ «قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত কী? তিনি বললেন, তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৭৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮৯]
اعلم ان حد الغيبة أن تذكر أخاك بما يكرهه لو بلغه سواء ذكرته بنقص فى بدنه، او فى نسبه، أو فى خلقه، أو فى فعله، أو فى قوله، او فى دينه، أو فى دنياه حتى فى ثوبه وداره ودابته (احياء العلوم، امام غزالى-3/77، مرقاة المفاتيح، امدادية-9/143، قديم-4/627)
ان المستمع لا يخرج من إثم الغيبة إلا أن ينكر بلسانه، فإن خاف فبقلبه (رد المحتار-9/588، احياء العلوم-3/78)
৬ অবস্থায় গীবত করার অনুমতি আছে। যথা-
১- জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।
২- খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
৩- বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি
৪- সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। উদাহরণতঃ মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ।
৫- প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।
৬- কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। {তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২}
وقد تجب الغيبة لغرض صحيح شرعي لا يتوصل إليه إلا بها وتنحصر في ستة أسباب الأول : التظلم فلمن ظلم أن يشكو لمن يظن له قدرة على إزالة ظلمه أو تخفيفه . الثاني : الاستعانة على تغيير المنكر بذكره لمن يظن قدرته على إزالته . الثالث : الاستفتاء فيجوز للمستفتي أن يقول للمفتي : ظلمني فلان بكذا فهل يجوز له أو ما طريق تحصيل حقي أو نحو ذلك؛ والأفضل أن يبهمه .الرابع : تحذير المسلمين من الشر كجرح الشهود والرواة والمصنفين والمتصدين لإفتاء أو إقراء مع عدم أهلية فتجوز إجماعاً بل تحب ، وكأن يشير وإن لم يستشر على مريد تزوج أو مخالطة لغيره في أمر ديني أو دنيوي ويقتصر على ما يكفي فإن كفى نحو لا يصلح لك فذاك وإن احتاج إلى ذكر عيب ذكره أو عيبين فكذلك وهكذا ولا يجوز الزيادة على ما يكفي ، ومن ذلك أن يعلم من ذي ولاية قادحاً فيها كفسق أو تغفل فيجب ذكر ذلك لمن له قدرة على عزله وتولية غيره الخالي من ذلك أو على نصحه وحثه للاستقامة ، والخامس : أن يتجاهر بفسقه كالمكاسين وشربة الخمر ظاهراً فيجوز ذكرهم بما تجاهروا فيه دون غيره إلا أن يكون له سبب آخر مما مر . السادس : للتعريف بنحو لقب كالأعور . والأعمش . فيجوز وإن أمكن تعريفه بغيره (روح المعاني في تفسير القرآن العظيم والسبع المثاني، سورة حجرات- 12)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]