প্রশ্ন
প্রিয় মুফতী সাহেব,
কুষ্টিয়া ইউনিভার্সিটির ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের ব্যাপারে কওমী উলামাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী? সেটা জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নকর্তা-আরীফুল ইসলাম, রাজশাহী।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘনায় মারা গেছেন। উম্মাহের এ দরদী মানুষটার জন্য আমরা প্রথমেই তার মাগফিরাত ও উঁচু মাকামের দুআ করে মতামত উল্লেখ করছি।
ব্যক্তি হিসেবে তিনি একজন ভাল মানুষ। খোদাভীরু ছিলেন। মুসলিম উম্মাহের একতার জন্য কাজ করার ইচ্ছে রাখতেন। তার জীবনের অনেক বিষয়ই আমাদের কাছে অনুসরণীয়। আমার মনে পড়ে, তিনি ২০১১ বা ১২ সালের দিকে সালাফী ও হানাফী উলামাদের মধ্যকার দূরত্ব কমানোর জন্য তিনি বাইতুস সালাম মিরপুর মাদরাসায় একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। যেখানে সালাফী বা কথিত আহলে হাদীস মানহাজের অনেক শায়েখদের মাঝে আমাদের মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার শ্রদ্ধাভাজন আলেম মাওলানা জাকারিয়া আব্দুল্লাহ এবং তরুণ প্রতিভাবান আলেম মাওলানা ইউসুফ সুলতান এবং আমি উপস্থিত ছিলাম।
সেখানে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সারমর্ম হল, ইখতিলাফী মাসায়েলগুলো আমরা সহনশীলতার সাথে প্রচার করবো। হাদীসের মতভিন্নতার কারণে সৃষ্ট মতভেদকে কখনোই বিভেদ বিশংবাদের কারণ বানাবো না। এ বিষয়ে তিনি সালাফী হানাফী সকল আলেমদের সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহের বিরুদ্ধে নতুন আওয়াজ তুলে ফিতনা সৃষ্টি করবো না।
আমরা সেদিন তার সুহৃয়তার পরিচয় পেয়েছিলাম।
তিনি সালাফী মনস্ক একজন আলেম ছিলেন। বাকি বাংলাদেশের অন্যান্য কট্টরপন্থী সালাফীদের মত তিনি ছিলেন না। মতভেদপূর্ণ মাসায়েলে উভয় পক্ষের দলীলই বলার চেষ্টা করতেন। সেই সাথে তার কাছে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য দিয়ে একটি মধ্যপন্থী অবস্থান তৈরীর চেষ্টা করতেন।
তার এ মধ্যপন্থী আচরণের ফলে একটি মধ্যপন্থী ফেতনার সৃষ্টি হচ্ছিল। সেটি হল, কিছু লোক না হানাফী থাকতো, না সালাফী হতো। বরং নিজেরাই হাদীস যাচাই করে মধ্যপন্থী মত নামে একটি নতুন মাযহাব তৈরীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
যা আরেক খতরনাক মতবাদের সূচনা করছিল। অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কুরআন ও হাদীস যাচাই করে মতামত ব্যক্ত করার মানসিকতা কতটা ভয়াবহ তা জ্ঞানী মাত্রই বুঝার কথা।
মোটকথা, তার মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি মুখলিসানা হলেও কর্মপন্থা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
কিন্তু তার মুখলিসানা কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা তার জন্য মনখুলে দুআ করি। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। বাকি তার লিখিত গ্রন্থাবলী যেমন “ইহয়াউস সুনান, ফিকহুল আকবার, হাদীসের নামে জালিয়াতি” প্রভৃতি রচনাবলীকে নিজে নিজে না পড়ে, একজন বিজ্ঞ কওমী আলেমের তত্বাবধানে পড়ারই আমাদের পরামর্শ। কারণ ইত্যাদি বইয়ে সঠিক কথার সাথে সাথে কিছু মনগড়া ও দুর্বল কথাও তিনি একত্র করেছেন। যা সাধারণ পাঠকগণ বুঝতে সক্ষম হবেন না।
আমরা তার বই পড়তে নিষেধ করছি না। বাকি একজন বিজ্ঞ কওমী আলেমের তত্বাধানে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]