প্রচ্ছদ / দান-সদকা-হাদিয়া / অন্যকে দেয়া ঋণের বদলে দানের টাকা রেখে দেয়া যাবে কি?

অন্যকে দেয়া ঋণের বদলে দানের টাকা রেখে দেয়া যাবে কি?

প্রশ্ন

From: মোহাম্মদ উবাইদ
বিষয়ঃ দানের টাকা থেকে নিজের কর্জ আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্নঃ
জনাব আমি একজন মাদ্রাসার শিক্ষক, আমার মাদ্রাসায় কিছু গরিব ছাত্র পড়ে, ওদের কিতাব বই কিনার জন্যে মাঝেমধ্যে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা হাওলাত (ঋণ) নেয়, যা কখনো ফেরত দেওয়ার তওফিক তাদের নাই, যদিও দেয় অনেক কষ্টকরে দিতে হয়,
আর আমার কাছে মাঝেমধ্যে ছাত্রদেরকে দান করার জন্য আমার বন্ধুরা টাকা পাঠায়,
এখন আমার জানার বিষয় হলো আমি ঐ দানের টাকা থেকে আমার পাওনা পরিষদ করতে পারবো কিনা, (বিঃদ্রঃ দানের টাকা তাদের হাতে দিয়ে আবার পাওনা হিসাবে ফেরত নেওয়া কষ্টকর, কারন এরা গরিব)বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো,

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার বন্ধুরা কি ধরণের দানের টাকা পাঠায় তা প্রশ্নে পরিস্কার নয়। যদি তারা সদকায়ে ওয়াজিবা তথা যাকাত, সদকাতুল ফিতির ইত্যাদি আবশ্যকীয় অনুদান পাঠায়, তাহলে তা আদায় হবার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া শর্ত।

এছাড়া ওয়াজিব সদকা আদায় হবে না।

সুতরাং উপরোক্ত দানের টাকা আপনার ছাত্রদের হস্তগত করা ছাড়াই টাকা রেখে দিলে আপনার বন্ধুদের ওয়াজিব সদকা আদায় হবে না।

এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেনঃ

প্রথমে দানের টাকা ছাত্রদের হাতে তুলে দিবেন। তারপর বলবেন, আমার কাছ থেকে যে টাকা ইতোপূর্বে ঋণ হিসেবে নিয়েছো, তা পরিশোধ কর।

এভাবে আগের দেয়া ঋণ পরিশোধ করে নিবে।

এটা খুবই সহজ পদ্ধতি। যতই গরীব হোক, উপরোক্ত সূরতে উস্তাদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ছাত্ররা ফেরত না দিয়ে রেখে দেবার বিষয়টি প্রায় অবিশ্বাস্য।

ছাত্রদের যখন ঋণ হিসেবে টাকা প্রদান করবেন, তখনি তাদের বলে দিবেন যে, আমি তোমাদের ঋণের টাকা যাকাত বা তোমাদের জন্য প্রদত্ব অনুদান থেকে নিয়ে নিবো। সেই হিসেবে আমি তোমাদের অনুদান গ্রহণ করার ওকীল তথা প্রতিনিধি।

উপরোক্ত স্বীকারোক্তি লিখিত বা মৌখিকভাবে ছাত্রদের কাছ থেকে নিয়ে নিলে, আগে খরচ করা টাকা অনুদান হিসেবে আসলে, তখন নির্ধারিত পরিমাণ টাকা নিয়ে নেয়া আপনার জন্য বৈধ হবে।

এক্ষেত্রে ছাত্রদের কাছে পুনরায় জানানো বা তাদের কাছে অনুদানের টাকা হস্তান্তরের প্রয়োজন নেই।

লিল্লাহ ফান্ড নামে আলাদা ফান্ড খুলুন। যাতে আপনার বন্ধুসহ গরীব ছাত্রদের কল্যাণকামী ব্যক্তিদের অনুদান জমা রাখা হবে।

তারপর যখন ছাত্ররা প্রয়োজনে আপনার কাছ থেকে টাকা চাইতে আসবে, তখন উপরোক্ত ফান্ড থেকে প্রদান করুন। তাহলে এর মাঝখানে আপনার পকেটের টাকা প্রদানের কোন প্রয়োজনই হবে না।

উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতির যেকোন পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

حيلة الْجَوَازِ أَنْ يُعْطِيَ مَدْيُونَهُ الْفَقِيرَ زَكَاتَهُ ثُمَّ يَأْخُذَهَا عَنْ دَيْنِهِ، (رد المحتار، كتاب الزكاة، مطلب فى زكاة ثمن المبيع وفاء-3/190-191

والحيلة ان يتصدق على الفقير ثم يأمره بفعل هذه الأشياء فتكون لرب المال ثواب الزكاة وللفقير ثواب هذا التقرب، (سكب الانهر على مجمع الانهر، كتاب الزكاة، باب فى بيان احكام المصرف-1/329، رد المحتار، كتاب الزكاة، باب المصرف-3/293)

وَيُشْتَرَطُ أَنْ يَكُونَ الصَّرْفُ (تَمْلِيكًا) لَا إبَاحَةً كَمَا مَرَّ (لَا) يُصْرَفُ (إلَى بِنَاءِ) نَحْوِ (مَسْجِدٍ وَ) (الى قوله) وقدمنا ان الحيلة ان يتصدق على الفقير ثم يأمره بفعل هذه الأشياء وهل له يخالف امره؟ لم أره والظاهر نعم،

لأنه مقتضى صحة التمليك، (رد المحتار، كتاب الزكاة، باب المصرف-3/291-294

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *