প্রশ্ন
*তার কি খোলা করা জায়েজ?
* এক অতৃপ্ত দুর্ভাগা মেয়ে ছোট থেকেই একটা ছেলেকে পছন্দ করে,পরবর্তীতে তার বিবাহ হয় যেখানে মা-বাবার মুখের দিকে চেয়ে নিজের বাসনাকে বিসর্জন দিয়ে বিবাহ করে। কিন্ত তার ধৈর্য্যের নিকট সে হেরে যায়। কিছুতেই পারেনা তাকে ভুলতে। স্বামীকে মোটেও সে বাসতে পারবেনা ভাল। পুরো হৃদয়, মন জুড়ে সেই ছেলেটাই, তাকেই চায়।
উল্লেখ্য সে ছোট থেকে এখন ও তাকে ভালবাসে। কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত অনিচ্ছা সত্বেও বিবাহ করতে হয়েছে, অথচ সেই স্বামীর প্রতি তার
কোন আকর্ষণ নেই পালিয় বাঁচলেই যেন শান্তি পায়।
এখন সে কি খোলা করতে পারবে?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে, স্ত্রীর সুবিধা অনুপাতে মুক্তি পাবার জন্য খোলা করার অধিকার স্ত্রীকে প্রদান করা হয়েছে। বনিবনা না হবার কারণ যদি স্বামীর জুলুম বা তার কোন দুর্বলতার কারণে হয়, তাহলে খোলা করার যৌক্তিকতা আছে। এতে শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই।
কিন্তু যদি স্ত্রীর নিজেরই দোষে খোলা করতে চায়, তাহলে খোলা করলেতো হয়ে যাবে, কিন্তু এতে করে স্ত্রী গোনাহগার হবে।
আবারো বলছি, যে কোন কারণেই খোলা করলে খোলা হয়ে যাবে, স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তাও হয়ে যাবে, কিন্তু যদি স্ত্রীর নিজের দোষেই খোলা করে থাকে,তাহলে স্ত্রী গোনাহগার থাকবে।
উপরোক্ত মাসআলা বুঝার পর আপনার প্রশ্নটির উত্তর খেয়াল করুন।
আপনার প্রশ্নের বিবরণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মূল সমস্যা মেয়েটির। তার মনের মাঝেই খারাবী রয়েছে। বিয়ের পরও পূর্ব পরিচিত কারো কথা মনে রাখা, গায়রে মাহরামের চিন্তা করা, তার কাছে যাবার ফিকির করা সবই চরম ঘৃণ্যতর। যা কোন ভদ্র ও আত্মমর্যাবান পরিবারের সন্তানরা কল্পনা করতে পারে না।
তা’ই উক্ত মেয়েটির উচিত তার এ হীন চিন্তা থেকে মুক্ত থেকে বর্তমান স্বামীকে নিয়েই সংসার করতে মনযোগী হওয়া। পূর্বের পুরুষের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিলেই বর্তমান স্বামীকে তার ভাল লাগবে। তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে। আর মনের মাঝে অন্য পুরুষের চিন্তা রেখে কখনো সংসার সুন্দরভাবে চলতে পারে না।
তারপরও যদি উক্ত মেয়ে স্বামীর সাথে খোলা করে তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যেতে চায়, তাহলে করতে পারে। সে খোলার মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তাও হয়ে যাবে। তারপর ইদ্দত শেষে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধও হতে পারে। বাকি তার এ অন্যায় আচরণের কারণে সে গোনাহগার হবে।
وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩]
আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে,তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে,তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]