প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম। আমি জানতে চাচ্ছি, সরকার বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যে আমাদের সাথে জুলুম করছে, সেক্ষেত্রে মিটার ছাড়া ডাইরেক্ট লাইন নিয়ে যদি বাসায় কিছু লাইট ফ্যান ব্যবহার করি, সেটা কি জায়েজ হবে?
সরকারের বিদ্যুৎ বিল এর সিষ্টেম হল, ৭৫ ইউনিট এর কম ব্যবহার করলে ৩ টাকা করে ইউনিট, আর ৭৬ ইউনিট থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহার করলে ৫ টাকা করে। এটা কি জুলুম নয়?
আর আমাদের এখানে অনেক লোডশেডিং হয়, তারপরও ৯০০ টাকা এর মত বিল আসে। যেটা আমাদের পক্ষে দেয়া কষ্টকর। তাই জানতে চাচ্ছি, মিটার ছাড়া সরকারের লাইন থেকে যদি কোন সংযোগ নেই, তা জায়েজ হবে কি না? জাযাকাল্লাহু খাইর।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রতিটি সরকারই মূলত জনগণের সেবক। যদিও অনেক সরকার সেবক না হয়ে প্রভূত্বের আসনে বসতে চায়। সেটি ভিন্ন বিষয়।
কয়েকটি বিষয় আগে পরিস্কার বুঝে নিন!
১
সরকার পরিচালিত হয় মূলত জনগণেরই ট্যাক্স, ভ্যাট ও বিভিন্ন বিলের টাকায়। সেই হিসেবে জনতার সার্ভেন্ট সরকার। জনগণের বেতনভূক্ত কর্মী।
২
জনগণকে যেসব সার্ভিস সরকার পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়, তা পরিচালনা করতে অনেক অর্থ সম্পদের প্রয়োজন। যা সরকার জনগণ থেকে সেবার মূল্য হিসেবে গ্রহণ করে নির্বাহ করে থাকে।
৩
সরকারী সম্পদের একক মালিকানা কারো নেই। খোদ সরকারে থাকা ব্যক্তিদেরও নেই। তা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সম্পত্তি।
উপরোক্ত তিনটি বিষয় বুঝে আসলে আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবার কথা যে, কারো সম্পদ অন্যায্যভাবে ভোগ করা বৈধ নয়। সেই হিসেবে জনতার সম্পদ সার্ভিস মূল্য প্রদান ছাড়া ব্যবহার করা কিভাবে বৈধ হতে পারে?
আপনিতো অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সরকারকে ঠকাচ্ছেন না, অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছেন কোটি মানুষের সম্পদকে। কারণ এসবের একক মালিক সরকার নয়। ১৬ কোটি মানুষ।
তাই এভাবে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ লাইন নেয়া এবং তা ব্যবহার করা কিছুতেই বৈধ হবে না।
হ্যাঁ, যদি বিল অন্যায্য হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে নিয়মমাফিক আবেদন করা উচিত। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন। কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে বিল কমানোর ব্যবস্থা করুন। বৈধ পন্থায় তা চেষ্টা করুন। কিন্তু অবৈধভাবে, অন্যায়ভাবে বিদ্যুৎ সুবিধা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
একটি জুলুমের প্রতিবাদ আরেকটি জুলুম বা অন্যায় দিয়ে হতে পারে না।
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:١٨٨
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। [সূরা বাকারা-১৮৮]
وَالْمُرَادُ بِالْكُفْرِ هُنَا الْمَعَاصِي، وَالْمَعْنَى لَا تُنَازِعُوا وُلَاةَ الْأُمُورِ فِي وِلَايَتِهِمْ وَلَا تَعْتَرِضُوا عَلَيْهِمْ إِلَّا أَنْ تَرَوْا مِنْهُمْ مُنْكَرًا مُحَقَّقًا تَعْلَمُونَهُ مِنْ قَوَاعِدِ الْإِسْلَامِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَأَنْكِرُوهُ عَلَيْهِمْ، وَقُومُوا بِالْحَقِّ حَيْثُمَا كُنْتُمْ،(مرقاة المفاتيح، كتاب الإمارة والقضاء-4/117
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]