প্রচ্ছদ / চিকিৎসা/তদবীর / মেয়েদের জন্য মেডিকেল কলেজে পড়া সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জবাব

মেয়েদের জন্য মেডিকেল কলেজে পড়া সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

আমি আহলিয়া আব্দুল বাসিত।

ঠিকানা টঙ্গী।

আমি একজন ৫ম বর্ষ মেডিকেল ছাত্রী। আমাদের একাডেমিক কোর্স ৬ বছর। তাবলীগের মেহনতের সাথে জড়ার পর আমি পূর্ণ শরয়ী পর্দা শুরু করি আল্লাহর ইচ্ছায়। এবং মাহরামের গুরুত্ব বুঝতে পারি। যেহেতু

আমাকে পড়াশোনার খাতিরে হাত মোজা খুলতে হতো এবং পুরুষ রোগী ধরতে হতো।

মাহরাম ছাড়া হোষ্টেলে থাকতে হতো।

ক্লাস করতে বাসে করে ৩০ মিনিটের রাস্তা পাস করে কলেজ গেইট যেতে হতো।

ভাইভা বোর্ড টিচাররা আমি যে প্রকৃত পরীক্ষার্থী এটা বুঝতে নেকাব খুলতে চাপ দিতো, মাঝে মাঝে ফেইলও করাতো।

সেহেতু আমি গোনাহের ভয়ে পড়া বাদ দিয়ে চলে আসি।

আমার হাজবেন্টও চায় না আমি পড়ি।

কিন্তু আমার শ্বশুর শ্বাশুরী খুব চান আমি পড়াটা শেষ করি। ফেমিলি থেকে খুব মুখে আমি দেওবন্দের ওয়েব সাইটে প্রশ্ন করি।

আর মুফতী মানসূরুল হক দা.বা. এর কাছে আমার স্বামী পরামর্শ চান।

উনি বলেন, পড়া জায়েজ নেই।
কিন্তু দেওবন্দ মাদরাসা থেকে এই এ্যানসার আসে। যার লিংক এটাচট আছে।

আমাদের স্থানীয় উলামাও বলেন পড়া শেষ করতে যা শুনে আমার পরিবার এবং শ্বশুরবাড়ীর পরিবার পক্ষ থেকে খুব চাপ আমার উপর।

কিন্তু আমার একটুও ইচ্ছে করে না।

এখন যেসব শ্রদ্ধেয় উলামাগণ পড়তে বলেছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, বর্তমান জমানায় দ্বীনদার মহিলাদের খুব দরকার। যেহেতু আমি পড়েই ফেলেছি, তাই আমার পড়া কমপ্লিট করাটাই উম্মতের খিদমাত হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হাত মোজা খুলতে সমস্যা নেই।

এখন আমি কি করতে পারি শরীয়া মতে?

আমার অনেক ফ্রেন্ড এরও একই জিজ্ঞাসা।

উল্লেখ্য যে, আমার বাসা ঢাকায় আর কলেজ নোয়াখালী।

মাহরাম গিয়ে আমার সাথে থাকবে এর কোন সুযোগ নেই।
দেওবন্দের ফাতওয়া লিংক
http://www.darulifta-deoband.org/showuserview.do?function=answerView&all=en&id=55011&limit=2&idxpg=0&qry=%3Cc%3ESOM%3C%2Fc%3E%3Cs%3EROP%3C%2Fs%3E%3Cl%3Een%3C%2Fl%3E

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বোন! আপনার পূর্ণ বিবরণ পড়ে আমাদের চোখের কোণের বেদনাশ্রু জমাট বেঁধেছে। হায়! একটি মুসলিম প্রধান দেশে একজন মুসলিম নারী তার ধর্ম পালন করতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এর চেয়ে বড় আফসোস ও হতাশার আর কী হতে পারে?

আমরা সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত আবেদন রাখবোঃ নারীদের জন্য পৃথক মেডিকেল কলেজ এবং পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে পড়াশোনা করার পরিবেশ কায়েম করার জন্য।

কয়েকটি মৌলিক কথা বলিঃ

পর্দা রক্ষা করা ফরজ। [সূরা নূর-৩০-৩১]

মাহরাম ছাড়া সফরের দূরত্বে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪২৩]

মাহরাম ছাড়া অনিরাপদ কোথাও নারীদের জন্য থাকা বৈধ নয়। [রদ্দুল মুহতার-২/১৫৭]

দ্বীনী শিক্ষার সাথে সাথে যে শিক্ষা মানুষের আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। সেসব বিষয় শিক্ষা করাও ফরজে কেফায়া তথা একদলের উপর শিক্ষা করা ফরজ।

ডাক্তারী পড়াশোনা মানুষের আবশ্যকীয় প্রয়োজন পূরণের অন্তর্ভূক্ত। তাই একদল মানুষের জন্য ডাক্তারী পড়াও ফরজ। সেই হিসেবে আপনার ডাক্তারী পড়াটি একটি শরয়ী ফরীজা আদায়েরই একটি মাধ্যম। তাই এটিকে একদম হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।

আপনার সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমাদের পরামর্শ হল, যেহেতু আপনার একাডেমিক পড়াশোনার ৬ বছরের কোর্সের মাঝে ৫ বছর ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি আছে আর মাত্র এক বছর। সেই সাথে আপনি বিবাহিত। পূর্ণ পর্দা রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করছেন। তা’ই আপনার উচিত বাকি পড়াশোনাটাও শেষ করা। বাকি প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও বাধ্য হয়ে শরীয়তের যেটুকু বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ তা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। [মুস্তাফাদ- ফাতাওয়া উসমানী-১/১৬৯]

বাকি সফরের দূরত্বের সফরের সময় একজন মাহরামকে সাথে রাখার চেষ্টা করুন। ঢাকায় বাসা থাকা অবস্থায় নোয়াখালী মেডিকেলে না পড়ে ঢাকায় বাকি পড়াটা শেষ করতে পারেন। কিংবা নোয়াখালীতে বাবা মায়ের সাথে বা শ্বশুর শ্বাশুরীর সাথে বাসা নিয়ে বাকি পড়াটা শেষ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শরয়ী বিধান লঙ্ঘণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া আরো কমে যাবে।

قَالَ فِي تَبْيِينِ الْمَحَارِمِ: وَأَمَّا فَرْضُ الْكِفَايَةِ مِنْ الْعِلْمِ، فَهُوَ كُلُّ عِلْمٍ لَا يُسْتَغْنَى عَنْهُ فِي قِوَامِ أُمُورِ الدُّنْيَا كَالطِّبِّ وَالْحِسَابِ (رد المحتار، مقدمة-1/42)

امْرَأَةٌ أَصَابَتْهَا قُرْحَةٌ فِي مَوْضِعٍ لَا يَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يَنْظُرَ إلَيْهِ لَا يَحِلُّ أَنْ يَنْظُرَ إلَيْهَا لَكِنْ تُعْلِمُ امْرَأَةً تُدَاوِيهَا، (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الْبَاب الثَّامِن فِيمَا يَحِلّ لِلرّجلِ النَّظَر إلَيْهِ وَمَا لَا يَحِلّ لَهُ-5/330)

وَالطَّبِيبُ إنَّمَا يَجُوزُ لَهُ ذَلِكَ إذَا لَمْ يُوجَدْ امْرَأَةٌ طَبِيبَةٌ فَلَوْ وُجِدَتْ فَلَا يَجُوزُ لَهُ أَنْ يَنْظُرَ لِأَنَّ نَظَرَ الْجِنْسِ إلَى الْجِنْسِ أَخَفُّ وَيَنْبَغِي لِلطَّبِيبِ أَنْ يُعَلِّمَ امْرَأَةً إنْ أَمْكَنَ (البحر الرائق، كتاب الكراهية، فصل فى النظر واللمس، لَا يَنْظُرُ مَنْ اشْتَهَى إلَى وَجْهِهَا إلَّا الْحَاكِمَ-8/192

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *