প্রশ্ন
আস্সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন নিন্মরুপ:-
আমি দুবাই থাকি। আমি একটি ৪ তারকা হোটেলে হাউজকিপিং সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করি। আমার হোটেলে ৬ টি নাইট ক্লাব আছে। এখানে এলকোহল বিক্রি হয় নর্তকীরা নাছ গান করে। তবে এই সবের সাথে আমি যুক্ত না। কারন আমি যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করি তার সাথে ক্লাব এরিয়ার কোন সম্পর্ক নাই। আমার কাজ হচ্ছে আবাসিক রুম ব্যাবসার ডিপার্টমেন্টে। গেষ্ট রুম ভাড়া নিবে থাকবে এবং চলে যাবে। গেষ্ট চলে গেলে আমার আন্ডারে ১৬ জন লোক কাজ করে তারা রুম ক্লিন করে রাখে পরবর্তী গেষ্টের জন্য।
এই গেল আমার কাজের কথা। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার অনারের যে ইসলামিক নিয়ম মতে হারাম ব্যাবসা তার সাথে আমি যুক্ত নই। আর এখানে কাজ করে আমি মসজিদে জামাতে নামাজ পড়তে পারি রোজা রাখতে পারি । এই বছর ওমরাহ ও পালন করে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ। তবে ইসলামের দুইটা জিনিস পালন করতেপারিনা এখানে। তা হলো দাড়ি রাখতে পারিনা আর টাই পরে কাজ করতে হয় আর টাখনুর নিচে পেন্ট পরতে হয়। আরেক সমস্যা হলো আমার অনার কিন্তু হিন্দু। এবং খাবার দাবার যারা বানায় তাদের প্রায় সবাই হিন্দু।
তো দাড়ি রাখার জন্য আমি চাই চাকুরিটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু প্রায় ৩ লাখ টাকা লোন আছে তাই ইচ্ছা থাকা সত্বে ও চাড়তে পারছিনা। আপ্নি বলেন এই কন্ডিসনে আমার কি এই কম্পানীতে কাজ করা হালাল হবে না হারাম। আর এখন দুবাই বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা চালু নাই আর কম্পানী ও চেন্জ করা যায়না। তাই এখন চাকুরী চাড়তে হলে বাংলাদেশেই চলে আসতে হবে। তা আমার জন্য কঠিনই হবে।
আশা করি উত্তর পেয়ে নিজেকে শোধরাতে পারবো।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনি যে অংশে চাকরী করেন, এর সাথে যেহেতু হারামের কোন সম্পর্ক নেই, তাই আপনি চাকুরীটি হারাম হবে না। এর থেকে প্রাপ্ত বেতনকেও হারাম বলা যাবে না। বলার কোন সুযোগও নেই।
আর হিন্দুদের পাকানো খাবার খেতে কোন সমস্যা নেই, যদি তা গোস্ত না হয়। যেমন গরু, মহিষ বা মুরগীর গোস্ত। যা নিয়মানুযায়ী জবাই না করলে খাওয়া জায়েজ নয়। এমন গোস্ত না হলে, এবং তারা উক্ত খাবারে হারাম বা অপবিত্র কিছু মিশ্রণ না করলে তা খেতে কোন সমস্যা নেই।
وَفِي التَّفَارِيقِ لَا بَأْسَ بِأَنْ يُضِيفَ كَافِرًا لِقَرَابَةٍ أَوْ لِحَاجَةٍ كَذَا فِي التُّمُرْتَاشِيِّ. وَلَا بَأْسَ بِالذَّهَابِ إلَى ضِيَافَةِ أَهْلِ الذِّمَّةِ (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الرابع عشر فى اهل الذمة الخ-5/347، المحيط البرهانى، كتاب الكراهية، الفصل السادس عشر اهل الذمة-8/70
তবে আপনার মূল সমস্যা হল, দাড়ি না রাখা। এটি ওয়াজিব। দাড়ি না রাখায় আপনার ওয়াজিব তরকের গোনাহ হচ্ছে। আপনি আপনার মালিককে বুঝিয়ে দাড়ি রাখার আবেদন করুন।
সেই সাথে টাখনুর নিচে জামা পরিধান করাও মারাত্মক গোনাহ। হাদীসে এর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই টাখনুর উপরে জামা পরিধান করার অনুমতি চান।
যদি সক্ষম না হন, তাহলে চেষ্টা করুন অন্য কোথাও চাকুরী জুটানো যায় কি না? অন্য কোথাও চাকুরী হয়ে গেলে এটি ছেড়ে দিন। হুট করে এটি ছেড়ে দেবার প্রয়োজন নেই।
বাকি আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন। যেন আল্লাহ তাআলা আপনার উক্ত গোনাহকে ক্ষমা করে দেন।
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروا اللحى وأحفوا الشوارب . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, টাখনুর নিচের যে অংশ পায়জামা বা লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকে তা জাহান্নামে যাবে। {বুখারী, হাদীস নং-৫৭৮৭, ৫৪৫০}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]