প্রচ্ছদ / তাসাউফ / চরমোনাই তরীকা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব

চরমোনাই তরীকা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম
প্রশ্নকারী: মোঃ মুজাহিদ ইসলাম রায়হান,
রংপুর, বাংলাদেশl
[[আমি চরমোনাই  সাপোর্ট করি♩ কিন্তু কিছু ভাই আমাকে নিম্নোক্ত প্রশ্ন গুলো করেছিল  ♩প্রশ্ন গুলো তাদের ভাষায় তুলে ধরলাম ♩ বিস্তারিত জবাব দিলে বাধিত  থাকব]]

প্রশ্ন:
১) চরমোনাই পীরের মাহফিলে মুরিদদের  লাফালাফি ,চিল্লাচিল্লি জায়েজ কি? (পীর সাহেব কি কিছু বলেছেন এ বেপারে?)

২) উচ্চ স্বরে দেহ মাথা ঝুকিয়ে জিকির করা জায়েজ কি? রাসুলুল্লাহ বা সাহাবাগণ কি এমন করত?

৩) শুধু ” ইল্লাল্লাহ  ” শব্দ দ্বারা জিকির জায়েজ কি?

৪)  ১২৬ তরিকা কি ও  কোথায় পেল?  রাসুলুল্লাহ বা সাহাবাগণ কি তরিকা মানত?

৫) রাসুল সাহাবাগণ কি  পীর  বা মুরিদ?( অর্থাৎ তখনো কি এসব ছিল? নাকি নব আবিষ্কৃত ?)

৬) পীর হওয়ার ধারা কি রাজতন্ত্র যে বাবা পীর তাই তার ছেলেও পীর? যেমন,ইসহাক রহ: পীর ছিলেন  ,তার ছেলে ফজলুল করীম রহ: পীর ছিলেন এবং বর্তমানে তার ছেলে রেজাউল করিম পীর হয়েছেন ?

জাজাকাল্লাহ …

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ম প্রশ্নের জবাব

এ বিষয়ে আমাদের সাই্টে অনেক আগেই একটি লিখা প্রকাশিত হয়েছে। দয়া করে দেখে নিন। লিংক-

চরমোনাই মাহফিলে মুরীদরা লাফালাফি করে কেন?

২য় প্রশ্নের  জবাব

এটি জিকিরের প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়। এটি আলাদা কোন সুন্নতী আমল নয়। যেমন মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ক্লাসভিত্তিক পড়াশোনা একটি প্রশিক্ষণ। যারা উদ্দেশ্য হল ইলম অর্জন করা। কিন্তু এ ক্লাসভিত্তিক পড়াশোনা সাহাবায়ে কেরাম করেননি। তাই বলে কি মাদরাসার ক্লাস ভিত্তিক পড়াশোনা বিদআত?

অবশ্যই নয়। কারণ এটি বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না। বিদআত হতে হলে, যে কাজটি করা হচ্ছে সেটিকে সওয়াবের কাজ মনে করা জরুরী। মূল কাজের সহায়ক মনে করলে তা তা বিদআত হয় না।

আমরা সবাই জানি। জিকির করাকে আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি। কিন্তু মাথা দুলানোকে আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না। তাহলে এটি বিদআত হয় কি করে?

বিদআতের সংজ্ঞা জানতে হলে পড়ুন- https://ahlehaqmedia.com/68-2/

৩য় প্রশ্নের জবাব

এ প্রশ্নের জবাবও অনেক আগেই আমাদের সাইটে প্রকাশিত হয়েছে। লিংক- ইল্লাল্লাহ জিকির কি শিরক?

৪র্থ প্রশ্নের জবাব

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম হাদীস সহীহ ও জঈফ হওয়া মানতেন না। তারা হাদীসের প্রকারভেদও মানতেন না। মুনকার, মুদাল্লাছ, হাসান, হাসান লিগাইরিহী, সহীহ লিজাতিহী, সহীহ লিগাইরিহী, হাসান লিজাতিহী হাদীসের ইত্যাদির প্রকারও তারা মানতেন না।

কিন্তু এসবই কি এখন বিদআত?

নবীজী সাঃ এর  জমানায় সনদেরও কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ তখন সবাই সরাসরি রাসূল সাঃ এর কাছ থেকে হাদীস শুনতেন।

কিন্তু পরবর্তীতে সনদের প্রয়োজন হয়েছে, যেমন বক্তব্যটি নবীজী সাঃ পর্যন্ত সূত্রবদ্ধ কি না? তা নির্ণয় করা যায়।

তেমনি রাসূল সাঃ এর সময় ধারাবাহিক আমলের সূত্র তথা তরীকা প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তা প্রয়োজন হয়েছে। যেন, কার আমলের পদ্ধতি ও সনদ রাসূল সাঃ পর্যন্ত সূত্রবদ্ধ তা নির্ণিত করা যায়।

তাই এটিকেও বিদআত বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। সূফীয়ায়ে কেরামের তরীকাকে বিদআত বললে হাদীসের সনদকেও বিদআত বলতে হবে। কারণ নবীজী সাঃ এর জমানায় এসব সনদ ছিল না।

জবাব কি?

সনদের সে সময় দরকার ছিল না। কারণ নবীজী সাঃ স্বয়ং উপস্থিত।

তেমনি আমলের সূত্র তথা তরীকা নবীজী সাঃ এর জমানায় প্রয়োজন ছিল না। কারণ যার পর্যন্ত তরীকা পৌছবে সেই নবীজী সাঃ নিজেই তখন জিন্দা।

৫ম প্রশ্নের জবাব

এর জবাবও আগেই প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন-

পীর মুরীদী এবং মাজার ওরস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মারেফত ও পীর মুরীদী প্রসঙ্গে জরুরী জ্ঞাতব্য

৬ষ্ঠ প্রশ্নের জবাব

যদি ৫ম প্রশ্নের জবাবের লিংকের দু’টি লেখা পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিজেই এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে।

আসলে পীর মূলত একজন পথ প্রদর্শক। একজন শিক্ষক। যার দায়িত্ব হল আল্লাহভোলা মানুষকে কুরআন ও হাদীসের পথে নিয়ে আসা। আল্লাহর মোহাব্বত মনেপ্রাণে সৃষ্টি করার মুজাহাদা শিক্ষাদাতার নাম হল একজন পীর বা শায়েখ।

সুতরাং শিক্ষকের ছেলেই যেমন শিক্ষক হতে পারে না। বরং তার যোগ্যতা লাগে। তেমনি পীরের পীরের ছেলে হলেই কেউ পীর হতে পারে না। বরং যোগ্যতা লাগে।

আর শিক্ষকের ছেলে যদি শিক্ষক হবার যোগ্য হয়, তাহলে আমাদের অভিযোগ করারতো কোন সুযোগ নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *