প্রশ্ন
কতিপয় আহলে কুরআন দাবি করেন নামায ২ ওয়াক্ত। শুধু কুরআন দিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায প্রমাণ করা যাবে?
প্রশ্নকর্তা-আবু জুনায়েদ।
চট্টগ্রাম।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
পবিত্র কুরআন দ্বারাও ৫ ওয়াক্ত নামায প্রমাণিত। দুই নামাযের কথা কোথাও বলা হয়নি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ (17) وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ (18)
অনুবাদ- সুতরাং তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর সন্ধ্যায় [মাগরিব ও ইশার নামায দ্বারা] ও প্রভাতে [ফজর নামায দ্বারা] এবং অপরাহ্নে [আসরের নামাযের দ্বারা] ও যোহরের [যোহরের নামায দ্বারা] সময়। আর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। {সূরা রূম-১৭-১৮}
সূরা রূমের উক্ত আয়াতে একই সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাযের সময় আল্লাহর পবিত্র ও মহিমা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর পবিত্রতা ও মহিমা প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম যে নামায একথা সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। {তাফসীরে রূহুল মাআনী-৮/২৯, মাআরিফুল কুরআন-৬ খন্ড, ২১ পারা, পৃষ্ঠা- ৪০)
সুতরাং একথা বলা যে, কুরআনে শুধু দুই ওয়াক্ত নামাযের কথা আছে। তাই নামায কেবল দুই ওয়াক্তই ফরজ। তা দ্বীনে ইসলাম অস্বিকারকারী কাফেরের বক্তব্য হতে পারে। কোন মুসলিমের হতে পারে না। যদি কোন মুসলমান এ দাবি করে তাহলে সে সুনিশ্চিতভাবে কাফের হয়ে যাবে।
যদি কুরআনে ৫ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলা নাও হতো, তবু নামায ৫ ওয়াক্তই ফরজ বলতে হবে মুসলমানদের। কারণ রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত হাদীসে পরিস্কার ভাষায় নামায ৫ ওয়াক্ত হওয়ার কথা এসেছে। রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস অস্বিকারকারী কাফের। কারণ রাসূল সাঃ এর কথাকে মানার নির্দেশ খোদ আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে। তাই রাসূল সাঃ এর কথা মানা মানে কুরআন মানা। তাঁর কথা অস্বিকার করা মানে কুরআন অস্বিকার করা।
হাদীস অস্বিকারকারী কাফের। এতে কোন সন্দেহ নেই। পবিত্র কুরআন পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে রাসূল সাঃ যা এনেছেন, যা বলেছেন তা মানতে। আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে। আর রাসূল সাঃ এর কথা আমল সবই হাদীসে বর্ণিত। সুতরাং রাসূল সাঃ কে মানা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসূল সাঃ কে অস্বিকার করা, তার কথাকে অস্বিকার করা মানে কুরআনের নির্দেশকেই অস্বিকার করা। সুতরাং নাম আহলে কুরআন রাখলেও আসলে তারা কুরআন অস্বিকারকারী। আর কুরআন ও হাদীস অস্বিকারকারী কাফের এতে কোন সন্দেহ নেই।
রাসূল সাঃ বলেন, সবই মূলত আল্লাহ তাআলার বাণী। তবে যদি হুবহু আল্লাহর শব্দে নবীজী সাঃ বর্ণনা করেন, তাহলে উক্ত শব্দকে বলা হয় কুরআন। আর যদি বক্তব্য ঠিক রেখে নিজের পক্ষ থেকে শব্দ দিয়ে বলেন, তাহলে উক্ত বক্তব্যের নাম হয় হাদীস। কুরআন ও আল্লাহর বাণী। আবার হাদীসও মূলত আল্লাহর বাণী। শুধু পার্থক্য শব্দে। শব্দ আল্লাহর হলে কুরআন। আর বক্তব্য আল্লাহর আর শব্দ নবীর হলে তার নাম হাদীস। একথাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4
তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলেন না, তবে তিনি তা’ই বলেন, যা তাকে আল্লাহ তাআলার জন্য প্রত্যাদেশ দিয়েছেন। {সূরা নাজম-৩-৪}
এ আয়াত পরিস্কার জানাচ্ছে যে, কুরআনও আল্লাহর বাণী এবং রাসূল সাঃ এর হাদীস ও আল্লাহর বাণী।
রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ অমান্য করে বা অস্বিকার করে কেউ মুসলিম থাকতে পারে না। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (7
রাসূল সাঃ যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়ে ধর, এবং যা থেকে বারণ করেন তা ছেড়ে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রচন্ড শাস্তিদাতা। {সূরা হাশর-৭}
আরো ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (31)
আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে আমাকে [মুহাম্মদ সাঃ] অনুসরণ কর। তাহলেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। {সূরা আলে ইমরান-৩১}
এক আয়াত মেনে আরেক আয়াত অস্বিকার করা কাফেরের কাজ। কোন মুসলমান একাজ করতে পারে না। পবিত্র কুরআনের আরেক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ (85)
তোমরা কি কুরআনের কিছু অংশের উপর ঈমান আন এবং কিছু অংশকে অস্বিকার করছো? তোমাদের মাঝে যারা এরূপ করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, এবং আখেরাতে তাদের নিক্ষিপ্ত করা হবে ভয়াবহ শাস্তিতে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কর্মকান্ড বিষয়ে অনবহিত নন। {সূরা বাকারা-৮৫}
সুতরাং পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, পবিত্র কুরআনে রাসূল সাঃ এর অনুসরণ, রাসূল সাঃ এর কথা মানার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা অস্বিকারকারী কুরআন অস্বিকার করার কারণে কাফের হিসেবে জাহান্নামী হবে।
আহলে কুরআন মুসলমানদের কোন দল নয়। এটি নাস্তিক ও কাফেরদের একটি দল। সরলপ্রাণ মুসলমানগণ এ কুফরী দলকে মুসলিম দল মনে করে বিভ্রান্ত হবেন না। আল্লাহ তাআলা আমাদের নাস্তিক-মুরতাদ, কাফের ও নামধারী মুসলিমদের হাত থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল বুহুসিল ইসলামিয়া ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]
জাযাকাল্লাহ খাইরান…… আল্লাহ আপনাকে ইসলামিক কাজে সহযোগিতা করুক…… আমিন