প্রশ্ন
আসসালামু অলাইকুম অরহমাতুল্লাহ,
আমি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক,চলতি বছর (2015 সালে) আমি একা একা বিবাহ করি। যেটা আমাদের উভয়ের পরিবারের অজানা,,,তাই আমরা বিয়ের অাগেই এই নিয়ত করেছিলাম যে,এখন বিয়েটা হয়ে যাক যাতে আমাদের ফোনে কথা বলা বা দেখা সাখ্খাতে কোন গুনা না হয়।অন্যদিকে আমরা পরিবারের বাবা মায়ের মনেও কষ্ট দিতে চাই না, তাই আমরা যেভাবেই হোক তাদের রাজি করে নতুন করে বিবাহ করতে চাই।
যাতে সাপ মরে লাঠিও না ভাঙ্গে। আসলে বিবাহ না করলে আমাদের অনেক গুনা হবার সম্ভাবনা ছিলো,,,,অন্যদিকে পরিবারকে বলাও সম্ভব ছিলোনা,,,
এখন প্রশ্ন::
1-আমি সবার উপস্থিতে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবো কিনা?
২-পারলেও নতুন করে দেন মোহর বাধঁতে হবে কিনা?
৩- যদি হয় আগের দেন মোহর তথা বিয়ে কি বাতিল হয়ে যাবে?
বিস্তারিত উত্তর ও পরামর্শ আশাকরি, ,,
ইন শা আল্লাহ ….
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি প্রথমবার বিয়ে শরয়ী মূলনীতি হিসেবে হয়ে থাকে, তাহলে আপনার জন্য পরিবারের সন্তুষ্ট করতে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে মোহর নির্ধারণ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-
১
প্রথম বিয়ের সময় নির্ধারিত মোহরের সমপরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা এবং স্বামী প্রথম মোহরই মূল মনে করে দ্বিতীয়বারেরটি শুধুই প্রথমবারের স্বীকারোক্তি হিসেবে মনে করা।
যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা, আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা ধরা। আর দ্বিতীয়বার এক লাখ টাকা মোহর বলার সময় প্রথম মোহরের স্বীকারোক্তি হিসেবে ধরে নেয়া। অর্থাৎ শুধুই এক লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।
এ পদ্ধতি জায়েজ।
২
প্রথম মোহরের তুলনায় বেশি মোহর নির্ধারণ করা। সেই সাথে অতিরিক্ত নির্ধারিত মোহরকে প্রথম মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরার নিয়ত করা।
যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বার মোহর নির্ধারণ করা হয় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজারকে প্রথম মোহরের সাথে বাড়িয়ে মোহর দেয়ার নিয়ত করে নিল। অর্থাৎ একলাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।
এটিও জায়েজ পদ্ধতি।
৩
প্রথম মোহরের মত বা কমবেশি মোহর নির্ধারন করা, সেই সাথে দ্বিতীয়বারের পূর্ণ মোহরকে প্রথমবারের মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরে নেয়া তথা মোহর বাড়িয়ে দেয়ার নিয়তে দ্বিতীয় মোহরকে শামিল করে নেয়া।
যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের মোহর নির্ধারণের সময় প্রথম মোহরের সাথে দ্বিতীয়বারের মোহরকে বাড়িয়ে দেয়ার নিয়ত করে নিল। অথাৎ মোট দুই লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।
এটিও জায়েজ আছে।
৪
দ্বিতীয় মোহর প্রথম মোহরের চেয়ে কম নির্ধারণ করা। আর স্বামী দ্বিতীয় মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।
যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় বার মোহর নির্ধারণ করা হল আশি হাজার টাকা। আর স্বামী আশি হাজার টাকা দেবার নিয়ত করে নিল।
এ পদ্ধতিতে স্বামীর জন্য মোহর কমিয়ে দেয়া জায়েজ হবে না। বরং প্রথম মোহর আদায় করা আবশ্যক। হ্যাঁ, স্ত্রী যদি কম নিতে রাজি হয়, তাহলে কম করে দেয়া জায়েজ আছে।
فى الدر المختار-وَفِي الْكَافِي: جُدِّدَ النِّكَاحُ بِزِيَادَةِ أَلْفٍ لَزِمَهُ أَلْفَانِ عَلَى الظَّاهِرِ
وَفِي الْخَانِيَّةِ: وَلَوْ وَهَبَتْهُ مَهْرَهَا ثُمَّ أَقَرَّ بِكَذَا مِنْ الْمَهْرِ وَقَبِلَتْ صَحَّ، وَيُحْمَلُ عَلَى الزِّيَادَةِ
وَفِي الْبَزَّازِيَّةِ: الْأَشْبَهُ أَنَّهُ لَا يَصِحُّ بِلَا قَصْدِ الزِّيَادَةِ (لَا يُنَصَّفُ) لِاخْتِصَاصِ التَّنْصِيفِ بِالْمَفْرُوضِ فِي الْعَقْدِ بِالنَّصِّ، بَلْ تَجِبُ الْمُتْعَةُ فِي الْأَوَّلِ وَنِصْفُ الْأَصْلِ فِي الثَّانِي.
(وَصَحَّ حَطُّهَا) لِكُلِّهِ أَوْ بَعْضِهِ (عَنْهُ) قَبْلَ أَوْ لَا، وَيَرْتَدُّ بِالرَّدِّ كَمَا فِي الْبَحْرِ
وقال ابن عابدين الشامى- حَاصِلُ عِبَارَةِ الْكَافِي: تَزَوَّجَهَا فِي السِّرِّ بِأَلْفٍ ثُمَّ فِي الْعَلَانِيَةِ بِأَلْفَيْنِ ظَاهِرُ الْمَنْصُوصِ فِي الْأَصْلِ أَنَّهُ يَلْزَمُ الْأَلْفَانِ وَيَكُونُ زِيَادَةً فِي الْمَهْرِ. وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ الْمَهْرُ هُوَ الْأَوَّلُ لِأَنَّ الْعَقْدَ الثَّانِيَ لَغْوٌ. فَيَلْغُو مَا فِيهِ. وَعِنْدَ الْإِمَامِ أَنَّ الثَّانِيَ وَإِنْ لَغَا لَا يَلْغُو مَا فِيهِ مِنْ الزِّيَادَةِ، كَمَنْ قَالَ لِعَبْدِهِ الْأَكْبَرِ سِنًّا مِنْهُ هَذَا ابْنِي لَمَّا لَغَا عِنْدَهُمَا لَمْ يَعْتِقْ الْعَبْدُ. وَعِنْدَهُ إنْ لَغَا فِي حُكْمِ النَّسَبِ يُعْتَبَرُ فِي حَقِّ الْعِتْقِ كَذَا فِي الْمَبْسُوطِ. اهـ. وَذَكَرَ فِي الْفَتْحِ أَنَّ هَذَا إذَا لَمْ يَشْهَدَا عَلَى أَنَّ الثَّانِيَ هَزْلٌ وَإِلَّا فَلَا خِلَافَ فِي اعْتِبَارِ الْأَوَّلِ، فَلَوْ ادَّعَى الْهَزْلَ لَمْ يُقْبَلْ بِلَا بَيِّنَةٍ ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ بَعْضَهُمْ اعْتَبَرَ مَا فِي الْعَقْدِ الثَّانِي فَقَطْ بِنَاءً عَلَى أَنَّ الْمَقْصُودَ تَغْيِيرُ الْأَوَّلِ إلَى الثَّانِي، وَبَعْضُهُمْ أَوْجَبَ كِلَا الْمَهْرَيْنِ لِأَنَّ الْأَوَّلَ ثَبَتَ ثُبُوتًا لَا مَرَدَّ لَهُ وَالثَّانِي زِيَادَةٌ عَلَيْهِ فَيَجِبُ بِكَمَالِهِ. ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ قَاضِي خَانْ أَفْتَى بِأَنَّهُ لَا يَجِبُ بِالْعَقْدِ الثَّانِي شَيْءٌ مَا لَمْ يَقْصِدْ بِهِ الزِّيَادَةَ فِي الْمَهْرِ، ثُمَّ وَفَّقَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ إطْلَاقِ الْجُمْهُورِ اللُّزُومَ بِحَمْلِ كَلَامِهِ عَلَى أَنَّهُ لَا يَلْزَمُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى فِي نَفْسِ الْأَمْرِ إلَّا بِقَصْدِ الزِّيَادَةِ وَإِنْ لَزِمَ فِي حُكْمِ الْحَاكِمِ لِأَنَّهُ يُؤَاخِذُهُ بِظَاهِرِ لَفْظِهِ إلَّا أَنْ يَشْهَدَ عَلَى الْهَزْلِ، وَأَطَالَ الْكَلَامَ فَرَاجِعْهُ: (رد المحتار، كتاب النكاح، باب المهر، مطلب فى احكام المتعة-3/112-113
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
খুব উপকার হল।জাযাকাল্লাহ