প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
ঈদের মাঠে ছামিয়ানা লটকানো বিষয় শরিঈ দলিল আছে কি।
অনুরোধ যদি ফিকহে্ কিতাব থেকে দলীল হয় তবে সেই ফিকহে্ কিতাবেরও
ব্যাখ্যা কোরআন সুন্নাহ্ থেকে করলে খুবই উপকৃত হবো।
ইসরাফিল আলম
মিঠাপুকুর,রংপুর
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
রাসূল সাঃ বৃষ্টির কারণে একবারই মসজিদে ঈদের জামাত পড়েছিলেন। বাকি সর্বদা মাঠে ঈদের জামাত পড়েছেন। তাই মাঠে ঈদের জামাত পড়াই সুন্নাত।
আর মাঠে শামিয়ানা টানানোর কোন প্রমাণ রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই খালি মাঠে শামিয়ানা ছাড়াই ঈদের জামাত করা সুন্নাহ সম্মত।
তবে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে, বা রৌদ্রের তাপ বেশি হলে প্রয়োজনে শামিয়ানা টানানো যেতে পারে। এটিকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটি বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না। বিদআত হবার জন্য উক্ত কাজটিকে দ্বীনের অংশ বা সওয়াবের কাজ মনে করতে হয়। আর শামিয়ানা টানানোকে কেউ দ্বীনের অংশ বা সওয়াবের কাজ হিসেবে করে না। কিংবা আবশ্যক হিসেবেও করে না। বরং প্রয়োজনের খাতিরে করা হয়।
আর বিদআত হবার জন্য দ্বীনের বিষয় তথা সওয়াবের বিষয় মনে করা আবশ্যক।
যেমন মসজিদে টাইলস লাগানোর কোন প্রমাণ হাদীসে নেই। মসজিদের সাথেই টয়লেট নির্মাণ করার কোন প্রমাণ হাদীসে নেই। মসজিদের সাথে হাউজ নির্মাণের কথা হাদীসে আসেনি। মেহরাব নির্মাণের কোন প্রমাণ হাদীসে নেই।
অথচ উপরোক্ত সকল কাজই করা হচ্ছে। কেউ এগুলোকে বিদআত বলছে না। কেন?
কারণ উপরোক্ত কোন কাজকেই সওয়াবের কাজ হিসেবে। সুন্নত হিসেবে, দ্বীনের অংশ হিসেবে করা হয় না। বরং মানুষের জরুরত হিসেবে করা হয়। তাই এসব বিদআত হবার প্রশ্নই উঠে না।
তেমনি ঈদের মাঠে শামিয়ানা টানানোর বিষয়টি সুন্নত হিসেবে, দ্বীন হিসেবে, সওয়াব পাবার আশায় কেউ করে না। রৌদ্র থেকে রক্ষা পেতে, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে করা হয়। তাই এসবকে বিদআত বলা। বা নাজায়েজ বলা আহমকী ছাড়া আর কিছু নয়। সেই সাথে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা বৈ কিছু হতে পারে না।
রাসূল সাঃ থেকে বিদআতের যে সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তাহল-
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।
১-
সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।
২-
দ্বীনী বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয়। যেমন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়। কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।
৩-
দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে। দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল এটা সওয়াবের কাজ। সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদী। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়,বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক।
উপরোক্ত সংজ্ঞাটি ভাল করে বুঝলে সহজেই বুঝে আসে, মসজিদ বিল্ডিং করা, মসজিদের সাথে টয়লেট নির্মাণ করা, মসজিদে টাইলস লাগানো, মসজিদে কার্পেট বিছানো, ঘড়ি লাগানো, ঈদের মাঠকে পাকা করা, তীব্র রোদের কষ্ট থেকে বাঁচতে ঈদের মাঠে শামিয়ানা টানানো কোনটিই বিদআত নয়। কারণ এসব নববী যুগে না থাকলেও এসব কোনটাকেই সওয়াবের কাজ হিসেবে করা হয় না। বরং দ্বীনী কাজের সহায়ক ও প্রয়োজন হিসেবে করা হয়। তাই এসবকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।