প্রচ্ছদ / ওয়াকফ/মসজিদ/ঈদগাহ / মসজিদের জমিদাতার সেচ্ছাচারিতার কারণে পাশে আরেক মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হবে কি?

মসজিদের জমিদাতার সেচ্ছাচারিতার কারণে পাশে আরেক মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হবে কি?

প্রশ্ন

বরাবর,

জনাব লুৎফর রহমান  ফরায়েজী

বিষয়: পাশাপাশি দুইটি মসজিদ তৈরীর বিষয়ে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে সমাধানের জন্য লিখিত ফতোয়ার আবেদন।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীউপজেলার চর মন্তাজ ইউনিয়নের চরলক্ষী গ্রামের বাসিন্দা । আমাদের গ্রামের একজন আলেম প্রায় ৫ বছর আগে একটি জুময়া মসজিদ তৈরী করেন । মসজিদ তৈরীর আগে এলাকাবাসীদের সাথে কোন আলোচনা করেন নাই, মসজিদ তৈরীর সময় এলাকাবাসীদের কাছে আথিক সাহাষ্য চায় । এলাকাবাসীদের সহায়তায় মসজিদ এবং ঈদের নামাজ পড়ার মত একটা মাঠ তৈরী করা হয়েছে । এলাকাবাসীদের সহায়তায় একজন ইমাম রেখে প্রায় ৪ বছর ধরে জামাতে সবাই নামাজ পড়েছিল । প্রায় ১ বছর ধরে এলাকাবাসী উত্ত মসজিদে নামাজ পড়ে না ।বতর্মানে মসজিদটিতে ২-৩ জন লোক নিয়মিত নামাজ পড়ে ।

এলাকাবাসী উত্ত মসজিদে নামাজ না পড়ার কারনঃ

১।  উত্ত আলেম মসজিদের জায়গা এবং ঈদের মাঠ তার ব্যত্তিগত জায়গার মত ব্যবহার করেন । মসজিদ কমিটির অনুমতি নেয় না ।মসজিদ কমিটি এবং এলাকাবাসী জানতে চাইলে বলেন আমার বাবার জায়গা, আমি ব্যবহার করব ।

২। উত্ত আলেম মৌখিক ভাবে বলেন জায়গা মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছি কিত্তু কোন কাগজপএ মসজিদ কমিটি এবং এলাকাবাসীকে দেখান না ।

৩। তাকে ইমাম হিসাবে রাখতে হবে । কিত্তু এলাকাবাসী তাকে ইমাম হিসাবে মানে না এবং তার পিছনে নামাজ পড়তে চায় না । উত্ত আলেম সাহেবের কথা হলো-ছেলে জম্ম দেয় কেন? তার থেকে কিছু পেতে । আরও বলেন-যার যার নামাজ সে পড়বে এবং সে হিসাব দিবে , আমি কাউকে মসজিদে আসতে বলি না এবং কাউকে মানাও করি না ।মন চাইলে আমার সাথে নামাজ করবে, না হলে পড়বে না।

৪। মসজিদের দানের টাকার বক্সের তালা ভেঙ্গে , মসজিদের দানের টাকা নিজের মত ব্যবহার করেন। মসজিদ কমিটি এবং এলাকাবাসীকে কিছু বলেন না । জানতে চাইলে বলেন, আমিতো চুরি করি নাই , পরে ফেরত দিবো।

গ্রাম্য মিমাংসাঃ

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মসজিদ কমিটি, এলাকাবাসী এবং উত্ত আলেমকে নিয়ে সমস্যাটি সমাধানের জন্য বহুবার বসেন। উত্ত আলেম ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সামনে রায় মেনে নেয়, কিত্তু পরে কিছুই মানে না । এলাকাবাসী মসজিদের জায়গার বাজার মূল্য নিয়ে তাকে মসজিদটি এলাকাবাসীর কাছে ছেড়ে দিতে বলেন , তাতেও তিনি রাজি হয় না।

এখন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং অন্য কেউ সমস্যাটি সমাধানের জন্য আর বসতে চায় না।কারন উত্ত আলেম কাউর কথা রাখে না । আমি নিজেও চেষ্টা করেছি, কোন লাভ হয় নাই।

এলাকাবাসীদের মতামতঃ

গ্রামের অধিকাংশ জনগন একমত হয়ে নতুন করে পাশাপাশি (উত্ত মসজিদ থেকে ১/২-১ কিলোমিটার দুরে) একটি মসজিদ তৈরী করে দেবার জন্য আমার কাছে অনুরোধ করেছে ।

আমার মতামতঃ

আমি এলাকাবাসীদেকে বলেছি- যদি কোরআন এবং হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে আবার মসজিদ তৈরী করতে কোন অসুবিধা না হয় তা হলে আমি মসজিদ তৈরী করে দিব। কিত্তু মসজিদ পরিচালনার ভার আমি নিতে পারবো না।কারন এলাকায় থাকি না, আমি শহরে থাকি এবং বতর্মানে সৌদি আরবে প্রকৌশলী হিসাবে আছি। এলাকাবাসী মসজিদ পরিচালনার ভার নিতে আগ্রহী । গ্রামের অধিকাংশ জনগন এবং বাচচারা কোরআন ও নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছে।

আবার নতুন করে পাশাপাশি (উত্ত মসজিদ থেকে ১/২-১ কিলোমিটার দুরে) একটি মসজিদ তৈরী, তাহলে সে কাজটি করা উত্তম হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাই?

এই বিষয়টির সঠিক সমাধান পাওয়ার জন্য আপনার বরাবর মসজিদের সমস্যাটির বিষয়ে লিখিত তথ্য পেশ করলাম।আমাদের লিখিত তথ্যাদি পড়ার পড়ে কুরআন এবং হাদিসের উপর ভিত্তি করে সঠিক সমাধান ([email protected] or[email protected] –এই mail এ মাধ্যমে পাঠাতেন তাহলে আমি সারা জীবন আপনার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতাম) দিতে আপনার সহানুভূতি কামনা করছি।

নিবেদক

S.M.Ziaul Haq

Civil Engineer

Kingdom of Saudi Arabia.

উত্তর

السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মসজিদের জন্য যায়গা আলাদা করে নামাযের জন্য দিয়ে দেবার দ্বারা উক্ত স্থানটি শরয়ী মসজিদে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তখন উক্ত স্থানের প্রতি কোন ব্যক্তি বিশেষের কোন ক্ষমতা বাকি থাকে না। তাতে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ তা আল্লাহর ঘর হয়ে যায়। আর আল্লাহর ঘরে সবার অধিকার সমান।

তাই উক্ত আলেম তার নিজের জমিটি মসজিদের জন্য আলাদা করে নামায পড়তে মসজিদ নির্মাণ করার দ্বারা এবং তাতে নামায শুরু হবার দ্বারা উক্ত স্থানটি শরয়ী মসজিদে পরিণত হয়েছে। এখন তিনি দান করেছেন বলে আলাদা কোন ক্ষমতা শরয়ী দৃষ্টিকোণ প্রদর্শন করতে পারবেন না। যদি করেন, তাহলে তিনি অন্যায় হস্তক্ষেপ করছেন।

আপনারা ঢাকা থেকে বা বরিশাল থেকে বড় আলেম উলামাদের ডেকে উক্ত আলেমের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করুন।

মসজিদের টাকা যথেচ্ছা ব্যবহার করা কবীরা গোনাহ। এটি খুবই নিন্দনীয় এবং নিচু মনের কাজ। এ থেকে সবারই বিরত থাকতে হবে।

যদি উক্ত আলেম আল্লাহর ঘরের এভাবেই পৈত্রিক সম্পদের মত ব্যবহার করতে থাকেন, দানকৃত টাকা নিজের পাওনার মত খরচ করতে থাকেন, তাহলে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা যেতে পারে।

তাছাড়া এক দুই কিলোমিটার দূরে আরেকটি মসজিদ প্রয়োজনে নির্মাণ করা যেতে পারে। বাকি প্রথম মসজিদটিকে একদম বিরান করা যাবে না। সেখানেও নিয়মিত জামাত চালু রাখতে হবে। এক মসজিদকে জামাতশূন্য করার জন্য আরেক মসজিদ নির্মাণ জায়েজ নয়।

তবে প্রয়োজনে আরেক মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ আছে। তাই যদি উপরোক্ত পদক্ষেপে কাজ না হয়, তাহলে আপনারা আরেকটি মসজিদ দূরে নির্মাণ করতে পারেন, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, কোনভাবেই যেন প্রথম মসজিদ বিরান না হয়।

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُولَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (سورة البقرة-114)

وَأَبُو يُوسُفَ – رَحِمَهُ اللَّهُ – مَرَّ عَلَى أَصْلِهِ مِنْ زَوَالِ الْمِلْكِ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ أَذِنَ فِي الصَّلَاةِ أَوْ لَمْ يَأْذَنْ، وَيَصِيرُ مَسْجِدًا بِلَا حُكْمٍ؛ لِأَنَّهُ إسْقَاطٌ كَالْإِعْتَاقِ، وَبِهِ قَالَتْ الْأَئِمَّةُ الثَّلَاثَةُ. (فتح القدير، كتال الوقف، فصل فى احكام المسجد، إذَا بَنَى مَسْجِدًا لَمْ يَزُلْ مِلْكُهُ عَنْهُ-6/234)

وفى البحر الرائق- الخامس من شرائطه الملك وقت الوقف…………. اما لو وقف ضيعة غيره على جهات فبلغ الغيرفأجازه جاز بشرط الحكم والتسليم، ( البحر الرائق-5/188)

فى الفتاوى الشامية- وحاصله أن شرط كونه مسجدا أن يكون سفله وعلوه مسجدا لينقطع حق العبد عنه لقوله تعالى { وأن المساجد لله } (الفتاوى الشامية –كتاب الوقف، مطلب فى احكام المسجد، 6/547)

وقيل: كل مسجد بنى مباهاة أو رياء وسمعة أو لغرض سوى ابتغاء وجه الله أو بمال غير طيب، فهو لا حق بمسجد الضرار، (الكشاف-2/310، سورة التوبة-107، روح المعانى-11/21، تفسير المدارك-1/651)

وعن عطاء: لما فتح الله تعالى الأمصار على يد عمر رضى الله عنه أمر المسلمين أن يبنوا المساجد وأن لا يتخذوا في مدينة مسجدين يضارّ أحدهما صاحبه. (الكشاف عن حقائق غوامض التنزيل، سورة توبة، الأية-107-2/214، تفسير روح المعانى-11/21، تفسير قرطبى-175/1)

عن عائشة رضى الله عنه قالت: أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يتخذ المسجد فى الدور وان تطهر وتطيب، (سنن ابن ماجه، ابواب المساجد، باب تطهير المساجد وتطيبها-55)

فلا يجوز لاحد مطلقا أن يمنع مؤمنا من عباده ياتى بها فى المسجد، لأن المسجد ما بنى إلا لها من صلاة واعتكاف وذكر شرعى وتلعليم علم وتعلمه وقرأة القرآن (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها-2/60، شرح الأشباه والنظائر للحموى-4/63)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *