প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / “তুমি ওমুক কাজ করলে তালাক” বলার পর কাজটি করলে তালাক হবে কি?

“তুমি ওমুক কাজ করলে তালাক” বলার পর কাজটি করলে তালাক হবে কি?

প্রশ্ন

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্।
হযরত আমি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

আমার স্ত্রীর সাথে অনেক সময় ঝগড়া লাগতো।
আমার অপছন্দের কাজ হলে আমি বলতাম : তোমার সাথে আমার থাকার ইচ্ছা হয় না। আমি তোমাকে তালাক দিয়ে দেব। তাকে একটা কাজ করতে নিষেধ করেছিলাম,  বলেছিলাম তুমি সেই কাজটা করলে তালাক।
সে উক্ত কাজ এ পর্যন্ত করে নি।

এর বেশ কিছুদিন পড়ে আরেকটা কাজের বিষয়ে আমি বলেছি যে অমুক কাজটি করলে তুমি তালাক। সে উক্ত কাজটি করেছে। এরপর শারীরিক প্রহার করে শাস্তি দেই। সে আবারও কাজটি করে।

উভয় সময়েই আমার ইচ্ছা ছিল ভয় ও শাসন করা।
এমতাবস্থায় আমার উপর ফায়সালা কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার উপরোক্ত বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে প্রথম কথার দ্বারা এখনো কোন তালাক পতিত হয়নি। যেহেতু আপনার তালাকের জন্য শর্তকৃত কাজটি আপনার স্ত্রী করেনি। যদি করতো তাহলে তালাক পতিত হয়ে যেতো।

যেহেতু দ্বিতীয় কাজটি আপনার স্ত্রী করেছে যার সাথে আপনি তালাকের শর্তারোপ করেছেন। তাই উক্ত কাজটি করার দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে গেছে।

বাকি কথা হল কয় তালাক পতিত হল? আপনি যদি বলে থাকেন “তুমি ওমুক কাজটি করলে তিন তালাক” তাহলে তিন তালাক পতিত হয়েছে। আর যদি বলে থাকেন  “কাজটি করলে তুমি দুই তালাক” তাহলে দুই তালাক পতিত হয়েছে। আর যদি শুধু “তালাক” বলে থাকেন, যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাক পতিত হয়েছে।

সেই হিসেবে ইদ্দত শেষ হবার আগেই আপনি আপনার স্ত্রীকে মৌখিক বা শারিরীক সম্পর্কে মাধ্যমে ফিরিয়ে নেবার দ্বারাই চলবে। আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে মোহর ধার্য করে, দুইজন সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে নতুন করে বিবাহ করে নিতে হবে।বাকি পরবর্তীতে আপনি আর দুই তালাকের মালিক থাকবেন। তাই ভবিষ্যতে এমন বাজে শব্দ ব্যবহার করার আগে চিন্তা ফিকির করে নিতে হবে।

فى الفتاوى الهندية- وَإِذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً رَجْعِيَّةً أَوْ تَطْلِيقَتَيْنِ فَلَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا فِي عِدَّتِهَا رَضِيَتْ بِذَلِكَ أَوْ لَمْ تَرْضَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ (الفتاوى الهندية-1/470، هداية-2/394)

واذا اضافه إلى الشرط، وقع عقيب الشرط اتفاقا، مثل أن يقول لامرأته: إن دخلت الدار فأنت طالق، (الفتاوى الهندية، الفصل الثالث فى تعليق الطلاق-1/420، الهداية، كتاب الطلاق، باب الأيمان فى الطلاق-2/385، تبيين الحقائق، باب التعليق-3/109)

فى الفتاوى الهندية-إذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473

উপদেশ!

স্ত্রী কোন বাদি দাসি নয় যে, তাকে যাচ্ছেতাই করার অধিকার স্বামী রাখে। বরং সে একজন সম্মানীতা। তাকে তার যথার্থ সম্মান ও অধিকার প্রদান করা প্রতিটি পুরুষের দায়িত্ব। স্ত্রীর উপর হাত তোলা খুবই নিম্নমানের কাজ। এ কাজ থেকে বিরত থাকা পুরুষ মাত্রই আবশ্যক।

আর কথায় কথায় তালাক দেবার প্রবণতাও একটি বাচ্চাসূলভ মানসিকতা। পৃথিবীতে এত শব্দ থাকতে, সামান্য ঝগড়া লাগতেই তালাক বলতে হবে কেন?

কথাগুলো বেশি কঠোর হয়ে গেলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে আপনার ভালোর জন্যই কথাগুলো বলা। একজন মেয়ে তার পিতা মাতা, পরিবার, পরিচিতজন সবাইকে ছেড়ে যখন একজন পুরুষের বাড়িতে চলে এল। যে পুরুষের জন্য সব কিছু ছেড়ে দিল, সে পুরুষ তার সাথে দুর্ব্যবহার করবে, তার গায়ে হাত তুলবে এটা শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে নয় মানবতার দৃষ্টিতেও বর্বর কাজ। তাই এহেন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩}

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

আজানের সময় বা খানা খাওয়া ও বাথরুমে গমণ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় মাথায় কাপড় রাখার হুকুম কী?

প্রশ্ন আমার চারটি বিষয়ে জানার ছিলো : ________ ১, বাথরুমে অবস্থানকালীন সময়ে মাথায় কাপড় দেওয়ার …

No comments

  1. MD SHAZID SARKER

    জাজাকাল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *