প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / স্ত্রীর দিকে নিসবত ছাড়া তালাক দিলে কি তালাক পতিত হয় না?

স্ত্রীর দিকে নিসবত ছাড়া তালাক দিলে কি তালাক পতিত হয় না?

প্রশ্ন

আছ ছালামুআলাইকুম সম্মানিত মুফতি সাহেব ।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমার বউয়ের সাতে আমার বিশাল যগরা হয় ঘরের বিতর আমি ঘর থেকে বের হয়ে এভাবে বলি এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক ওর নাম ও তোমাকে এভাবে বলিনি। আবার পরে বলেছি তোরে তালাক দিলাম তখন আমার বউ গর্ভবতি ছিল তার পর রাতে মাদ্রাসার হুজুরের কাছে গেলাম এভাবে হুজুরকে বললাম তার পর হুজুর বলছেন কালকে আসেন পরদিন গেলাম হুজুর একটা কাগজ দিল কাগজে কি লিখেছেন আমার সঠিক মনে নেই একটা কথা মনে আছে তালাক দেওয়ার সময় নাম উচচারণ করেনি তালাক হবেনা এখন আমার বাচ্চার বয়স সাত মাস হুজুর আমি এখন কি করব এক দিগে অবুঝ শিশু অন্য দিকে আমার শ্শুর খুব গরিব হুজুর খুব টেনশনে আছি হুজুর আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলছি
আপনি বলছেন লিখে পাঠাতে হুজুর আমার মনে কোন শান্তি নেই হুজুর আমার প্রতিটি দিন কাটছে অশান্তিতে হুজুর এই অবুঝ শিশুটির কি হবে ।হুজুর দয়া উত্তর জানাবেন ।

প্রশ্নকর্তা- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাতার প্রবাসী।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার এখানে মাসআলা দু’টি। এক হল ঝগড়ার পর ঘর থেকে বের হয়ে এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক বলা। আর দ্বিতীয় হল স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায় আপনি তাকে সরাসরি সম্বোধন করে “তোকে তালাক দিলাম” শব্দে তালাক প্রদান করেছেন।

দু’টির ভিন্ন হুকুম।

প্রথম সূরতের হুকুম!

ঘর থেকে বের হবার পর তালাক প্রদান করার ক্ষেত্রে যদি কয়েকটি বিষয় পাওয়া যায়, যথা-

১-স্ত্রীকে তালাক দেবার নিয়ত না থাকে।

২-স্ত্রীর দিকে তালাকের নিসবত না করা হয়ে থাকে।

৩-স্ত্রীর নাম উচ্চারণ না করা হয়।

৪- না স্ত্রীর দিকে ইশারা করা হয়।

৫- না স্ত্রীর কোন গুণ বা দোষ বলে সম্বোধন করে তালাক দেয়া হয়।

এক্ষেত্রে দুই হুকুম

ক)

যদি উপরোক্ত ৫টি বিষয়ের কোন টি না পাওয়া যায়। বরং ঘর থেকে বেরিয়ে এমনিতেই মুখ থেকে তালাক বলে থাকেন। তাহলে এ সূরতে আপনি আল্লাহর কসম দিয়ে উক্ত কথাটি বলার দ্বারা আপনার কথাকে মেনে নেয়া হবে। এতে কোন পতিত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না। তাই আপনারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি থাকবেন।

খ)

কিন্তু যদি উপরের ৫টি অবস্থার কোন একটিও পাওয়া যায়, তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গেছে। এখন আর আপনারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি নেই।পৃথক থাকা আবশ্যক।

لَوْ قَالَ: امْرَأَةٌ طَالِقٌ أَوْ قَالَ طَلَّقْت امْرَأَةً ثَلَاثًا وَقَالَ لَمْ أَعْنِ امْرَأَتِي يُصَدَّقُ اهـ وَيُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّهُ لَوْ لَمْ يَقُلْ ذَلِكَ تَطْلُقُ امْرَأَتُهُ، لِأَنَّ الْعَادَةَ أَنَّ مَنْ لَهُ امْرَأَةٌ إنَّمَا يَحْلِفُ بِطَلَاقِهَا لَا بِطَلَاقِ غَيْرِهَا، فَقَوْلُهُ إنِّي حَلَفْت بِالطَّلَاقِ يَنْصَرِفُ إلَيْهَا مَا لَمْ يُرِدْ غَيْرَهَا لِأَنَّهُ يَحْتَمِلُهُ كَلَامُهُ، بِخِلَافِ مَا لَوْ ذَكَرَ اسْمَهَا أَوْ اسْمَ أَبِيهَا أَوْ أُمَّهَا أَوْ وَلَدَهَا فَقَالَ: عَمْرَةُ طَالِقٌ أَوْ بِنْتُ فُلَانٍ أَوْ بِنْتُ فُلَانَةَ أَوْ أُمُّ فُلَانٍ، فَقَدْ صَرَّحُوا بِأَنَّهَا تَطْلُقُ، وَأَنَّهُ لَوْ قَالَ: لَمْ أَعْنِ امْرَأَتِي لَا يُصَدَّقُ قَضَاءً إذَا كَانَتْ امْرَأَتُهُ كَمَا وَصَفَ (رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب سن بوش-3/248، وكذا فى الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الباب الثانى فى ايقاع الطلاق-1/358، وكذا فى قاضى خان على هامش الهندية-1/465، وكذا فى الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطلاق، نوع فى ايقاع بطريق الإضمار-3/280)

দ্বিতীয় সূরতের হুকুম!

আগের সূরতের উপর নির্ভরশীল আপনারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি ছিলেন কি না? যদি বাকি থেকে থাকেন। তাহলে এ বক্তব্য প্রদান করার দ্বারা আপনি আপনার স্ত্রীকে এক তালাকে রেজয়ী প্রদান করেছেন। তালাক প্রদান করার পর আপনার স্ত্রীর ইদ্দত তথা তিন হায়েজ শেষ হবার আগেই যদি আপনি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে থাকেন, মুখে বলে বা তার সাথে স্ত্রীসূলভ আচরণ করার দ্বারা, তাহলে আপনারা এখনো স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি আছেন।

আর যদি আপনার স্ত্রীর তিন হায়েজ শেষ হবার আগে আর তাকে ফিরিয়ে না থাকেন, তাহলে এখন আবার তাকে গ্রহণ করতে চাইলে আবার নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করে নিতে হবে।

উভয় ক্ষেত্রেই আপনি আর দুই তালাকের মালিক থাকবেন। কখনো বাকি দুই তালাক প্রদান করলে আপনার স্ত্রী আপনার থেকে হারাম হয়ে যাবে।

فى الفتاوى الهندية- وَإِذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً رَجْعِيَّةً أَوْ تَطْلِيقَتَيْنِ فَلَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا فِي عِدَّتِهَا رَضِيَتْ بِذَلِكَ أَوْ لَمْ تَرْضَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ (الفتاوى الهندية-1/470، هداية-2/394)

فى الفتاوى الهندية-إذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473)

সারকথা!

প্রথম অবস্থার ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রী বাকি আছে কি নেই? তা আপনি নিজেই করে নিন, আমাদের লিখিত মূলনীতি হবে। আর দ্বিতীয় সূরতে বিষয়টি পরিস্কার, যদি প্রথম সূরত হিসেবে আপনার স্ত্রী বাকি থাকে, তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর দ্বিতীয় সূরত হিসেবে এক তালাক পতিত হয়েছে। বাকি বিবাহ করতে হবে কি না? তা আপনিই ভাল বলতে পারবেন। আমরা শুধু মৌলিক বিধান বলে দিলাম।

শেষ কথা!

কথায় কথায় তালাক বলা খুবই জঘন্য কাজ। তালাক কোন খেলনার বিষয় নয়। নয় সংসারও। সামান্য ঝগড়া ঝাটি হতেই তালাক দিয়ে দেয়া বাচ্চাসূলভ মানসিকতা। এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

আমাদের দুনিয়ার জীবন খুবই অল্প দিনের। দুনিয়ার তুলনায় আমাদের আখেরাত প্রাধান্য দিতে হবে। আজ হোক কাল হোক আমাদের এ জগত সংসার ছেড়ে যেতেই হবে। দুনিয়ার ক্ষণকালের আবেগের কারণে যেন আখেরাত বিনষ্ট না হয়, সেদিকে সবারই সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।

আর স্ত্রীলোক প্রতিটি স্বামীর কাছে আমানত। তার উপর জুলুম করা খুবই নিম্নমানের কাজ। এ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *