প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / অসুস্থ্য বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির ফযীলত প্রসঙ্গে

অসুস্থ্য বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির ফযীলত প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

অসুস্থ্য হলে কী কী ফযীলত রয়েছে। দয়া করে জানাবেন কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

 

অসুস্থ্য ব্যক্তির অনেক ফযীলত রয়েছে। যা বিভিন্ন হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। যেমন-

أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা যার ভাল চান তাকে বিপদে লিপ্ত করে থাকেন। {বুখারী, হাদীস নং-৫৬৪৫, ৫৩২১}

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ»

হযরত আবূ সাঈদ রাঃ ও আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুসলমানের উপর পৌছেঁ না কোন রাগ, কোন বিপদ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন কষ্ট বা দুঃখ এমনকি তার শরীরে কোন কাঁটা ফুটে না, কিন্তু আল্লাহ তাআলা এর প্রতিদানে তার পাপসমূহ মাফ করে দেন। {বুখারী, হাদীস নং-৫৩৪১, ৫৩১৮}

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى، مَرَضٌ فَمَا سِوَاهُ، إِلَّا حَطَّ اللَّهُ لَهُ سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুসলমানের প্রতি কোন কষ্ট পৌছে থাকুক না কনে, চাই তা রোগ বা অন্য কিছু, আল্লাহ তাআলা তা দ্বারা তার গোনাহসমূহ ঝেরে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। {বুখারী, হাদীস নং-৫৬৬০, ৫৩৩৬}

أَبَا مُوسَى مِرَارًا يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مَرِضَ العَبْدُ، أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا»

হযরত আবূ মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, বান্দা যখন রোগাক্রান্ত হয় অথবা সফর করে [আর নিয়মিত ইবাদত বন্দেগী আদায় না করতে পারে] তখন তার জন্য তা’ই লিখা হয় যা সে সুস্থ্য অবস্থায় বাড়িতে থেকে আদায় করতো। {বুখারী, হাদীস নং-২৯৯৬, ২৮৩৪}

عَنْ سَعْدِ بْنِ سِنَانٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক তাঁর কোন বান্দার কল্যাণের ইচ্ছে করলে তাকে আগেভাগে দুনিয়ায়ই শাস্তি দিয়ে থাকেন, আর যার সাথে অকল্যানের ইচ্ছে করেন, দুনিয়ায় তাকে কোন শাস্তি না দিয়ে আরামে রাখেন, আর পরকালে তাকে পূর্ণ সাজা প্রদান করবেন। {তিরমিজী, হাদীস নং-২৩৯৬}

وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ.

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, বড় প্রতিফল রয়েছে বড় বিপদের বিনিময়েই। আল্লাহ পাক কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসলে বালা-মুসিবত দ্বারা তাকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে এতে খুশি থাকে, তার প্রতি আল্লাহ ও খুশি। আর যে এতে খুশি থাকে না, তার প্রতি আল্লাহ ও নাখোশ হোন। {তিরমিজী, হাদীস নং-২৩৯৬}

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ خَالِدٍ – قَالَ أَبُو دَاوُدَ: قَالَ إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَهْدِيٍّ السَّلَمِيُّ – عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ – وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ مَنْزِلَةٌ، لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللَّهُ فِي جَسَدِهِ، أَوْ فِي مَالِهِ، أَوْ فِي وَلَدِهِ» قَالَ أَبُو دَاوُدَ: زَادَ ابْنُ نُفَيْلٍ: «ثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ – ثُمَّ اتَّفَقَا – حَتَّى يُبْلِغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى»

হযরত মুহাম্মদ বিন খালেদ সুলামী তার পিতার সূত্রে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেছেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন বান্দার জন্য যখন আল্লাহর তরফ থেকে কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা তার পক্ষে কোন আমল দ্বারা লাভ করা সম্ভব নয়, আল্লাহ পাক তখন তাকে তার শারীরিক বা সন্তান-সন্ততিগত কোন বিপদে লিপ্ত করেন। তারপর তাকে ধৈর্যধারণের শক্তি প্রদান করেন, যেন সে তার জন্য আল্লাহর তরফ হতে নির্ধারিত ঐ মর্যাদা লাভ করতে পারে। {আবু দাউদ, হাদীস নং-৩০৯০}

إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَصَابَهُ السَّقَمُ، ثُمَّ أَعْفَاهُ اللَّهُ مِنْهُ، كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى مِنْ ذُنُوبِهِ، وَمَوْعِظَةً لَهُ فِيمَا يَسْتَقْبِلُ، وَإِنَّ الْمُنَافِقَ إِذَا مَرِضَ ثُمَّ أُعْفِيَ كَانَ كَالْبَعِيرِ، عَقَلَهُ أَهْلُهُ، ثُمَّ أَرْسَلُوهُ فَلَمْ يَدْرِ لِمَ عَقَلُوهُ، وَلَمْ يَدْرِ لِمَ أَرْسَلُوهُ» فَقَالَ رَجُلٌ مِمَّنْ حَوْلَهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الْأَسْقَامُ؟ وَاللَّهِ مَا مَرِضْتُ قَطُّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُمْ عَنَّا، فَلَسْتَ مِنَّا»

হযরত আমের রামী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ একবার রোগ সম্পর্কে আলোচনা করাকালে বললেন, মুমিনের রোগাক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ যখন তাকে আরোগ্য দান করেন, এটা তার পূর্বেকার গোনাহের প্রায়শ্চিত্ব এবং পরবর্তীর জন্য শিক্ষার বস্তু হয়। পক্ষান্তরে মুনাফিক রোগাক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ পাক তাকে আরোগ্য করলে সে সেই উটের ন্যায় হয়, যাকে তার মালিক বেঁধে রাখার পর পর ছেড়ে দিয়েছে। সে বুঝল না যে, কেন তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং কেন তাকে ছেড়ে দেয়া দিয়েছে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রোগ আবার কিরূপ? আল্লাহর কসম! আমিতো কখনো রোগাক্রান্ত হইনি। রাসূল সাঃ বললেন, তুমি আমাদের নিকট  থেকে উঠে যাও। তুমি আমাদের অন্তর্ভূ্ক্ত নও। {আবু দাউদ, হাদীস নং-৩০৮৯}

এরকম আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে। যা রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ফযীলতের উপর প্রমাণবাহী। তাই রোগাক্রান্ত হলে মাতম বা আফসোস নয়। সবর ও ধৈর্যধারণ করতে হবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন।আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *