প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / লা মাযহাবীদের পিছনে নামাযঃ হায়াতুন্নবী সাঃ কে অস্বিকারকারীর পিছনে নামায শুদ্ধ হবে না!

লা মাযহাবীদের পিছনে নামাযঃ হায়াতুন্নবী সাঃ কে অস্বিকারকারীর পিছনে নামায শুদ্ধ হবে না!

প্রশ্ন

লা-মাযহাবী বা গায়রে মুকাল্লিদ ইমামের পিছনে নামায পড়ার হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে ভাল হতো।

প্রশ্নকর্তা- মুহাম্মদ আমীর হুসাইন, বরিশাল।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

লামাযহাবী কয়েক প্রকারের রয়েছে। একেক প্রকারের একেক হুকুম। যথা-

১-যারা পূর্ববর্তী ফক্বীহ এবং বুজুর্গদের গালাগাল করে না। মন্দ বলে না। সাহাবায়ে কেরামকে হুজ্জত মানে।

২-যারা সাহাবায়ে কেরামের কথা ও আমলকে দলীল মানে না। পূর্ববর্তী ফুক্বাহায়ে কেরামকে গালাগাল করে।

৩-যারা লামাযহাবী হওয়ার সাথে সাথে কুফরী আকিদা পোষণ করে থাকে। যেমন আল্লাহ তাআলাকে কোন স্থানের মুখাপেক্ষী মনে করে। যেমন আল্লাহ তাআলা আরশের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলা এক স্থানে সীমাবদ্ধ ইত্যাদি।

এবং রাসূল সাঃ কে মৃত্যুর পর বিশেষ অবস্থার জীবিত থাকাকে অস্বিকার করে অর্থাৎ হায়াতুন নবীকে অস্বিকার করে থাকে।

উপরোক্ত তিন প্রকারের লামাযহাবীদের হুকুম ভিন্ন ভিন্ন।

১ম প্রকারের হুকুম

প্রথম প্রকার লামাযহাবীদের পিছনে নামায পড়া জায়েজ আছে। কয়েকটি শর্তে। যথা-

তাহলে মোট ৪টি শর্তে উক্ত ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া জায়েজ। যথা-

১-তাক্বলীদকে শিরক বলে না।

২-মুজতাহিদ ইমামদের সমালোচনা করে না।

৩-পবিত্রতা ও নামাযের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের শর্তের প্রতি লক্ষ্য রেখে নামায পড়ায়।

৪-দ্বীনদারীর সাথে হাদীসের উপর আমল করে। {ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১০/৩৫৩-৩৫৪}

فى رد المحتار-  إن علم أنه راعى في الفروض والواجبات والسنن فلا كراهة ، وإن علم تركها في الثلاثة لم يصح ، وإن لم يدر شيئا كره لأن بعض ما يجب تركه عندنا يسن فعله عنده فالظاهر أن يفعله ، وإن علم تركها في الأخيرين فقط ينبغي أن يكره لأنه إذا كره عند احتمال ترك الواجب فعند تحققه بالأولى ، وإن علم تركها في الثالث فقط ينبغي أن يقتدي به لأن الجماعة واجبة فتقدم على تركه كراهة التنزيه ا هـ (رد المحتار، كتباب الصلاة، باب الإمامة، مطلب فى الإقتداء بشافعى ونحوه-1/563

২য় প্রকারের হুকুম

দ্বিতীয় প্রকার লা-মাযহাবীদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। কারণ তারা ফাসিক। আর ফাসিকের পিছনে ইক্তিদা করা মাকরূহ।হাদীসে এসেছে-

عَبْدُ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ

 হযরত আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুসলমানদের গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্যা করা কুফরী। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৮}

এ গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান, মিয়া নজীর হুসাইন দেহলবী,নবাব ওহীদুজ্জামান খান,মাওলনা আবু তাহের বর্ধমানী, মাওলানা আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী, তাম্বীহুল গাফেলীনের লেখক আব্দুল কাদির, আদদেওবন্দীয়ার লেখক সাইফুর রহমান, আমি কেন মুসলিম হইলাম এর লেখক সুজাউল হক, আবু হানীফা বনাম আবু হানীফা নামক জঘন্য বইয়ের লেখক-মাওলানা আব্দুর রউফ,আমীর আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলামরা শামিল।

এই সকল ব্যক্তিরা সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী গ্রহণযোগ্য উলামা ও ফুকাহায়ে কেরাম সম্পর্কে জঘন্য উক্তি করায় ফাসিকদের কাতারে শামিল হয়েছে। তাই এমন টাইপের লা-মাযহাবীদের পিছনে কোন মুসলমানদের জন্যই নামায পড়া উচিত নয়। পড়লে নামায মাকরূহ হবে।

৩য় প্রকারের হুকুম

আল্লাহ তাআলা স্থান ও কাল থেকে পবিত্র। সকল কিছুই তার সৃষ্টি। তিনি কোন সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষি নন। তিনি আদি ও অনন্ত। যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ [١١٢:١] اللَّهُ الصَّمَدُ [١١٢:٢]

বলুন, তিনি আল্লাহ,এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, {সূরা ইখলাস-১-২}

আরো ইরশাদ হচ্ছে

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ [٢:٢٥٥]

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। {সূরা বাকারা-২৫৫}

তাই আল্লাহ তাআলাকে কোন স্থানের সাথে খাস করে ফেলা কুফরী। যারা একাজটি করেন, যেমন একথা বলা যে, আল্লাহ তাআলা শুধুই আরশেই বসে আছেন, তিনি সেখানেই থাকেন, এসব বক্তব্য প্রদানকারী লা-মাযহাবীরা সুষ্পষ্ট কুফরী কথা বলে থাকে। কুফরী বিশ্বাসী তাই তাদের পিছনে নামায পড়লে নামায হবে না। কোন মুসলমানেরই নামায হবে না।

সেই সাথে যারা রাসূল সাঃ ইন্তেকালের পর কবরে জীবিত থাকাকে অস্বিকার করে থাকে। অথচ সহীহ হাদীস দ্বারা পরিস্কার ভাষায় মৃত্যুর পর কবর জগতে নবীগণ জীবিত হবার কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাসূল সাঃ ইরশাদ করে গেছেন। যেমন-

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ»

[حكم حسين سليم أسد] : إسناده صحيح

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নবীগণ কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায আদায় করেন। {মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫}

মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমত্বে এ হাদীসটি সহীহ।

তারপরও মুহাদ্দিসীনে কেরামের কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করে দিচ্ছি আরো অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত উক্ত হাদীসটির বিষয়ে।

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন আবী ইয়ালার বর্ণীত হাদীসের সনদটির রাবীগণ সিকা। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-৮/২১৪}

আল্লামা সূয়ুতী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান। {আলজামেউস সাগীর, বর্ণনা নং-৩০৮৯}

শায়েখ আলবানী রহঃ বলেন, হাদীসটি সহীহ। {সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-২৭৯০}

তিনি আরো বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। {আততাওয়াসসুল, বর্ণনা নং-৫৯}

এছাড়া তিনি আরো যেসব কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-

সিলসিলাতুস সহীহাহ, বর্ণনা নং-৬২১

আহকামুল জানায়েজ, বর্ণনা নং-২৭২

আল্লামা শাওকানী রহঃ বলেন, এ হাদীস সাবিত তথা প্রমাণিত। {নাইলুল আওতার-৩/৩০৫}

উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গেল যে, নবীগণ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করছেন মর্মে হাদীসটি সন্দেহাতীতভাবে সহীহ।

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত আরো একটি পরিস্কার হাদীসও এর প্রমাণবাহী।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” أَتَيْتُ – وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ: مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ “

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি মেরাজের রাতে কাসীবে আহমার স্থান অতিক্রমকালে দেখতে পাই হযরত মুসা আঃ তার কবরে নামায পড়ছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৭৫}

এরকম পরিস্কার হাদীসকে অস্বিকার করে যারা একথা বলে যে, নবীগণকে মৃত্যুর পর কবরে জীবিত থাকার বিশ্বাসকারী মহাশয়তান, বা কবরে জীবিত নবীকে তালাক দিলাম এমন শব্দ বলে থাকে এসব লামাযহাবীদের পিছনে কোন মুসলমানের জন্য নামায পড়া জায়েজ নয়। {আপকি মাসায়িল আওর উনকা হল-১/২৯৯}

যেমন মুরাদ বিন আমজাদ, শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালামসহ যারাই উপরোক্ত আকিদায় বিশ্বাসী এমন লামাযহাবীদের পিছনে নামায পড়া জায়েজ হবে না।  কোন মুসলমানের জন্যই তাদের পিছনে নামায পড়া শুদ্ধ হবে না। আগে তাদের কুফরী আকিদা থেকে তওবা করতে হবে। নতুন করে ঈমান আনতে হবে তারপর তাদের পিছনে নামায আদায় করার বিষয়ে ভাবতে হবে।

হায়াতুন্নবী সাঃ বিষয়ে মুরাদ বিন আমজাদের কুফরী বক্তব্য দেখতে ক্লিক করুন

হায়াতুন্নবী সাঃ বিষয়ে আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালামের কুফরী বক্তব্য দেখতে ক্লিক করুন

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *