প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / পহেলা বৈশাখ উদযাপনঃ আত্মমর্যাদাহীন পরগাছা জাতির পরিচায়ক

পহেলা বৈশাখ উদযাপনঃ আত্মমর্যাদাহীন পরগাছা জাতির পরিচায়ক

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

হুজুগে জাতি বলে আমাদের বদনাম আছে। চিলে কান নিয়ে গেল শুনে চিলের পিছনে ছুটে চলা আমাদের পুরোনো বদভ্যাস। নিজেদের স্বকীয়তা-আত্মমর্যাদাবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে অপরের সংস্কৃতির কাছে মাথা নত করে দেয়াই আমাদের স্বাভাবিক কালচার হয়ে গেছে।

বলা হয় এখন শিক্ষিতদের যুগ। সভ্যতা ও শিক্ষার উৎকর্ষতার যুগ।

কিন্তু প্রশ্ন হল এত শিক্ষা এত সভ্যতার সত্যিকার প্রায়োগিক অবস্থানতো আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে না। বরং অসভ্যতা ও জংলীপনাই আমাদের কর্মকান্ডে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অন্যের শিখানো কিছু মুখস্ত বুলি আউড়ে নিজেকে বিশাল আধুনিক আর ষ্টাইলিশ হিসেবে উপস্থাপন করছি।

একবারও ভেবে দেখছি না ছুটছি কিসের পিছনে? কেন ছুটছি? কী করছি? কেন করছি? করা করাচ্ছে? কিভাবে করছি?

এসব ভাবার মত সভ্যতা। এসব ভাবার মত শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি?

আসছে পহেলা বৈশাখ। নানা রঙ্গে সাজবে এদেশের পরগাছা জাতি। বেলুন, মুখোশ, হনুমানেন প্রতিচ্ছবি নিয়ে মাতাল হবে কতিপয় অর্বাচিন। আবহমান বাংলার কালচার বলে হাসবে আত্মতৃ্প্তির হাসি।

কিন্তু কিভাবে এল পহেলা বৈশাখ? তাকি জানি আমরা? চলুন একটু জেনে নেই-

ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি তোলার মৌসুমে এ নিয়ে ঝামেলা হতো। এতে অসময়ে কৃষকেরা খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য হতেন। খাজনা আদায় আরও সহজ করতে মুঘল সম্রাট আকবর প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন।
সম্রাটের আদেশে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌরবর্ষ ও আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের পঞ্জিকা তৈরি করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ (মতান্তরে ১১ মার্চ) থেকে বাংলা সন গোনা শুরু হয়। তবে আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬ খ্রি.) থেকে এই সনের কার্যকারিতা ধরা হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলাবর্ষ নামে পরিচিত হয়।
আকবরের সময়কাল থেকে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতে শুরু করেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, যার রূপ পরিবর্তিত হয়ে এখন এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বইকে বোঝানো হতো। আসলে হালখাতা হলো বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরোনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানিরা তাঁদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো বেশ প্রচলিত। {সূত্র প্রথম আলো, ১৩ ই এপ্রিল ২০১৫ ইং}

উপরোক্ত তথ্যের আলোকে একথা দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, এটি কেবলি জনগণের উপর আরোপিত কর ও শুল্ক পরিশোধের জন্য প্রবর্তিত একটি তারিখ মাত্র। সেই সাথে এতে করে জনগণের উপর শাসকের শোষনের পর খানিক আনন্দের মুহুর্ত। যা পরিস্কারভাবে আকবর আমলের একটি কর্মকান্ড কেবল।

কিন্তু এটি বাঙ্গালি জাতির উৎসব হল কিভাবে? এ আহমকী আমাদের কে শিখালো্?

আর যা করা হয় এ উৎসবে। যা কিছুকে বলা হয় এটি আপমর সমস্ত বাঙ্গালীর উৎসব। তাও কি একভার ভেবে দেখার সময় হয়েছে আমাদের?

লক্ষ্মীপেঁচা, গাজী ও বাঘের মুখোশ ধারণ!

লক্ষ্মীপেঁচাকে দেখে সামনের দিনগুলোতে সুখের স্বপ্ন দেখতো মুর্খ কৃষক, সেই কুসংস্কারের প্রতিক হল পেঁচা।

এক কালের কুসংস্কারচ্ছন জাতি ভাবনা অনুপাতে দুঃসময়ের কাণ্ডারির প্রতীক ছিল ‘গাজী ও বাঘ’।

সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে লক্ষ্মীপেঁচার পাশাপাশি শিশু হরিণ, মা ও শিশু, হাঁস ও মাছের ঝাঁক।

সভ্যতার দাবিদারদের একি অজ্ঞতাসূচক মানসিকতা? একি কুসংস্কারচ্ছন্ন আমল? একবার চিন্তা করবেন কি?

মঙ্গল শোভাযাত্রাঃ বাঙ্গালীর সংস্কৃতি না হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতি?

রাম ও শ্রীকৃষ্ণের জীবন নিয়ে রামযাত্রা ও কেষ্ট যাত্রা এক সময় ছিল এ দেশের হিন্দুদের বিনোদন। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকাহিনি নিয়ে মা যশোদা ও গোপালের নিবিড় সম্পর্কনির্ভর এবং বৃন্দাবন লীলা নিয়ে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমনির্ভর প্রচুর যাত্রা এ দেশের মানুষকে জুগিয়েছে ভক্তিরস। রাম-সীতার পালাগান ও যাত্রা এক সময় ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান বিনোদন।

হুম! এই তাহলে আবহমান বাংলার উৎসব? এই তাহলে আমাদের সংস্কৃতি? একটি সংখ্যালগিষ্ট ধর্মের নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি বানিয়ে নেয়া কেবলি আত্মমর্যাদাহীন মুর্খকেই মানায়।

ধুতি পরিধান

এটি যে হিন্দুদের ধর্মীয় পোশাক তা আশা করি কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। কোন আত্মমর্যাবান মুসলিম উৎসবের নামে এভাবে ধুতি পরে আনন্দ করতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। কেবলি আত্মমর্যাদাহীন পরগাছা ব্যক্তিত্বহীনরাই এমন ঘৃণ্য কর্মে লিপ্ত হতে পারে।

শূন্যে ঘুরে চড়ক শিব, মনোবাসনা জানায় মানুষ!

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ‘চড়ক শিব পূজা’ অনুষ্ঠিত হয় এ বৈশাকে। হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাংলা বছরের শেষদিন হিসেবে সোমবার এ পূজার আয়োজন করা হয়।

 এ লজ্জা রাখি কোথায়? শিবের পূজায়ও রত হয় এদেশের অতি আধুনিক মুসলিমরা? অথচ কোনদিন কোন সনাতন ধর্মালম্বীকে আমাদের ঈদের জামাতে শরীক হতে দেখেছেন কেউ? দেখেছেন তারাবীহ জামাতে একত্র হতে? তাহলে নিজেকে এতটা ব্যক্তিত্বহীনভাবে কিভাবে উপস্থাপন করে এসব নামধারী মুসলিমরা?

পহেলা বৈশাখের পান্তা ইলিশ ও উল্কি আঁকা কাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি?
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পান্তা করে আর সেটা পহেলা বৈশাখের দিন খায়।
আর উল্কি আঁকার যে কালচার চালু হয়েছে তা হল বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কৃতি।

এদেশের অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলিমদের সংস্কৃতি কোথায়? হিন্দু আর বৌদ্ধধর্মের ধর্মীয় সংস্কৃতি মিলিয়ে এক জগাখিচুরী কি করে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের সংস্কৃতি হয় তা একবারও ভাবার মত বিবেক বুদ্ধি কি আমাদের হবে না?

শেষকথা

আমাদের পাঠ্যসূচিতে একটি কিতাব ছিল “দুরুসুল বালাগাত” নামে। কিতাবটিতে একটি উপমা ছিল এই রকম- “গাধা লবনে পড়ে লবন হয়ে যায়”। তার নিজস্বতা বলতে আর কিছু বাকি থাকে না।

আমাদের যুবকদের দেখলে এ উপমা খুব বেশি মনে পড়ে। স্বকীয়তা আর আত্মমর্যাদা ভুলণ্ঠিত করে আমরা এখন গাধায় রুপান্তরিত হয়েছি। পাশ্চাত্যের নোংরা সংস্কৃতির ভাগারে নিমজ্জিত হয়ে হয়ে গেছি তাদেরই মত। না পোশাকে আমি মুসলিম। না আখলাকে মুসলিম। না চেহারায় মুসলিম। না পারিবারিক জীবনে মুসলিম। না রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলিম। আমাদের জীবনের কোথাও ইসলাম ও মুসলমানিত্বের ছাপ পর্যন্ত নেই। একি হালাত আমাদের? আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ, আমাদের স্বকীয়তাবোধ, স্বতান্ত্রতাবোধ এতটা মিইয়ে গেল কিভাবে?

আমি তোমাকেই বলছি!

যে যুবক! হে মুসলিম যুবক! হে মুসলিম নামধারী ব্যক্তি! তোমার শিরায় উপশিরায় মুসলমানের রক্ত বহমান! যে হিন্দুদের হিংস্র থাবায় রক্ত ঝরেছে তোমার পূর্বসূরীর। যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রাক্ষুসে থাবায় এখনো কাতরে মরছে তোমার আরকানী মা-বোন। যাদের হাত এখনো তোমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গা। যাদের চিন্তনে-মননে তোমাদের প্রতি ঘৃণা ও ধ্বংসের ভয়ানক অভিলাস! তুমি তোমার নিজস্বতা বিকিয়ে দিয়ে তাদের উৎসবকে তোমার ঘরে কিভাবে প্রবেশ করালে? কি করে নিজেকে এতটা আত্মমর্যাদাহীন হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপিত করলে? তোমার কি হল? তুমি এতটা নিচে কি করে নামতে পারলে? একবার কি তোমার বিবেক জাগবে? একবারও কি ভাবনার দরজায় টুকা পড়বে?

আমি তোমাকে বলি। তোমাকেই বলছি!

তুমি দাবি কর তুমি মুসলিম। তুমি ঈদের জামাতে সবার আগে গমণ কর। তুমি কুরবানীর গরুটা সবচে’ বড় দেখে ক্রয় কর। তোমার নামটা মুসলিমের নাম। তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে জানাযা পড়ানো হবে। তোমাকে সসম্মানে দাফিত করা হবে। তোমাক পুড়ানো হবে না। কারণ তুমি মুসলিম। তোমাকে রাখার সময় বলা হবে- বিসমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ তথা রাসূল সাঃ এর মিল্লাতের আদর্শের উপর তোমাকে কবরস্ত করা হচ্ছে।

এই তুমি। এই তুমিই সারা বিশ্বকে বড় গর্ব করে বল-“তোমার নবীর চেহারা সবচে’ সুন্দর! তোমার নবীর চরিত্র বড় সুন্দর! তোমার আখলাক সবচে’ সুন্দর! তোমার নবীর পারিবারিক জীবন বড়ই উত্তম। তোমার নবীর পোশাকটা শ্রেষ্ঠ পোশাক। তোমার নবীর লেনদেন, সামাজিক জীবন, সাংসারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, যাপিত জীবনের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি  কর্ম, প্রতিটি মুহুর্ত সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ। যার নজীর পৃথিবীর ইতিহাস না কোনদিন দেখাতে পেরেছে না কোনদিন দেখাতে পারবে”।

কিন্তু তুমি সেই শ্রেষ্ঠ নবীকে তোমার চেহারা থেকে কিভাবে বহিস্কার করলে?

তোমার পোশাক থেকে কিভাবে বহিস্কার করলে?

তোমার চালচলন থেকে কিভাবে বহিস্কার করলে?

কিভাবে তোমার সংসার জীবন থেকে ছুড়ে দিলে বহুদুর?

কিভাবে তোমার লেনদেন, তোমার বাণিজ্য, তোমার সর্বত্র থেকে তোমার শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ বিসর্জিত হল? জবাব কি দিতে পারবে ভাই?

তোমার চেহারা দেখলে মনে হয়, তুমি বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছো- তোমার নবী নয়, হলিউডের নায়কের চেহারা তোমার কাছে আদর্শ। বলিউডের নায়কের পোশাক তোমার কাছে আদর্শ। ঢালিউডের নায়েকের হেয়ার স্টাইল তোমার কাছে অনুসরণীয়। তোমার সর্ব হালাতের আমল দ্বারা তুমি বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছো- হিন্দু বৌদ্ধ, ইহুদী খৃষ্টানদের প্রতিটি কর্ম তোমার কাছে আদর্শ। তাদের প্রতিটি উৎসব তোমার উৎসব। তাদের প্রতিটি কর্ম তোমার কাছে অনুসরণীয়!

এরকম আত্মমর্যাদাহীন, এমন স্বকীয়তাহীন, এমন নির্লজ্জ পরগাছা হয়ে আর কতদিন তুমি ধরাধামে বেঁচে থাকবে? আর কত? কবে তোমার হুশ হবে? কবে তুমি চিনবে তুমি কে? কবে তোমার বিবেক বলবে-তোমার নবীর মত শ্রেষ্ঠ কোন ব্যক্তি নেই। তাই তোমার পোশাকে তোমার নবীর নিদর্শন ফুটে উঠবে। তোমার চেহারায় তোমার নবীর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তোমার লেনদেন, পরিবার, সমাজ, উৎসব সর্বত্র পরিস্ফুটিত হবে তোমার নবীর প্রতি ভালবাসা, তোমার নবী শ্রেষ্ট আদর্শের অধিকারী হবার পরিচ্ছন্ন প্রমাণ?

এদিন কবে আসবে? কবে জাগবে তোমার বিবেক? আমাকে বলবে কি?

0Shares

আরও জানুন

ক্যারাম বোর্ড খেলার হুকুম কি

প্রশ্ন ক্যারম খেলা কি জায়েজ? প্রশ্নকর্তা: মো.হুমায়ুন কবির শাবিব উত্তর بسم الله الرحمن الرحيم ক্যারাম বোর্ড …