প্রশ্ন:
ইমরান ,ব্রাক্ষণবাড়িয়া
আসসালামু আলাইকুম
ভাই আমাদের এলাকার অনেকেই সূরা আজ জুমআর ১০ নং আয়াত দেখাইয়া দাওয়াতে তাবলীগের বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা নামায শেষে ব্যবসা বাণিজ্য করতে বের হয়ে যেতে বলেছেন। তাই নামায শেষে মসজিদে বসে তাবলীগী জামাতের দাওয়াত,তালীম ইত্যাদি জায়েজ নয়।
দয়া করে এই আয়াতের সঠিক ও বিশদ তাফসীর জানালে কৃতজ্ঞ থাকব ।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুর্খ ব্যক্তি ছাড়া এমন উক্তি কেউ করতে পারে না। আমরা আয়াতটি দেখি। আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন?
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٦٢:١٠
অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়, এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর, ও আল্লাহর অধিক স্মরণ কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা জুমআ-১০}
এবার ১০ নাম্বার আয়াতটি আগের আয়াতটি দেখি আগে আল্লাহ তাআলা কী নির্দেশ দিয়েছেন?
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর, এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। {সূরা জুমআ-৯)
৯ নাম্বার আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় আল্লাহ তাআলা ১০ নাম্বার আয়াতে কেন নামায শেষেই মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। ৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন যারা ক্রয় বিক্রয় করছে, তারা আজান শুনে ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করে মসজিতে এসে যেন নামায পড়ে। তারপর বলেছেন, নামায যখন শেষ এবার বেরিয়ে যাও ক্রয়-বিক্রয়সহ যেসব ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তোমরা মসজিদে নামায পড়তে এসেছিল। এখন আর ব্যাবসা বাণিজ্য করতে কোন সমস্যা নেই। এর মানে মসজিদে থাকা জায়েজ নেই? এমন বোকামীসূলভ কথা গন্ড মুর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না।
নামায শেষ হলেই মসজিদ থেকে বের হওয়ার নির্দেশ হলে, সাহাবাগণ দ্বীন শিখতেন কোথায় বসে? নামায শেষেই সাহাবাগণ বেরিয়ে যেতেন মসজিদ থেকে?
যদি আয়াতটির আক্ষরিক অর্থই পালনীয় হয়ে থাকে, তাহলে নামায শেষে মসজিদে বসে থাকা যেমন নিষেধ হয়, তেমনি মসজিদ থেকে বের হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়া এবং আল্লাহ তাআলার জিকির অধিক পরিমাণ করাও ফরজ হয়ে যায়। তাই নয়কি?
যারা এ আয়াতের আক্ষরিক অর্থ উদ্দেশ্য নিয়ে নামায শেষে মসজিদে বসে থাকা যাবে না বলে থাকেন, তাদের মতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে জিকির করা কী ফরজ? সকলের জন্য রিজিক তালাশে ঘুরে বেড়ানো ফরজ? যদি না হয় তাহলে আয়াতের একাংশ নিয়ে এ উদ্ভট ব্যাখ্যা কেন?
যদি মসজিদে বসে থাকা না জায়েজ হয়,তাহলে এসব হাদীসের মানে কি?
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
عن أسماء بنت يزيد أن أبا ذر كان يخدم رسول الله صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته آوى إلى المسجد فاضطجع فيه فكان هو بيته فدخل رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فوجد أبا ذر منجدلا في المسجد فنكته رسول الله صلى الله عليه و سلم برجله حتى استوى جالسا فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم : ” ألا أراك نائما ؟ ” قال : يا رسول الله وأين أنام ؟ وهل لي بيت غيره ؟
قال فى المجمع: رواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق
হযরত আবুযর রা. রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন, আবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেন? আবুযর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ? এ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং-২৭৫৮৮, মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস নং- ২০২৩, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৩৭৯)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
عن أبي ذر أنه كان يخدم النبي صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته أتى المسجد فاضطجع فيه
.رواه الطبراني في الأوسط وفيه شهر وفيه كلام وقد وثق
হযরত আবু জর রাঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেন, মসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাত লিততাবরানী, হাদীস নং-৭৯৫০, মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস নং- ২০২৪)
এসব হাদীসতো প্রমাণ করছে যে, মসজিদে শুধু অবস্থান করা উত্তমই নয়। বরং ঘুমানোও জায়েজ। সেখানে মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে হবে বলাটা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।